পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ব্যাংক খাতের প্রভাবশালী দুই ব্যক্তি—মাফিয়া এস আলম ও নজরুল ইসলাম মজুমদার—লুটপাট চালিয়ে যে পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে প্রায় অচল করে ফেলেছেন, সেগুলো একীভূত করার প্রক্রিয়া ধীর গতিতে এগোচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সোমবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই একীভূতকরণ কার্যক্রম শুরু হবে। তবে বাস্তবে প্রক্রিয়া চালু হতে আরও এক মাস লেগে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সব কিছুই নির্ভর করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের উপর। কারণ, পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করতে ন্যূনতম ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এই অর্থ কোথা থেকে আসবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিদেশি সংস্থা থেকে ঋণ নেয়ার আলোচনা চলছে, কিন্তু সুদের হার অনেক বেশি। এ নিয়ে গতকাল ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানরা গভর্নরের সাথে বৈঠক করেছেন এবং বর্তমান সংকটের চিত্র তুলে ধরেছেন। মূল সমস্যা হলো তহবিল ঘাটতি, যা কার্যক্রম বন্ধের পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। নতুন তহবিলের জন্য তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ করলেও সরাসরি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক—এই চার ব্যাংক থেকে এস আলম প্রায় এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর ফলে ঋণ খেলাপির হার চরমে পৌঁছেছে—
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: প্রায় ৯৭%
ইউনিয়ন ব্যাংক: প্রায় ৯৮%
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক: ৯৫%
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক: ৬২.৩০%
অন্যদিকে, দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে থাকা এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৪৮.২০%।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। তার আগেই এস আলম দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারকে আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু তারা যে বিপুল অর্থ ঋণের নামে বের করে নিয়েছেন, তা ফেরত দেননি। ফলে ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম ভেঙে পড়েছে এবং আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যেই বিপুল অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে—শুধু এক্সিম ব্যাংকই পেয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা, আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পেয়েছে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা।
গতকালের বৈঠকে একীভূতকরণ নিয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব প্রস্তুতি নিতে আরও এক মাস লাগবে এবং প্রয়োজন হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ জোগাড়ের চেষ্টা চলছে। এডিবি ও কয়েকটি দাতা সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব আছে, কিন্তু সুদের হার বেশি হওয়ায় আপাতত সে পথে অগ্রসর হওয়া হচ্ছে না। বিকল্প উৎস খোঁজা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, আগে দেওয়া তহবিলের বড় অংশই মাফিয়া এস আলমের বেনামী আমানতকারীরা তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সাধারণ আমানতকারীরা খুব একটা উপকৃত হননি। তাই আপাতত আর কোনো অর্থ সহায়তা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।