আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সবুজঘেরা প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য দক্ষিণ আফ্রিকার এলিফ্যান্টস ওয়েস্ট নেচার রিজার্ভ। চেনা-অচেনা অসংখ্য প্রাণীর আবাসস্থল। আফ্রিকার বিরল প্রজাতির প্রাণীগুলোর শেষ ঠিকানা। সারাক্ষণই চলে টিকে থাকার লড়াই। কখনো প্রকৃতির সঙ্গে, কখনো শিকারির খপ্পর থেকে। বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গন্ডার। আফ্রিকান গন্ডার নামেই বেশি পরিচিত। যাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। মানবজাতির নির্মমতার শিকার হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রজাতিটি। জীবিকার তাগিদে অসাধু শিকারিরা হাতিয়ার বানাচ্ছে এদের। সোনার চেয়েও মহামূল্যবান প্রাণীটির সাদা শিং নিয়ে চলছে কালোবাজারি। ‘সাদা সোনা’-খ্যাত দুটি শিঙের লোভে হত্যা করছে বিশাল দেহী গন্ডারগুলোকে। অমূল্য এই ‘সাদা সোনার’ অস্তিত্ব রক্ষায় ৪০ জন অস্ত্রহীন নারী সেনা নিয়োগ দিয়েছে দেশটির সরকার। বিবিসি, নেচার।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রাণ বাঁচাচ্ছেন নিরীহ প্রাণীগুলোর। রক্ষাকবচ হয়ে সঙ্গে থাকা নারী সংগঠনটির নাম ‘ব্ল্যাক মাম্বা’। ১০ বছর ধরেই প্রাণীগুলোকে শিকারির থাবা থেকে বাঁচিয়ে চলেছেন। বন্যপ্রাণী রক্ষায় তাদের অসামান্য অবদানের জন্য ২০১৫ সালে ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। দেশটির অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ গ্রেটার ক্রুগার ন্যাশনাল পার্কের এলিফ্যান্টস ওয়েস্ট নেচার রিজার্ভ। সেখানেই প্রাণীগুলোর জীবনরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। বিবিসি।
ব্ল্যাক মাম্বা বিশ্বের অন্যতম বিষধর সাপের মধ্যে একটি। এই সাপের নামেই নামকরণ করা হয় ‘ব্ল্যাক মাম্বা’ সংগঠনটির। নামে বিষধর হলেও সদালাপী বনরানিরা খুবই মিষ্টভাষী। পশুত্বের অন্ধকার থেকে শিকারিদের মনুষ্যত্বের আলোয় ফেরাতে এটাই তাদের সবচেয়ে বড় কৌশল। ২০১৩ সালে নেচার রিজার্ভের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ‘ক্রেগার আর স্পেন্সার’ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মাত্র ৬ জন সদস্য নিয়ে দলটি যাত্রা শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে সদস্যসংখ্যা। প্রত্যেক সদস্য মাসে ২১ দিন ২২ হাজার হেক্টরের রিজার্ভ সেন্টারটি টহল দিয়ে থাকেন। মাসের বাকি দিনগুলো তারা পরিবারের সঙ্গে কাটান। ১০ বছরে ব্ল্যাক মাম্বারা তাদের এলাকায় শিকারের ঘটনা ৬৩ শতাংশ কমিয়েছে। কাজের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেককেই সামরিক বাহিনীর পোশাক পরিধান করতে হয়। পায়ে থাকে বুট। তবে সদস্যদের হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র থাকে না। বিশেষ এ সংগঠনটির সদস্য হওয়ার জন্য বেশকিছু প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সমরকৌশল, রেঞ্জার ট্র্যাকিং, যুদ্ধ প্রশিক্ষণও তাদের আয়ত্ত করানো হয়। কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রতিদিন টহলে বের হন তারা। নিরস্ত্র হলেও তাদের সঙ্গে পেপার স্প্রে, হাতকড়া, রিয়েল টাইম ট্র্যাকার এবং রেডিওর ব্যবস্থা থাকে। মাঝেমধ্যেই চোরা শিকারিদের সঙ্গে দেখা হয় নারীদের। নিরস্ত্র নারীদের ওপর আক্রমণ করতে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন পশু শিকারিরা। এমনকি শিকারিদের চোখে চোখ মেলালেই সেখান থেকে পালিয়ে যান তারা।
একজন ব্ল্যাক মাম্বা নারী কিউটি ম্লোঙ্গো বলেন, ‘আমাদের সুবিধা হলো তারা আমাদের গুলি করবে না। কারণ, তারা জানে যে আমরা বন্দুক বহন করি না। আমরা খুব কমই পশু বা চোরা শিকারিদের কাছ থেকে গুরতর আহত হই।’ বর্তমানে অনেকেই সংগঠনটিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন। কেননা সেখানকার স্থানীয় সম্প্রদায়ের অনেক নারীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই কম। ব্ল্যাক মাম্বায় যোগ দেওয়ায় অসংখ্য নারীর সামাজিক অবস্থান দৃঢ় হয়েছে। অনেকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছেন অনেকে। এমনকি বন্যপ্রাণী, মানুষ এবং প্রকৃতির সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটাতে অন্যদের উৎসাহিত করছেন তারা। তবে তাদের কাজটি মোটেও সহজ নয়। পরিবেশ বেশ বিপজ্জনক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।