জুমবাংলা ডেস্ক : কোন রাখ-ঢাক নেই। কেউ ৪২-৪৩ কেজি, আবার কেউ ৪৪ কেজি পর্যন্ত নিচ্ছে একমণ ইলিশে। দখিণের বৃহৎ ইলিশের মোকাম আলীপুর-মহিপুরে চলছে এসব। ওজন করা হচ্ছে পুরনো পদ্ধতির লোহার দাড়িপাল্লায়। অধিকাংশের নেই ওজনের ডিজিটাল পদ্ধতির মিটার।
ফলে প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ জলদস্যুতার ঝুঁকি মোকাবেলা করে জীবন বাঁজি রেখে গভীর সমুদ্রের আহরিত ইলিশ বিক্রি করতে গিয়ে হাজারো জেলেরা ওজনে চরমভাবে প্রতারিত হচ্ছে। আড়ত মালিকরা মণ প্রতি দুই থেকে চার কেজি ইলিশ বেশি হাতিয়ে নিচ্ছে। এক শ’ মণ মাছ বিক্রি করলে আরও চার-পাঁচ মণ বেশি বিনা টাকায় হাতিয়ে নিচ্ছে। আড়ত থেকে দাদন নেয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার প্রেক্ষিতে জেলেরা এই জিম্মি দশা থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ছয় দিনে ইলিশের বৃহৎ মোকাম আলীপুর-মহীপুরে অন্তত ১২ হাজার মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। রবিবার রাতের তথ্য এটি। যা থেকে বিনা টাকায় অন্তত এক হাজার মণ ইলিশ হাতিয়ে নিয়েছে আড়ত মালিকরা। যার বাজার মূল্য অন্তত তিন কোটি টাকা। ভূক্তভোগী জেলে ও ট্রলার মালিকরা এর থেকে মুক্তি চেয়েছেন।
এফবি সাগর বোটের মাঝি জাকারিয়া জানান, তিনি দুইদিন আগে ১৫ মণ ইলিশ আলীপুরের একটি আড়তে বিক্রি করেছেন। পুরনো পদ্ধতির ওই দাড়িপাল্লায় মাপা হয়েছে। যেখানে ওজনে মণ প্রতি কমপক্ষে তিন-চার কেজি ইলিশ বেশি নেয়া হয়েছে। এতো কষ্টের আহরিত মাছ ওজন দেয়ার সময় চোখের সামনে বেশি নেয়ায় তারা আশাহত হয়েছেন। এফবি মা-বাবার দোয়া ট্রলারের মাঝি সুমন মিয়া জানান, ২২-২৩ জন জেলে নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এবারে ৬০ মণ ইলিশ পেয়েছেন। যার মধ্যে ১০ মণের কোয়ালিটি একটু খারাপ। এই মাছ পুরনো কাটায় (দাড়িপাল্লায়) মাপার সময় একটু করে ঝুল নিলেও মণ প্রতি দুই-তিন কেজি বেশি চলে গেছে। অধিকাংশ জেলেরা এনিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তাদের কথা- এটি আসলেই কষ্টের। এমনভাবে ঠকানো ঠিক নয় বলেও জেলেদের আকুতি। এভাবে অধিকাংশ আড়তের অবস্থা। যেন ইলিশ আহরণকারী জেলেরা মাছ বিক্রি করতে এসে প্রতি মণে ৪৩-৪৪ কেজি পর্যন্ত মাছ দিতে বাধ্য হচ্ছেন। পড়েছেন জিম্মিদশায়।
সিনিয়র কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য অফিসার অপু সাহা জানান, কলাপাড়ার আলীপুর-মহীপুরসহ বিভিন্ন আড়তে এই ছয় দিনে অন্তত ১২ হাজার ১০৮ মণ ইলিশের আমদানি হয়েছে। এটি ৩২৮ টি ট্রলারের আহরিত মাছের তথ্য। প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি হবে। তিনি জানালেন, ওজনে বেশি নেয়ার বিষয়টি বন্ধে তারা দুই-এক দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন। তবে কিছু আড়তে ডিজিটাল মেশিনে ওজন দেয়া চালু রয়েছে। বাকিদেরও এই পদ্ধতির আওতায় আনা হবে বলে জানালেন পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম।
মহিপুর মৎস্য আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ রাজা জানান, একটু ত্রুটি-বিচ্যুতি যা আছে আমরাও তা জেনেছি। তবে আগামি দুই-একদিনের মধ্যেই সমিতির সভার মধ্য দিয়ে জেলেদের সমস্যার সঠিক সমাধান হবে ইনশাআল্লাহ।
কলাপাড়ার ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনিও বিষয়টি আজকেই কেবল জেনেছেন। জেলেরা যেন প্রতারিত না হয় এজন্য ইলিশ বেচাকেনায় ওজনে ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর জন্য তিনি যথাযথ উদ্যোগ নিবেন বলে জানালেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।