জুমবাংলা ডেস্ক : খাবার, দৈহিক গঠন, ওজন ও শান্ত স্বভাবের জন্য নাম তার ‘চাঁপাই সম্রাট’। ওজন ১৭০০ কেজি (৪২ মণ)। দাম ৩০ লাখ টাকা। খাদ্য তালিকায় খৈল, ঘাস, ভূসির পাশাপাশি পাকা আম ও কলা রয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘি চাঁদপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী তার মালিক।

জানা গেছে, ছোট থেকেই গরু পালনের শখ ছিল জুলফিকার আলীর। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ বছর আগে বাড়িতে তার ফ্রিজিয়ান জাতের গাভী থেকে একটি বাছুর জন্ম নেয়। অন্যান্য বাছুরের থেকে আকার-আকৃতিতে বড় ও শান্ত স্বভাবের হওয়ায় তাকে ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা করেন তিনি। লালন-পালন করছেন ৫ বছর ধরে।
বিশালদেহী চাঁপাই সম্রাটকে দেখতে ভিড় করছেন গ্রাম ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক মানুষ। প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, এখন পর্যন্ত চাঁপাই সম্রাটই জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু।
জানা গেছে, গত বছর গাবতলী পশুর হাটে ষাড়টি নিয়ে গেলেও বিক্রি হয়নি। এ বছর তাকে বিক্রির জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। জুলফিকার আলী ১৭০০ কেজির চাঁপাই সম্রাটের দাম হাঁকিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। বাড়িতেই দামে মিলে গেলে বিক্রি করতে চান তিনি।
গরুর মালিক সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চাঁপাই সম্রাট নামের সঙ্গে মিশে আছে গরুটির আচার-ব্যবহার ও তার নানা বৈশিষ্ট্য। হাঁটা-চলা, নম্র-ভদ্র ও লাজুক প্রকৃতির হওয়ায় তার এই নাম রাখা হয়েছে। ৫ বছর ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে খাবার ও ঘাষ খাওয়ানোর মাধ্যমে পরম মমতায় বড় করেছি তাকে। তার পেছনে প্রতিদিন ব্যয় করা হয় ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা।
তিনি আরও বলেন, অত্যন্ত কষ্ট করে স্নেহ-মমতা দিয়ে গরুটি এত বড় করেছি। কিন্তু আমি যদি ন্যায্য মূল্য না পাই, তাহলে আমার মতো খামারিরা এমন গরু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই সরকারি সহায়তা কামনা করছি।
কানসাট থেকে ভ্যানচালক আব্দুল হালিম ও ভোলামারি থেকে তোজাম্মেল হক বিশালদেহী গরুটি এক নজর দেখতে এসেছিলেন। তারা জানান, এত বড় গরু জীবনেও দেখিনি। মানুষের মুখে চাঁপাই সম্রাটের কথা শুনে দেখতে এসেছি। চোখ জুড়িয়ে গেছে আমাদের। গরুর হাঁটা-চলা, খাওয়া সত্যিই অন্য গরুর থেকে আলাদা।
পাশের গ্রাম থেকে গরুটি দেখতে এসেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, ৭০ বছরের জীবনে এত বড় গরু আর দেখেনি। সবার মতো আমিও গরুটি দেখতে এসেছিলাম। খুবই ভালো লাগল। খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পারলাম, শখের বসে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে চাঁপাই সম্রাটকে লালন-পালন করেছেন সাবেক ইউপি সদস্য জুলফিকার আলী। কিন্তু সে তার গরুর ন্যায্য মূল্য পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।
গরুর মালিক জুলফিকার আলীর পাশের বাড়ি স্কুলশিক্ষক গোলাম মোস্তফার। তিনি জানান, প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এক নজর গরুটি দেখতে আসছে। পরিস্থিতি এমন যে, চিড়িয়াখানার মতো করে লাইন ধরে গরু দেখছে দর্শনার্থী।
জুলফিকার আলীর ছেলে জোবায়ের মাহমুদ বলেন, আমি স্কুলে পড়াশোনা করি। এর বাইরে সময় পেলেই গরুর দেখাশোনা ও পরিচর্যা করি। আমরা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে খৈল, ঘাস, ভূসি খাওয়ানোর মাধ্যমে তাকে পালন করি। এছাড়া ফল হিসেবে পাকা আম ও কলা খেতে দেই। সকাল-বিকেল দুই বার গোসল করানো হয়। রাতে যেন মশা না লাগে, সেজন্য মশারি টাঙিয়ে রাখি। এমনকি দিন-রাত সব সময় ফ্যান চলে।
জুলফিকার আলীর স্ত্রী মোসা. রহিমা বেগম বলেন, পাঁচ বছর ধরে নিজের সন্তানের মতো করে লালনপালন করেছি চাঁপাই সম্রাটকে। খুব কষ্ট হচ্ছে তাকে বিক্রি করতে হবে বলে। ওর প্রতি অদ্ভুত এক মায়া তৈরি হয়েছে। আশা করি, আমাদের কষ্টের ফল হিসেবে গরুটির ন্যায্য দাম পাব।
শিবগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রনজিৎ চন্দ্র সিংহ বলেন, এমন ধরনের গরু যেসব খামারিরা পালন করে থাকে, আমরা তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করি। জুলফিকার আলী সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরুটি লালন-পালন করেছেন। এমনকি এখন পর্যন্ত চাঁপাই সম্রাট জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তার এই গরু বাজারজাত করতে অনলাইন ও অফলাইন দুই উপায়েই প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, কোরবানির ঈদে ন্যায্যমূল্যে জুলফিকার আলী তার গরুটি বিক্রি করতে পারবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণিসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, এ বছর জেলার ১১ হাজার ৫৪৯টি খামারে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৬১৫টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। জেলায় মোট গরু-মহিষ আছে ৮৮ হাজার ৪৭৬টি, আর ছাগল-ভেড়া আছে ৭৭ হাজার ১৩৯টি।
এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩ হাজার ২৩৫টি খামারে কোরবানিযোগ্য গরু-ছাগল আছে ৭৭ হাজার ৮২২টি, শিবগঞ্জে ৫ হাজার ৫৭৬টি খামারে পশু আছে ৩৫ হাজার ১২৫টি, নাচোলে ৭৩৩টি খামারে ৯ হাজার ৮৩৫টি, গোমস্তাপুরে ৯৭৫টি খামারে ২৯ হাজার ৭৩৪টি এবং ভোলাহাটে ১ হাজার ৩০টি খামারে ১৩ হাজার ৯৯টি গরু-ছাগল প্রস্তুত করেছেন খামারিরা। এ বছর জেলায় কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৩টি পশু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



