বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : সম্প্রতি গোলাপের কাঁটার উৎসের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে ৪০ কোটি বছর পুরানো রহস্যের সমাধান মিলেছে বলে দাবি তাদের।
গোলাপ ফুল প্রেম ও রোমান্সের প্রতীক হওয়ার পাশাপাশি তীক্ষ্ণ কাঁটার জন্যেও পরিচিত, যা ফুলের কুঁড়ি চিবিয়ে খাওয়া বিভিন্ন প্রাণী তাড়াতে গাছের ডালপালা থেকে বেরিয়ে আসে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন।
শুধু গোলাপেই এ ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, বিষয়টি এমন নয়। মাকড়সা ফুল বা ব্র্যাম্বলস, রাস্পবেরি ও ব্ল্যাকবেরি’র মতো ফুলের গুল্মে এমনকি টমেটো, বেগুন, বার্লি ও ধানের মতো নির্দিষ্ট কিছু ফসলেও এ ধরনের তীক্ষ্ণ কাঁটা থাকে।
তবে, এইসব উদ্ভিদ প্রজাতি, যার মধ্যে অনেকগুলোই কোটি বছরের বেশি সময় ধরে পৃথকভাবে বিবর্তিত হয়েছে, সেগুলোতে একই ধরনের কাঁটাওয়ালা বৈশিষ্ট্য কীভাবে এল? সেটাই বড় প্রশ্ন।
সম্প্রতি একদল আন্তর্জাতিক গবেষক খুঁজে পেয়েছেন, এর উত্তর লুকিয়ে আছে গাছগুলোর ডিএনএ’তে। এতে তারা প্রাচীন জিন পরিবারের এমন একটি উৎসের খোঁজ পেয়েছেন, যা এইসব উদ্ভিদের এমন বৈচিত্র্যের জন্য দায়ী। বৃহস্পতিবার এ গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল শুধু এইসব গাছের কাঁটাবিহীন ভ্যারিয়েন্ট তৈরির পথই খুলে দেয়নি, বরং এদের বৈচিত্র্যময় প্রজাতির বিবর্তনীয় ইতিহাসের ধারণাও দিয়েছে।
কাঁটার বিবর্তন
পপ সংস্কৃতির বিভিন্ন যোগসূত্রের বিপরীতে, গোলাপে নির্দিষ্ট কিছু মধু পঙ্গপাল ও সাইট্রাস গাছের তীক্ষ্ণ কাঠের বিন্দুর মতো কাঁটা থাকে না। বরং এর ফুলে যে কাঁটা থাকে, তা গাছের ত্বক থেকে তৈরি হয়, অনেকটা মানুষের চুল বেড়ে ওঠার মতো করে।
গাছে কাঁটা থাকার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে অন্তত ৪০ কোটি বছর আগে, যখন ফার্ন জাতীয় গাছ ও এদের আত্মীয়রা নিজেদের কাণ্ডে কাঁটা’সহ আবির্ভূত হয়েছিল। এর পর থেকে বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে এ প্রবণতা বেড়ে যেতে এমনকি অদৃশ্য হয়ে যেতেও দেখা গেছে বলে দাবি করেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক এবং নিউ ইয়র্কের ‘কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি’র জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক জ্যাকারি লিপম্যান।
উদ্ভিদজগতের অন্যতম প্রজাতিটি ‘সোলানাম’ নামে পরিচিত, যার মধ্যে আছে আলু, টমেটো ও বেগুনের মতো ফসল। এগুলোতে প্রথম কাঁটার দেখা মিলেছিল ৬০ লাখ বছর আগে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’র তথ্য অনুসারে, বর্তমানে গোটা বিশ্বে এদের এক হাজারের বেশি প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে প্রায় চারশটি নিজেদের কাঁটাওয়ালা বৈশিষ্ট্যের কারণে ‘স্পাইনি সোলানাম’ নামে পরিচিত।
তবে এখন এ গবেষণার লেখকরা বলেছেন, ‘লোনলি গাই বা এলওজি’ নামের এক প্রাচীন জিন পরিবার লাখ লাখ বছর ধরে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য থাকার দ্বাররক্ষক হিসাবে কাজ করেছে।
‘লোনলি গাই’-এর জিনের পরিবর্তন
গোলাপ ও বেগুন’সহ বিভিন্ন প্রজাতি গাছ থেকে কাঁটা সরিয়ে লেখকরা দেখতে পান, তাদের গবেষণা করা প্রায় ২০ ধরনের গাছের কাঁটা তৈরির ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে ‘এলওজি’।
লিপম্যান বলেন, সব ধরনের উদ্ভিদেই এলওজি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জিনের অস্তিত্ব রয়েছে। এমনকি শ্যাওলার ক্ষেত্রেও এ বিষয়টি প্রযোজ্য, যা বিশ্বের প্রথম শুষ্ক স্থলভিত্তিক উদ্ভিদ হিসাবে বিবেচিত। এইসব জিন থেকে এক ধরনের হরমোন সক্রিয় হয়ে থাকে, যা ‘সাইটোকাইনিন’ নামে পরিচিত। কোনো গাছের ‘রন্ধ্র পর্যায়ের’ বিভিন্ন প্রাথমিক কার্যকলাপ সক্রিয় করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কোষ বিভাজন ও এর বিস্তৃতির মতো বিষয়াদি, যা গাছের বৃদ্ধির বেলাতেও বড় প্রভাব ফেলে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।