জুমবাংলা ডেস্ক : নাম তার ‘বাহাদুর’। ওজন এক হাজার ৬০০ কেজি অর্থাৎ ৪০ মণ। লম্বায় নয় ফুট, চওড়া ছয় ফুট, আর উচ্চতা পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি। আমেরিকান ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুটি কোরবানির জন্য লালন-পালন করছেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার শিবুগ্রামের খামারি নজরুল ইসলাম। ‘বাহাদুর’ উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় গরু বলে দাবি করেছেন নজরুল। আর সেজন্য গরুটির দাম হেঁকেছেন ২৫ লাখ টাকা।
খামারি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘৪০ মণ ওজনের আমেরিকান ফ্রিজিয়াম জাতের এই গরুটিকে প্রতিদিন অন্যান্য গো খাদ্যের সঙ্গে আড়াই মণ সবুজ ঘাস খাওয়াতে হয়। অনেক পরিশ্রম দিয়ে তাকে ছোট থেকে বড় করেছি। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরু এটি। এই গরুটি আমার জন্য সৃষ্টিকর্তার রহমত।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই গরুটির দর দাম করছেন, কিন্তু কেউ কাঙ্ক্ষিত দাম কেউ বলছেন না। গো-খাদ্যের দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। এই গরুর পেছনে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি। সে অনুযায়ী দাম পাব কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’
চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পশু পালন করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খরচ উঠবে কি না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমি চিন্তা করেছি ২৫ লাখ টাকার নিচে বিক্রি করব না।’ নজরুল ইসলামের মতো অন্যান্য খামারিরাও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন। তারা বলছেন, যে গরুর দাম দুই লাখ টাকা পাইকাররা তার দাম এক লাখও বলছেন না।
খামারি বাতেন মিয়া বলেন, ‘আমার খামারে দেশি জাতের ৩৫টি গরু রয়েছে। গড়ে দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা দাম হওয়ার কথা। কিন্তু গো-খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কেমন দাম পাব তা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। গরুর দাম যেভাবে আশা করা হয়েছিল তা পাওয়ার সম্ভাবনা কম।’
একই কথা জানালেন বৈরীগঞ্জ এলাকার খামারি মমতাজুর রহমান। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘গরু মোটাতাজা করতে নানান খাদ্যের প্রয়োজন। একটা গরুর পেছনে কমপক্ষে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে ব্যয় হয়। এবার গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি। তাই পশুপালনে খরচও অনেক বেশি হয়েছে। সে অনুযায়ী দাম পাওয়ার আশা কম।’
অন্যদিকে, রংপুর নগরীর মাহিগঞ্জ এলাকায় প্রায় এক হাজার গরুর খামার রয়েছে। খামারিরা জানান, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকাররা আসছেন কোরবানির পশু নিতে। তবে তারা যে গরুর দাম দুই লাখ টাকা, তার দাম এক লাখও বলছেন না।
ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলছেন, করোনায় গত দুই বছর বন্ধ থাকলেও এ বছর শুরুতেই ভারতীয় গরু আসছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়লেও স্থানীয়ভাবে কোরবানির জন্য প্রচুর গরু প্রস্তুত রয়েছে। তাই দেশীয় খামারিদের রক্ষা করতে এখনই সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তাদের।
ভারত থেকে গরু আসার কারণে খামারিরা উপযুক্ত দাম পাবেন না বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর জেলা শাখার সভাপতি লতিফুর রহমান মিলন। এদিকে, খামারিদের বাঁচাতে এখনই সীমান্ত বন্ধ করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের রংপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম আসিফুল ইসলাম।
ভারত থেকে দেশে গরু আসার বিষয়টি অস্বীকার করে রংপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, ‘গো-খাদ্যের কারণে পশুর দামও বেড়েছে।’ এজন্য খামারিদের কাছে কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি বছর কোরবানির জন্য রংপুর জেলার ২৫ হাজার ৭১ জন খামারির কাছে রেকর্ড তিন লাখ ৫৩ হাজার ৬১০টি পশু রয়েছে। জেলার জন্য চাহিদা রয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ৩৭০ পশু। এতে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় এক লাখ ৩২ হাজার ৩১৫টি। এ অবস্থায় খামারিরা বলছেন, দেশের বাইরে থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন হবে না। বরং রংপুরের চাহিদা মিটিয়ে এক লাখ ৩২ হাজার পশু দেশের অন্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।