আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কিছু দেশে যেখানে ৮০০ জনের মতো বিলিয়নিয়ার আছেন, সেখানে অন্য কিছু দেশ ১০-২০ জনেও পৌঁছাতে পারছে না। লিখেছেন আশিকুর রহমান।
বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে এখন। ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা ও তাঁরা যেসব দেশে বাস করেন, সেসব বিত্তশালী দেশগুলোর প্রভাব সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে গভীরভাবেই পড়েছে। বিলিয়নিয়াররা শুধু নিজেদের জন্য সম্পদের পাহাড় গড়ছেন, তা কিন্তু নয়। বরং এসব ধনকুবের তাঁদের দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সৃষ্টিশীল উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছেন।
কিছু দেশে যেখানে ৮০০ জনের মতো বিলিয়নিয়ার আছেন, সেখানে অন্য কিছু দেশ ১০-২০ জনেও পৌঁছাতে পারছে না। ফোর্বসের ৩৮তম তালিকা অনুযায়ী, বর্তমানে দুনিয়ায় মোট ২ হাজার ৭ শ ৯১ জন বিলিয়নিয়ার আছেন, যাঁদের সম্মিলিত সম্পদের মূল্য ১৪.২ ট্রিলিয়ন ডলার। এই সংখ্যাটি গতবছরের তুলনায় ১৪১ জন বেশি, আর সম্পদের পরিমাণও এ বছর বেড়েছে ২ ট্রিলিয়ন ডলার। চলুন জেনে নিই কোন দেশগুলো থেকে এ বছর সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার পেয়েছে পুরো পৃথিবী:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সবার জানা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ। এখানে প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিলিয়নিয়ারদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ৮১৩ জন নিয়ে সর্বোচ্চ বিলিয়নিয়ার পেয়েছে মার্কিন মুলুক। সিলিকন ভ্যালির ধনকুবের ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোস দেশটির অর্থনীতির জন্য বিশেষ অবদান রেখেছেন। সঙ্গে ওয়ারেন বাফেট আর বিল গেটস তো আছেনই। তাঁদের উদ্ভাবনী ধারণা ও ব্যবসায়িক মডেলগুলো বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও উন্নয়ন, আর সেই সঙ্গে তাঁদের পুরো উদ্ভাবনের সংস্কৃতি এই দেশের বিলিয়নিয়ার তৈরির পেছনে অন্যতম কারণ।
চীন
দ্রুতগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ দেশটিকে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিলিয়নিয়ারের দেশ হিসেবে পরিচিত করেছে। চীনে বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ৪০৬ জন। ঝং শানশান, মা হুয়াটেং ও জ্যাক মা তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী নাম। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আলিবাবা ও টেনসেন্টের মতো কোম্পানিগুলো প্রচুর ধনী ব্যক্তির জন্ম দিয়েছে। চীনের উদ্যোক্তারা দেশের বাজার আর রাষ্ট্রীয় সমর্থন থেকে বেশ উপকৃত হচ্ছেন। সরকারের উদ্ভাবন নীতি ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের সুবিধা তাঁদের ধনী হওয়ার পথকে সুগম করেছে।
ভারত
ভারতের অর্থনীতি গত দশকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্টার্টআপ হাব দেশটি। তাদের বিলিয়নিয়ারের সংখ্যা ২০০। তথ্য প্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, ফার্মাসিউটিক্যালস ও ফিনটেক খাতে অসংখ্য বিলিয়নিয়ার গড়ে উঠেছে। মুকেশ আম্বানি, গৌতম আদানি ও শিব নাদার ভারতের শীর্ষ বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে আছেন। ভারতের যুব সমাজের উদ্যম, প্রযুক্তির ব্যবহারে আগ্রহ ও বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে দেশটি একটি নতুন উদ্যোক্তাকেন্দ্র হয়ে উঠেছে, যা তাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
জার্মানি
জার্মানি ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এটি উৎপাদন শিল্পের জন্য সুপরিচিত। এখানকার বিলিয়নিয়ারদের মধ্যে প্রধানত শিল্পপতি ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তারা রয়েছেন। প্রতিষ্ঠান যেমন বোহরিং, বিএমডব্লিউ ও সিমেন্স জার্মান অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। শক্তিশালী অর্থনৈতিক কাঠামো ও উচ্চশিক্ষিত শ্রমশক্তি দেশটির শিল্প ও ব্যবসা—উভয় ক্ষেত্রেই সাফল্যের জন্য সহায়ক। বিয়াতে হেইস্টার, কার্ল আলব্রেখ্ট জুনিয়র, ডিটার শোয়ার্জ ও সুসান ক্ল্যাটেন জার্মানের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধনকুবের।
রাশিয়া
রাশিয়ার বিলিয়নিয়াররা প্রধানত শক্তি, ধাতু ও খনন শিল্পকেন্দ্রিক। তাঁদের ধনসম্পদের উৎস স্পষ্টতই প্রাকৃতিক সম্পদভিত্তিক। যুদ্ধরত দেশটিতে ১২০ জন বিলিয়নিয়ার রয়েছেন। ভ্লাদিমির পোটানিন, লিওনিদ মিখেলসন ও অলেক্সি মোরদাশভ রাশিয়ার অন্যতম ধনী।
২০২৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, জার্মানি ও রাশিয়া এই পাঁচটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি বিলিয়নিয়ার এসেছে। এই দেশগুলোর অর্থনৈতিক কাঠামো, উদ্যোক্তা সংস্কৃতি ও প্রযুক্তির উন্নয়নই আসলে তাঁদের অর্থনৈতিক সাফল্যের মূল কারণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।