আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে ভারী গোলাবর্ষণের পর এবার ভারতের বিরুদ্ধে একযোগে ড্রোন হামলার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের দাবি, পাকিস্তান গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত প্রায় ৪০০টি ড্রোন ব্যবহার করে সীমান্তজুড়ে অন্তত ৩৬টি স্থানে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। এসব ড্রোন মূলত তুরস্কের তৈরি অস্ত্রসজ্জিত ‘সংগর’ মডেলের ড্রোন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। ’
ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, সীমান্তের সিয়াচেন থেকে স্যার ক্রিক পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় এই হামলার চেষ্টা হয়, যা ভারতীয় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অধিকাংশই প্রতিহত করা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পৃথকভাবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। পরে ভারত পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানের চারটি বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনায় ড্রোন হামলা চালায়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং জানিয়েছেন, এই অভিযানে পাকিস্তানের একটি রাডার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে। তিনি আরও জানান, পাকিস্তান ভারতের পশ্চিম সীমান্তজুড়ে একাধিকবার আকাশসীমা লঙ্ঘন করে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।
কাশ্মীরের লাইন অব কন্ট্রোলে পাকিস্তানি বাহিনীর তীব্র গোলাবর্ষণের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের তাংধার, উরি, পুঞ্চ, মেন্ধার, রাজৌরি, অখনূর ও উধমপুর এলাকায় এই গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটে। উরির রাজারওয়ানি গ্রাম থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় একটি গাড়িতে গোলা আঘাত করলে নর্গিস বশির নামের এক নারী নিহত হন এবং তার পরিবারের তিন সদস্য আহত হন। আরও একটি গোলা থাজাল গ্রামে পড়লে একজন সাধারণ নাগরিক আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এমন তীব্র গোলাবর্ষণ গত কয়েক দশকে তারা দেখেননি।
ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা হামলায় পাকিস্তান বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে বলেও জানিয়েছেন কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারী ক্যালিবারের কামান দিয়ে গোলাবর্ষণের পাশাপাশি অস্ত্রসজ্জিত ড্রোনও ব্যবহার করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পাকিস্তান বেসামরিক বিমান চলাচলের আকাশসীমা বন্ধ না করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত বিপজ্জনক।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী পাকিস্তানের ‘অস্বীকারমূলক দ্বিচারিতা’ এবং ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা নিয়ে মিথ্যাচারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি জানান, উরিতে পাকিস্তানের ছোড়া গোলা খ্রিস্টানদের একটি স্কুলের কাছেই পড়েছে, যেখানে দুই শিক্ষার্থী নিহত ও তাদের বাবা-মা গুরুতর আহত হন। একটি কনভেন্টেও গোলা আঘাত হানে এবং সোলার প্যানেলসহ নানা অবকাঠামো ধ্বংস হয়। তিনি বলেন, পাকিস্তান উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মীয় উপাসনালয় যেমন গুরুদ্বারা, কনভেন্ট ও মন্দিরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারতের সরকার কার্তারপুর করিডর সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাকিস্তানের তরফে দাবি করা হয়েছিল, ভারত নানকানা সাহিব গুরুদ্বারায় হামলা চালিয়েছে, কিন্তু ভারত তা ‘ভিত্তিহীন ও উদ্ভট’ দাবি বলে উড়িয়ে দিয়েছে। বরং ভারতের অভিযোগ, পাকিস্তানই পুঞ্চের এক গুরুদ্বারায় হামলা চালিয়ে সেখানকার রাগিসহ কয়েকজন শিখ নাগরিককে হত্যা করেছে।
নিষিদ্ধ ভালোবাসার গল্প যা শেষ হয় না, একা দেখুন এই ওয়েব সিরিজ
সীমান্তে এই উত্তেজনার কারণে অন্তত ৬০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, আবার কেউ সরকার নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে। বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকার বিভিন্ন এলাকায় ব্ল্যাকআউট কার্যকর করা হয়। পরদিন সকালে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে জম্মু ও কাশ্মীরজুড়ে শুক্রবার ও শনিবার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সূত্র; ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.