জুমবাংলা ডেস্ক : ওমর খৈয়াম বইকে অনন্ত যৌবনা বলেছিলেন। অপরদিকে, ফ্রান্তস কাফকা ভাবতেন বই হলো সেই ধারালো কুড়াল যা আমাদের হৃদয়ের অভ্যন্তরে জমে থাকা বরফের সমুদ্রকে ভেঙে চৌচির করে দেয়। আর সৈয়দ মুজতবা আলী তো আরেক কাঠি সরেস; তিনি বলেই ফেললেন, বই কিনে কেউ নাকি দেউলিয়া হয় না।
ক্ষণজন্মা এই মানবেরা বইকে হৃদয়ে ধারণ করতে জানতেন বলেই বই নিয়ে তাদের এতো উন্মাদনা। তবে বই নিয়ে উন্মাদনার অধিকার শুধু জ্ঞানী- গুণীদের রয়েছে- এমনটা ভাবা অনুচিত। বইকে ঘিরে থাকে বইপ্রেমীদের আবেগ। তাদের কাছে বই যেন কোনো টাইমমেশিন যা তাদের এক পা না নাড়িয়েও নিয়ে যায় অতীতের কোনো আদিম রাজ্যে অথবা ভবিষ্যতের অজানা দুনিয়ায়। কিন্তু এই ব্যস্ত জীবনে বই পড়বার ফুরসত কোথায়?
বই পড়ার পুরানো অভ্যাসকে চাঙ্গা করতে চাইলে ছুটির দিনগুলোতে সময় করে বেড়িয়ে আসতে পারেন রিডিং ক্যাফেগুলো থেকে। বই পড়তে পারার মতো নান্দনিক পরিবেশের পাশাপাশি সেখানে বোনাস হিসেবে পাবেন ধোয়া ওঠা কফির স্বাদ! যেখানে নিশ্চিন্তে পড়তে পারবেন বই।
বাতিঘর, বাংলামোটর
নান্দনিক ডেকোরেশনের জন্য বাতিঘর বইপ্রেমীদের নিকট প্রিয় হয়ে উঠেছে। হলদে বাতির কারণে পুরো দোকানজুড়েই বিরাজ করে প্রাচীন এক আবহ। ঢাকার বাংলামোটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের সপ্তম তলায় অবস্থিত বাতিঘরে প্রবেশ করতেই বইপোকারা নিজেদের আবিষ্কার করবেন শত শত বইয়ের রাজ্যে। বাংলাদেশি লেখকদের পাশপাশি ওপার বাংলার অরিজিনাল বইও পাওয়া যাবে বাতিঘরে। রয়েছে শিশু-কিশোর কর্নার। তবে বাতিঘরে চাইলে কেউ বসেও বই পড়তে পারেন বিনা অর্থ ব্যয়ে। ঢাকা ছাড়া চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহীতেও রয়েছে বাতিঘরের শাখা।
বেঙ্গল বই, ধানমন্ডি
ধানমন্ডির ২৭ নম্বরের ৪২ নম্বর বাড়িতে বেঙ্গল শিল্পালয় অবস্থিত। সবুজ সমারহের মাঝে বসে বই পড়তে চাইলে ঢু মেরে আসতে পারেন বেঙ্গল শিল্পালয়ের ভবনটিতে। এখানেই পাবেন দেশের অন্যতম বই বিপণন কেন্দ্র ‘বেঙ্গল বই’। মূল ফটক পাড়ি দিতেই চোখে পড়বে ছড়ানো উঠান, তাতে চেয়ার টেবিল পাতা। বই কেনার পাশাপাশি এখানে বিনামূল্যে বই পড়ারও সুযোগ রয়েছে। বই পড়তে পড়তে পেটকে শান্ত রাখতে চাইলে সেখানকার ক্যাফেও আপনাকে সাহায্য করবে।
পাঠক সমাবেশ, শাহবাগ
পাঠক সমাবেশ ছিল আজিজ সুপার মার্কেটের ছোট একটি বইয়ের দোকান। আর এখন তা রূপ নিয়েছে মস্ত এক বই বিতানে। জাতীয় জাদুঘরের ৪ নম্বর বিল্ডিংয়ে রয়েছে পাঠক সমাবেশের একটি শাখা। এছাড়া আজিজ সুপার মার্কেট ও কাঁটাবনেও রয়েছে তাদের আরো দু’টি শাখা। পাঠক সমাবেশকে ঠিক রিডিং ক্যাফে বলা যাবে না। তবে আপনি যদি তাদের মেম্বার হন, তবে পাবেন বিশেষ কিছু সুবিধা। এটা এক বিশাল বইয়ের রাজ্য, যেখানে পাঠকেরা চাইলে বই কেনার পূর্বে কোনো বই পড়েও দেখতে পারেন। “পাঠক তৈরির সংগ্রামে রত”- এ ব্রত নিয়ে পাঠক সমাবেশ তাদের গ্রন্থরাজ্যটি তৈরি করেছে পাঠকদের কথা ভেবেই। এখানেই পাঠক সমাবেশ ও অন্য বইয়ের দোকানগুলোর মাঝে পার্থক্য। শুধু পাঠক না, লেখকরাও মাঝেমাঝে আসর বসান এখানে। রয়েছে বই পড়ার মতো নির্মল পরিবেশ। সারি সারি তাকে রাখা বইয়ের মাঝে করা হয়েছে বসার ব্যবস্থা। বিশেষ করে শিশুদের জন্য পাঠক সমাবেশ হবে দারুণ উপভোগ্য।
দ্য বুকওয়ার্ম, গুলশান
দ্য বুকওয়ার্ম আদতে ইংরেজি সাহিত্যের এক স্বর্গরাজ্য। এর অবস্থান গুলশানের বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্কে। এটি কোনো রিডিং ক্যাফে নয়। মূলত এর অবস্থানের জন্য বইপোকাদের নিকট এর আকর্ষণ এতো বেশি। লেকের পাড় ঘেষে সবুজ গাছপালার কোলে এক চিলতে দোকান। পাশেই নর্থ এন্ড রোস্টার থাকায় বই কেনার পর চাইলে কফির তৃষ্ণাও মেটানো যাবে।
দ্য রিডিং ক্যাফে, বনানী
নামেই এর পরিচয়। একটি সাধারণ বুকশপকে কী করে পাঠকের নিকট আরো আকর্ষণীয় করে তোলা যায়, সে চিন্তা থেকেই দ্য রিডিং ক্যাফের উৎপত্তি। প্রথমে বুকশপে একটা ছোট রিডিং কর্নার খোলা হলেও পরবর্তীকালে এর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় ক্যাফে। এখানে একটু দূরে শিশুদের খেলার জন্যও রয়েছে আলাদা একটি কর্নার। কোলাহলহীন নির্জন প্রান্তরে বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে থাকতে চাইলে একবারের জন্য হলেও আপনার রিডিং ক্যাফেতে ঘুরে আসা উচিত।
বইয়ের এ ভারিক্কি বিপণিবিতানগুলো বাদেও ঢাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা ক্যাফে যেখানে অন্দরসাজের অনুষঙ্গ হিসেবেই ব্যবহার করা হয় বই। এসব রেস্তোরাঁয় খাবারের অপেক্ষায় থাকা খদ্দেররা চাইলে তাক থেকে বই নিয়ে পড়তেও পারেন। এ রকম কিছু ক্যাফে হলো- নার্ডি বিন কফি হাউজ, কফিবাজ, ব্রু টাউন ক্যাফে এবং বৈঠক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।