তাকী জোবায়ের: আদেশ অমান্য করায় রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মুরশেদুল কবীরসহ পাঁচ শীর্ষ কর্মকর্তার তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং তাদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
রায় পাওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে তাদের ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এমডি ছাড়া কারাদণ্ড পাওয়া অন্য চার কর্মকর্তা হলেন-অগ্রণী ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর-২ শ্যামল কৃষ্ণ সাহা, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর-১ ওয়াহিদা বেগম, প্রিন্সিপাল শাখার জেনারেল ম্যানেজার মো. ফজলুল করিম, এলপিআরে যাওয়া আরেক জেনারেল ম্যানেজার এ কে এম ফজলুল হক।
বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) এ রায় দিয়েছেন।
আবেদনকারীদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নুরুল আমীন বুধবার রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আদালত অবমাননার দায়ে অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হাইকোর্ট ৩ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন। বিস্তারিত তথ্য পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর জানা যাবে।
এদিকে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে বুধবার আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তাদের আইনজীবী শামীম খালেদ। বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে এই আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
আইনজীবীরা জানান, ২০১৭ সাল পর্যন্ত মুন গ্রুপের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের ডিক্রি মূলে পাওনা ৫৩৯ কোটি টাকা। ২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে পাওনার ২৫ শতাংশ কিস্তিতে পরিশোধের জন্য মুন গ্রুপের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঋণের ২৫ শতাংশ পরিশোধ না করলে মুন গ্রুপকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবিতে পাঠানো হবে।
ব্যাংকের এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিম্ন আদালতে ঘোষণামূলে ডিক্রি প্রার্থনা করা হয়। একইসঙ্গে ব্যাংকের চিঠির বিরুদ্ধে আদেশ প্রার্থনা করে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। নিম্ন আদালত এই আদেশ নামঞ্জুর করেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে মুন গ্রুপ হাইকোর্টে বিবিধ আপিল দায়ের করেন। হাইকোর্ট ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর ব্যাংকের চিঠির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন। পাশাপাশি রুল দেন।
এদিকে নির্ধারিত সময়ে ঋণের ২৫ শতাংশ কিস্তি পরিশোধ না করায় মুন গ্রুপকে খেলাপি তালিকাভুক্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআইবি পাঠায় অগ্রণী ব্যাংক। পরে মুন গ্রুপ অগ্রণী ব্যাংকের এমডিসহ চার নির্বাহীর বিরুদ্ধে ভায়োলেশন মোকাদ্দমা দায়ের করেন। মামলার শুনানি শেষে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি, ডিএমডিসহ ৫ কর্মকর্তাকে ৩ মাসের দেওয়ানি কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অগ্রণী এমডিকে চাকুরিচ্যুত করা হবে কি না- জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু করার নেই। হাইকোর্ট শাস্তি দিলে সেইটা প্রসিডিউর অনুযায়ী চলবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘নরমাল প্রসিডিউর অনুযায়ী তাকে সাসপেন্ড করার কথা। এখনো করেছে কি না জানি না। তবে তিনি আর পজিশন হোল্ড করবেন না। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্ষেত্রে যা হয়, কেউ যদি ক্রিমিনাল অফেন্সে কনভিক্টেড হয়ে শাস্তিপ্রাপ্ত হয় তবে তাকে সাসপেন্ড করি। এরপর আইন অনুযায়ী চলে।’
শীর্ষ কর্মকর্তাদের শাস্তির বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, ‘আমরাতো আইনজীবীদের পরামর্শেই আইনী বিষয়গুলোতে পদক্ষেপ নেই। তারা যদি ত্রুটি করে সেটা ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর। আমি শুনেছি, চেম্বার আদালতে আপিল করা হয়েছে। দেখা যাক, আদালত কি সিদ্ধান্ত দেয়।’
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের আইন বিভাগের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইন বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক সাফিয়া আক্তারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলবো না।’
রায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর বলেন, ‘হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। আমরা আপিল করেছি। আশা করছি আদেশ চেঞ্জ করবেন হাইকোর্ট।’
অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সাসপেন্ডের সিদ্ধান্ত দিবে। এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে হাইকোর্টের রায় আগে কমপ্লাই করে পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বোঝা যাবে বিস্তারিত।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।