পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠি জেলার সীমান্ত মিশেছে এক বিন্দুতে। পাঁচ মিনিটের হেঁটেই পর্যটকরা তিনটি জেলা ঘুরে দেখতে পারবেন। এই তিন জেলার সীমান্তকে যুক্ত করেছে ছোট্ট হলতা নদী। বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরা গ্রাম, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার দাউদখালী ইউনিয়নের দেবত্র গ্রাম এবং ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার পাতাকাটা ইউনিয়নের জোরখালি গ্রাম—এই তিনটি স্থানের সীমান্ত এসে মিশেছে এই হলতা নদীর বুকেই।

সামাজিক মাধ্যমে বেশ কিছুদিন ধরে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জায়গাটি আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। সাশ্রয়ী খরচে সর্বোচ্চসংখ্যক জেলায় গমন সবসময় সহজসাধ্য নয়। যদি বলা হয়, এক যাত্রায়ই তিন জেলা একসঙ্গে দেখতে পারবেন, সেটি মাত্র ৫ মিনিটে! নিশ্চয়ই বিশ্বাস হবে না।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বরগুনার লক্ষ্মীপুরা খালের সেতু পার হলেই পিরোজপুরের দাউদখালী ইউনিয়ন। এখান থেকে হলতা নদীর পাড় ধরে ২ মিনিট হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায় ঝালকাঠির জোরখালি গ্রামে। হলতা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে রাজারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাজারহাট শহীদ বাচ্চু মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয় দুটি হলতা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় স্কুলের সীমানা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানেই শুরু হয়েছে বরগুনার বামনা উপজেলা ও ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার সীমানা। এসব বিদ্যালয়ে তিন জেলার শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। তাদের বন্ধুত্ব, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার পাশাপাশি গড়ে উঠছে সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন।
বরগুনা জেলার বাসিন্দা আবদুর রশিদ জানান, তিনটি জেলা একটি নদীর মোহনার মাধ্যমে একত্রিত করেছে। আমরা চাইলে পাঁচ মিনিটে তিনটি জেলা ঘুরতে পারি। সন্ধ্যার পরে আড্ডা দিতে আমাদের জেলা থেকে অন্য জেলায় চলে যাই। আমাদের জেলার ছেলেমেয়েরা পাশের জেলায় গিয়েও লেখাপড়া করেন। দূরত্ব কম হওয়ায় এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় গিয়ে বাজার সদাই করতে পারেন। তাছাড়া দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন সময় এখানে লোকজন আসেন দেখতে।
স্থানীয় মুদি দোকানদার আব্দুল মালেক জানান,আমরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে একে অপরের এলাকায় গেলেও আমাদের মনে হয় না যে আমরা অন্য একটি জেলায় এসেছি। আমরা সবাই মিলেমিশে চলি। তিন জেলার মানুষ আমার দোকানে এসে বাজার সদাই করে এবং বসে আড্ডা দেয়।
রাজারহাট শহীদ বাচ্চু মাধ্যমিক বিদ্যালয় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলে তিন জেলারই শিক্ষার্থী রয়েছে। মাত্র পাঁচ মিনিটেই তিন জেলা ঘুরে আসা যায়। এটা সত্যি আমাদের কাছেই ভালো লাগার বিষয়। বিভিন্ন সময়ে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন দেখতে আসে। আমাদের স্কুলটিও হলতা নদীর মোহনায়। আমরা তিন জেলার ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি কারণ তিন জেলারই শিক্ষার্থী রয়েছে আমাদের স্কুলে।
তিন জেলার শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা রাজারহাট শহীদ বাচ্চু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জহির খান বলেন, আমার এই স্কুলে তিন জেলার ও তিন ইউনিয়নের শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে। এটা আমাদের কাছেও খুব আনন্দের। তিন জেলার সংস্কৃতি আলাদা হলেও সবাই মিলেমিশে পড়াশোনা করে তাদের আলাদা সংস্কৃতি ভাগ করে নেয়। এ ছাড়া আমার স্কুলটি সীমানা ঘেঁষে হওয়ায় এই তিন এলাকায় আমার স্কুলটি শিক্ষায় যেমন স্বনামধন্য এবং একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



