লাইফস্টাইল ডেস্ক : মাজহাব শব্দের অর্থ পথ, পন্থা, তরিকা, মত, দল ও সম্প্রদায়। পারিভাষিক অর্থে মাজহাব হলো, সাহাবায়ে কিরামের ওফাতের পর ইসলামী আইন-কানুন, সামাজিক লেনদেন, কেনাবেচা, আমল ও ইবাদত সম্পর্কিত মৌলিক বিষয় ছাড়া শাখা-প্রশাখায় ইসলামী আইন বিশারদ ইমামদের বিভিন্ন দালিলিক বিতর্কমূলক মতবাদ।
যুগজিজ্ঞাসার জবাবে নতুন উদ্ভূত কোনো সমস্যার ইসলামী সমাধান কোরআন-হাদিস থেকে গবেষণা করে বের করার সময় ইমাম গবেষকদের মধ্যে মতপার্থক্য ঘটেছে। তাই ইসলামী বিধানের বয়ান ও ব্যাখ্যায় একাধিক অভিমত বা মতের ভিন্নতা তৈরি হয়েছে। এভাবে তৈরি হয়েছে নানা মাজহাব।
ইসলামী শরিয়তবিষয়ক বিধি-বিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে মুজতাহিদ ইমামদের যে মত, পথ বা মতবাদের অস্তিত্ব পাওয়া যায় তাকেই মাজহাব বলা হয়।
বস্তুত কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং হাদিস সম্ভারের মধ্যে কোনটি বেশি প্রামাণ্য; আমলের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য—এসব বিষয়ে ইমামদের মূলনীতি, মতপার্থক্য ও ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মুসলিমসমাজে একাধিক ফিকহি মাজহাবের উৎপত্তি হয়।
চার সুন্নি মাজহাবের উত্থান
পবিত্র কোরআন, সুন্নাহ ও খিলাফাতে রাশেদার পদাঙ্ক অনুসারী সত্যাশ্রয়ী যে মুসলিম সম্প্রদায় গড়ে ওঠে তারাই সুন্নি বা আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত নামে পরিচিত।
কোরআন ও হাদিসের মৌলিক ব্যাপারে কোনো মৌলিক মতপার্থক্য না থাকলেও ইজমা, কিয়াস, ইজতিহাদ, ইসতিহসান, ইসতিদলাল ও ইসলামী বিধানের প্রয়োগ প্রশ্নে সূক্ষ্ম মতবিরোধের কারণে সুন্নি জামাতের মধ্যে যে দল ও উপদলের সৃষ্টি হয়, তার সংখ্যা প্রথম দিকে বেশি থাকলেও পরে চারটি ফিকহি মাজহাব স্বীকৃত ও সমাদৃত হয়। এ কারণেই এগুলোকে চার সুন্নি ফিকহি মাজহাব বলা হয়। চারজন সুবিখ্যাত ইমামের অনুসারী এবং ওই ইমাম চতুষ্টয়ের নাম অনুসারেই মাজহাবগুলো সুপরিচিত। মাজহাব চতুষ্টয় হলো হানাফি, শাফিয়ি, মালিকি ও হাম্বলি মাজহাব।
মহানবী (সা.)-কে স্বচক্ষে দেখে দ্বিন গ্রহণ ও শিক্ষা লাভ করা সাহাবিদের যুগ শেষ হওয়ার মুহূর্তে ইসলাম যখন আরব উপদ্বীপের গণ্ডি ছাড়িয়ে বহু দেশ, বহু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে ছড়িয়ে পড়ে তখন বিশেষত অনারব এলাকার লোকদের পক্ষে সরাসরি কোরআন-হাদিস থেকে ইসলামের বিধান সংগ্রহ করা সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এ সময়ই উম্মতের বিজ্ঞ আলেমরা ইলমে ফিকাহ সংকলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ইবাদত, ব্যাবহারিক জীবনধারা ও আর্থ-সামাজিক ব্যাখ্যার ওপর ভিত্তি করে ইসলামী ফিকাহ সংকলিত হতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে ফিকাহ শাস্ত্র বা ইসলামী আইন শাস্ত্রের মাধ্যমেই ইসলামী শরিয়তের বিধানগুলো বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ উপযোগী করে উপস্থাপন করা হয়েছে। যেহেতু ইসলাম কালজয়ী ও কালোত্তীর্ণ জীবনব্যবস্থা।
আর ইসলাম স্থবির নয়; কোনো কাল বা সময়ের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয় এবং কোনো বিশেষ যুগ বা দেশে সীমাবদ্ধ নয়, তাই মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানরা ইসলামের বিধানের যুগজিজ্ঞাসার জবাবে ব্যাখ্যা দিয়ে কালোপযোগী করে পরিবেশন করার সর্বাত্মক প্রয়াস চালিয়েছেন।
এমন মুজতাহিদ ইমামদের গভীর গবেষণা ও ইজতিহাদের ফলে কোরআন-হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের মানদণ্ডে গড়ে উঠেছে শরিয়তের ফিকহি মাজহাব, যা মূলত কোরআন ও সুন্নাহর ব্যাখ্যামাত্র, নিজেদের বানানো কিংবা রচিত কোনো মতবাদ নয়।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এমন চারটি মাজহাব সারা বিশ্বে সমাদৃত। ফিকাহ শাস্ত্রে অসামান্য অবদানের জন্য যে চারজন ইমাম ইতিহাসের পাতায় চির অমর হয়ে আছেন
তাঁদের নাম এবং চারটি মাজহাব নিম্নরূপ :
১ ইমাম আবু হানিফা নুমান বিন সাবিত (রহ.) (৮০-১৫০ হিজরি)
২ ইমাম মুহাম্মদ বিন ইদরিস আল-শাফেয়ি (রহ.) (১৫০-২৪০ হিজরি)
৩ ইমাম মালেক বিন আনাস (রহ.) (৯৩-১৭৯ হিজরি)
৪ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) (১৬৪-২৪১ হিজরি)
উম্মে আহমাদ ফারজানা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।