জুমবাংলা ডেস্ক : পাইকারিতে প্রতি কেজি পটোলের দাম মাত্র ৫ টাকা। একই বাজারের মধ্যে অবস্থিত খুচরা বাজারে তা বিক্রি হয়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া মাত্র ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত অপর খুচরা বাজারে পটোল বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। গতকাল শুক্রবার এমন চিত্রই দেখা গেছে যশোরের চৌগাছা বড় কাঁচা বাজারের পাইকারি ও খুচরা বাজার এবং ২০০ মিটার দূরের চৌগাছা খুচরা কাঁচা বাজারে।
গতকাল দুপুর ও বিকালে সরেজমিনে চৌগাছা সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠের বড় কাঁচা বাজার এবং চৌগাছা খুচরা কাঁচা বাজারে গেলে এই দামে পটোল বিক্রি হতে দেখা যায়।
বাজারের আড়ৎদার, খুচরা বিক্রেতা ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার চৌগাছা বড় কাঁচা বাজারে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ পটোল বিক্রি করতে নিয়ে আসেন কৃষকরা। সুযোগ বুঝে বাইরের ব্যাপারিরা (চৌগাছা থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, নোয়াখালি, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি বিক্রেতা) পটোল কম মূল্যে কিনতে থাকেন। সকালের দিকে যে পটোল ৮টাকা করে কেজি ছিল, সেই পটোলই জুমার নামাজের আগে ও পরে ৪ থেকে ৫ টাকা করে কিনতে থাকেন ব্যাপারিরা। পটোল সহজেই পচনশীল হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপারিদের দেওয়া দামে বিক্রি করতে বাধ্য হন।
চৌগাছার চাঁদপাড়া গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম ডাবলু বলেন, ‘৩ মণ পটোল নিয়ে এসেছিলাম। ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছি। গত বুধবারেও এই পটোল ১৮ থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম।’
আরেক কৃষক শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, ‘১৮ কাঠা জমিতে পটোল চাষ করেছি। ১৮৫ কেজি পটোল নিয়ে এসেছিলাম। ৫ টাকা করে কেজি বিক্রি করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আজ প্রায় ৫ মণ পটোল অন্যদিনের এক মণ পটোলের দামে বিক্রি করতে হলো। এই পটোল আনতে ভ্যান ভাড়াই দিতে হয়েছে ১৩৫টাকা।’
চৌগাছা বড় কাঁচা বাজারের আড়ৎদার মুকুল হোসেন গতকাল বিকালে বলেন, ‘সারাদিনে আমার আড়তে ৮ হাজার ১৩৭ কেজি পটোল বিক্রি হয়েছে। ৮টাকা থেকে বিক্রি শুরু হয়ে শেষে ৫ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি করেছি।’
মুকুল হোসেন বলেন, ‘গত সোমবার ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার বিকাল থেকে সোমবার সারদিন ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় বেশিরভাগ চাষি ক্ষেত থেকে পটোল তোলেননি। অনেকে গত বুধবারও পটোল বাজারে তোলেননি। যার চাপ আজ বাজারে পড়েছে। প্রচুর পরিমাণ পটোল এসেছে বাজারে। গোটা বাজারে আজ প্রায় ২০০ ট্রাক পটোল বিক্রি হয়েছে। যার এক ট্রাকে ৩৫০ মণ পটোল লোড হয়। এত বেশি পটোল বাজারে আসায় পাইকারি ব্যাপারিরা অল্প দামে পটোল কিনেছেন।’
চৌগাছা থেকে চট্রগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালীতে পটোল বিক্রেতা (ব্যাপারি) নারায়ন চন্দ্র বলেন, ‘আজ ৫, ৬ ও ৭টাকা দরে প্রায় ৫০ টন পটোল কিনেছি। চারটি ট্রাকে করে এই পটোল নিয়ে যাব, এখন ট্রাকে লোড চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আজ বাজারে প্রচুর পটোল আমদানি হয়েছে। তা ছাড়া মার্কেটে পটোলের চাহিদা কিছুটা কম। এ জন্য পটোলের দাম কম।’
অন্যদিকে চৌগাছা পাইকারি বাজারের মাঝেই অবস্থিত খুচরা বাজারে পটোল ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর পাইকারি বাজার থেকে ২০০ মিটার দূরের চৌগাছা খুচরা বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে পটোল বিক্রি হতে দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানান, ‘৪ থেকে ৮ টাকা করে পাইকারি কিনেছি এটা ঠিক। তবে বাজরের খাজনা, জায়গার ভাড়া এবং আমাদের মজুরি ও বিনিয়োগের লাভ হিসেব করলে ২০ টাকা বিক্রি করলেও লস হয়। তা ছাড়া কাঁচামাল অনেক সময় নষ্টও হয়ে যায়। এ জন্য সেটা আগেই বেশি দামে বিক্রি করে পুষিয়ে নিতে হয়।’
চৌগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মুবাশ্বির হুসাইন বলেন, চৌগাছায় চলতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ পটোলের চাষ হয়েছে। ঘুর্ণিঝড় রিমালের কারণে সোমবার পটোল তুলতে না পেরে শুক্রবার বিপুল পরিমাণে পটোল উঠিয়েছেন চাষীরা। এ জন্য হঠাৎ করে পটোলের দাম কমে গেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং করছি। চাষি যেন ন্যায্যমূল্য পায়, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।’ -আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।