জুমবাংলা ডেস্ক : সংসদ সদস্য হওয়ার পর জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা নতুন কোনো সম্পদ গড়েননি। তবে সম্পদের মূল্য কিছুটা বেশি দেখিয়েছেন। এ সময়ে তার আয় অর্ধেকেরও বেশি কমে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।
৫ বছর আগে তার কোনো ঋণ ছিল না, তবে এখন সিটি ব্যাংকে ৮৯ লাখ ৭ হাজার ৭৭৫ টাকা ঋণ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ আছে। এ সময়ে তার ব্যাংকে জমা কমেছে, পুঁজিবাজার থেকেও আয় কমেছে। অবসরে যাওয়ায় ক্রিকেট থেকেও টাকা কম পাচ্ছেন। ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে, সেটি বিশ্লেষণ করে এই তথ্য মিলেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মাশরাফী বলেন, আমার আয়ের মূল উৎস তো ক্রিকেট খেলা। এখন আমি আর বাংলাদেশ দলে খেলি না, বোর্ডের চুক্তিতেও নেই। আয় কমে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এখন আমি শুধু বিপিএল ও ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলি। এই দুই টুর্নামেন্টের আয় ও সংসদ সদস্য হিসেবে যে বেতন-ভাতা পাই, এসবই আমার আয়ের উৎস। আমার তো আর অন্য কোনো পেশা নেই। আয় বাড়ার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ দলে যখন থেকে আর খেলি না, এরপর আর কোনো জমিও কিনতে পারিনি। আগের যেটুকু জমি আছে, সেসবও হলফনামায় উল্লেখ আছে।
২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো নড়াইল-২ (লোহাগড়া ও সদরের একাংশ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। ক্রিকেটারদের আয় ও সম্পদ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সে বছরই মাশরাফীর বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়।
নির্বাচনি আইন অনুযায়ী মনোনয়নপত্রের সঙ্গে একজন প্রার্থীকে যে হলফনামা জমা দিতে হয়, তাতে ৮ ধরনের তথ্য দিতে হয়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, অতীতে কোনো ফৌজদারি মামলায় দণ্ড ছিল কি-না, বর্তমানে কোনো মামলা আছে কি-না, এর পাশাপাশি নিজের এবং নির্ভরশীলদের সম্পদের হিসেবও জমা দিতে হয়।
এবারও নড়াইলের এই আসন থেকে মাশরাফীকে প্রার্থী করেছে ক্ষমতাসীন দল আর দুইবার জমা দেওয়া হলফনামায় আয় ও সম্পদের হিসেব বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। হলফনামা অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যের বর্তমানে বার্ষিক আয় ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫৮ টাকা। এই হিসেবে তিনি মাসে ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মতো আয় করেন।
৫ বছর আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালে এই আয় ছিল দ্বিগুণেরও বেশি। সে সময় মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় মাশরাফী আয় দেখান ১ কোটি ৯৯ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ সে সময় মাসে আয় ছিল প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। আয়ের উৎস হিসেবে মাশরাফী পুঁজিবাজারের আয়, চাকরি ও সম্মানি এবং অন্যান্য খাত দেখিয়েছেন।
আগের বছরও আয়ের উৎস হিসেবে এগুলোই ছিল। তিনি পুঁজিবাজার থেকে (ব্যবসা) বছরে আয় দেখিয়েছেন ১৪ লাখ ১ হাজার ৯৫৩ টাকা, চাকরি ও বিভিন্ন সম্মানি বাবদ দেখিয়েছেন ২৩ লাখ ৩ হাজার ২০ টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৫১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৫ টাকা।
২০১৮ সালে তিনি মাশরাফী কৃষিখাতে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা, চাকরি থেকে (ক্রিকেট খেলে) ৩১ লাখ ৭৪ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৪ হাজার ৭০০ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন।
আয় কমে গেলেও সাবেক ক্রিকেটারের সম্পদ কিছুটা বেড়েছে। হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে মাশরাফী বলেছেন, তার ৯ কোটি ৪২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৩১ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। ৫ বছর আগে তার সম্পদ ছিল মোট ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৯ হাজার ৫১ টাকার। অর্থাৎ এবার তার সম্পদ বেড়েছে ২৮ লাখ টাকার কিছু বেশি।
সম্পদের মধ্যে ঢাকার মিরপুরে মাশরাফীর ২ হাজার ৮০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। পূর্বাচলে তার একটি প্লট রয়েছে যার মূল্য ৮ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে করা ছয়তলা বাড়িটা পুরোনো। এ ছাড়া নিজ নামে কৃষিজমি রয়েছে ৩.৬১ একর, যার মূল্য ৩৭ লাখ টাকা।
৫ বছর আগের হলফনামাতেও সম্পদের হিসেবে এগুলোই দেখানো হয়েছিল। অর্থাৎ মাশরাফি এই ৫ বছরে নতুন কোনো সম্পদ গড়েননি। তার ব্যাংকে জমাও কমেছে। তিন ব্যাংকে রয়েছে তার ১ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮৬০ টাকা। ৫ বছর আগে ব্যাংকে জমার পরিমাণ ছিল এখনকার চেয়ে ছয় গুণেরও বেশি। সে সময় অঙ্কটা ছিল ৬ কোটি ৩৭ লাখ ২৯ হাজার ৫১ টাকা।
মাশরাফী হাতে নগদ টাকা দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখ ৫৪ হাজার ৪০২ টাকা। ৫ বছর আগে তা ছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার, সঞ্চয়পত্র কেনা আছে ২ কোটি ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৭৯ টাকার। তার একটি কার, দু’টি মাইক্রোবাস এবং একটি জিপ রয়েছে, যেগুলোর মূল্য দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭ হাজার টাকা। ৫ বছর আগেও এই গাড়িগুলোই ছিল তার।
৫ বছর আগের মতোই এবারও মাশরাফী ৫০ তোলা স্বর্ণের হিসেব দেখিয়েছেন। তবে এর কোনো অর্থমূল্য দেখাননি। ২০১৮ সালেও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী দেখানো আছে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকার, ৫ বছরে সেখানেও আর কিছু যোগ হয়নি।
সূত্র : ডিবিসি নিউজ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।