দুলাল হোসেন : কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী এনামুল হকের বিরুদ্ধে টেন্ডার জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগের অর্থ বছরে ক্রয়কৃত চিকিৎসায় ব্যবহৃত কেমিকেল ও কাঁচামাল (রিএজেন্ট) নতুন করে ক্রয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা বিল পরিশোধ করেছেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ডা. কাজী এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
জানা গেছে, উত্তরা-টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকার মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে ২০০১ সালের ১০ জুন উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের ঈশা খাঁ এভিনিউতে কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ সরকারি হাসপাতাল চালু করা হয়। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ (করোনা) রোগী চিকিৎসা সেবার প্রথম হাসপাতালে। করোনার রোগীর চিকিৎসা সেবার নামে অর্থ আত্মসাতের ঘটনাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে উঠেছে হাসপাতাল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এবার অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
অভিযোগে বলা হয়— তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হতে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের সঙ্গে যোগসাজশ করে চিকিৎসায় ব্যবহৃত রিএজেন্ট ক্রয়ের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাটের পথ তৈরি করেন। এরপর তিনি ২০২৩ সালের ৫, ১০, ১৪ ডিসেম্বর দুটি দৈনিক ও দুটি ইংরেজি পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেখিয়ে ঢাকা ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেড, এমএস হিমি এন্টারপ্রাইজ ও জিএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কয়েক কোটি টাকার রিএজেন্ট সরবরাহের জন্য গোপনে কার্যাদেশ দেন। ওই কার্যাদেশের ভিত্তিতে হাসপাতালে রিএজেন্ট সরবরাহ না করলেও রিএজেন্ট ক্রয় দেখিয়ে হিমি এন্টারপ্রাইজকে ৫০ লাখ টাকা বিল দেওয়া হয়। বিষয়টি জানার পর স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী এনামুল হক ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের এমএসআর বাজেটের বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে দুটি বাংলা ও দুটি ইংরেজি পত্রিকার ভেতরের পৃষ্ঠায় প্রিন্টের সাহায্যে ভুয়া টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেখিয়ে তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করেন। যে চারটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা বলা হয়েছে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে যাচাইকালে ওই পত্রিকায় কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের কোনো দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পত্রিকায় দরপত্র প্রকাশে জালিয়াতি ও জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ক্রয়ে অভিজ্ঞতাহীন প্রতিষ্ঠানকে রেসপনসিভ করার বিষয়টি দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি ডা. কাজী এনামুল হককে অবহিত করলে তিনি তা আমলে না নিয়ে মূল্যায়ন শিটে স্বাক্ষর করতে কমিটি চাপ দেন ও ভয়ভীতি দেখান। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি নোট ডিসেন্টের মাধ্যমে ক্রয় প্রক্রিয়ার বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করলে তিনি নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হতে এক লটের প্যাকেজ-১, ২ ও ৩ এর অনুকূলে ঢাকা ইলেক্ট্রো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেড, এমএস হিমি এন্টারপ্রাইজ ও জিএম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানকে নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড প্রদান করেন, যা পুরোপুরি পিপিএ ২০০৬ ও পিপিআর ২০০৮ এর পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ায় (ডিপিএম) বিধিবিধান যথাযথভাবে অনুসরণ না করে কোনো রকম সার্ভে ছাড়া তিনি আগের বছরের ক্রয়কৃত কেমিক্যাল ও রিএজেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে চলতি অর্থ বছরে ক্রয় দেখিয়ে ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর একটি গোপন কার্যাদেশের মাধ্যমে হিমি এন্টারপ্রাইজের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকার এমএসআর রিএজেন্ট সামগ্রীর বিল পরিশোধ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।