জুমবাংলা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মওলানা ভাসানী হলের ছয় কক্ষ দখল করে রেখেছেন শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ নেতা। যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৫ থেকে ৬ বছর পূর্বে। অনেকে মজা করে আদু ভাইও সম্বোধন করেন তাদের।
হল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলের ৩২০ এবং ৩২২ এ দুটি কক্ষ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের দখলে। দুই কক্ষে আটজনের আসন। কিন্তু অন্য কেউ থাকার সুযোগ নেই। কক্ষ দুটি ছাত্রলীগের এই নেতা একাই দখল করে রেখেছেন। ৩২২ নম্বর কক্ষে থাকেন নিজে এবং ৩২০ নম্বর কক্ষ হচ্ছে নিজের আড্ডা রুম। অথচ তার ছাত্রত্বই নেই। সোহেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে ভর্তি হন ১০ বছর আগে, ৪২ তম ব্যাচে (২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ)। বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অন্তত ৬ বছর পূর্বে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু সোহেল এখনো ক্যাম্পাসে রয়ে গেছেন।
শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ এবং রাকিবুল ইসলাম এই দুইজনের দখলে রয়েছে ৩২১ এবং ৩২৪ নম্বর কক্ষ দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ)। এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অন্তত ৫ বছর আগে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। কিন্তু এই দুই নেতা দুই রুম দখল করে রয়েছেন ক্যাম্পাসে। এদিকে ৩১৪ এবং ৩১৬ নম্বর কক্ষ দখল করে রেখেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী জয় এবং সহ-সভাপতি এহসান ইমাম নাঈম দুজনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৪ বছর আগে।
জানা যায়, ছাত্রত্ব না থাকার পরও ছাত্রলীগের নেতারা ক্যাম্পাসে থেকে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পরছেন। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মারধর, মাদক সিন্ডিকেট সামলানোসহ নানা অপরাধে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের। তবে তাদের অপরাধ জগতের কথা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। তবু কর্তৃপক্ষ কখনোই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
এর মধ্যে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, আগামী ১৭ এপ্রিলের মধ্যে অছাত্রদের ক্যাম্পাস ছাড়তে হবে। অন্যত্রায় তাদের সনদ বাতিল এবং রাষ্ট্রীয় আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। কিন্তু অছাত্র নেতাদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ৬ বছর পূর্বে এবং এখনো হলের দখলে দুটি কক্ষ এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বলেন, সে যেই হোক ছাত্রত্ব না থাকলে তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সনদ বাতিল হবে এবং রাষ্ট্রীয় আইনে মামলা করা হবে।
এদিকে, মওলানা ভাসানী হলের নিচতলায় ৫২ ব্যাচের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা মাটিতে ফ্রোরিং করে চারজনের রুমে আটজন গাদাগাদি করে থাকেন। আর অছাত্র আদু ভাইরা চারজনের কক্ষ একা দখল করে আরামে থাকেন।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘না, না, আমরা কেউ সিঙ্গেল রুমে থাকি না, আমদের প্রতিটি রুমে চার জন করে অ্যালোট দেওয়া আছে। আর ভাসানী হলে কোনো গণরুম নাই তুমি চাইলে প্রভোস্টকে জিজ্ঞেস করতে পারো।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মওলানা ভাসানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম বলেন, ‘তাদেরকে আমি অনেকবার বলেছি হল ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তারা ছেড়ে দেব, ছেড়ে দেব বলে। এখন আমি শিক্ষক হিসেবে তাদের সাথে অনুরোধ করা ছাড়া তো প্রশাসকের মত করে বলতে পারি না। প্রশাসনকে লিস্ট দেব তারা ব্যবস্থা নেবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।