জুমবাংলা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে অপরিকল্পিত পুকুর খননের খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ কৃষককে। বিস্তীর্ণ সমতল ফসলি জমির মাঝে পুকুর থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই আশপাশের জমিগুলোতে জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদে বিঘ্ন ঘটছে।
চলতি মৌসুমে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ডুবে গেছে প্রায় ৫শ বিঘা জমির পাকা ধান।
রোববার (১৫ মে) তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, সাস্তান, মথুরাপুর ও শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় সরেজমিনে গেলে এমন ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। কৃষকেরা অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে হাঁটু পানির মধ্য থেকে ধান কাটিয়ে নিচ্ছেন। পানির মধ্যে থেকে কিছু ধান পচেও গেছে।
তাড়াশ সদর ইউনিয়নের এসএমই (ক্ষুদ্র-মাঝারী উদ্যোক্তা) কৃষক মনসুর রহমান তার জমির ধান কাটতে গিয়ে হতাশ! এই দুই বিঘা জমি আবাদে তার ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে এখান থেকে ধান উৎপাদন হতো ৫০ থেকে ৫৫ মণ। কিন্তু জলাবদ্ধতায় অর্ধেকেরও বেশি ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ১০/১২ মণ ধান পাবেন বলে তিনি জানান।
মনসুর রহমান বলেন, তার জমিতে যে ধান উঠবে তাতে হয়তো উৎপাদনের খরচ উঠবে। কিন্তু ধান কাটা ও মাড়াইয়ে প্রতি বিঘায় ৬/৭ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে সেই টাকাটা লোকসান হবে।
সাস্তান গ্রামের সুজিত কর্মকার প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। তিনিও অতিরিক্ত মজুরিতে শ্রমিক নিয়ে পানির মধ্য থেকে ধান কেটে নিচ্ছেন। জলাবদ্ধতায় তার ধানেরও অর্ধেক নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান।
মাধবপুরের মোখলেসুর পাঁচ বিঘা, গোলাপ চার, মুকুল দুই ও মাসুদ রানা তিন, সাস্তান গ্রামের আজিজ পাঁচ শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলী চার এবং আব্দুস সামাদ দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তাদের অবস্থাও মনসুর রহমানের মতোই।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বিঘা জমির এ মাঠটি দুই বছর আগে তিন ফসলি ছিল। ধান, সরিষা ও শীতকালীন সবজি আবাদ করা যেত উর্বর এ জমিগুলোতে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জহুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ মেম্বর অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে এলাকার কৃষকদের কাছে জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন শুরু করেন। সেই থেকে শুরু এরপর আর শেষ হয়নি। একে একে এই মাঠে অন্তত ১৫/২০টি পুকুর খনন করা হয়েছে-এখনও খনন চলছে। প্রায় ৬/৭শ বিঘা ধানী জমি নষ্ট করে পুকুর খনন করা হয়েছে। এতে পুকুরের আশপাশের সব জমি জলাবদ্ধ হয়ে সাড়া বছরই চাষ অযোগ্য হয়ে থাকে। শুধুমাত্র বোরো মৌসুমে ধানটা চাষ করা যায়। কিন্তু এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় সেই বোরো ধান চাষেও লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, এ অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষকদের একমাত্র ভরসা বছরের এই বোরো ধান। সেই ধানে এবার খরচ তো দূরের কথা শ্রমিকের মজুরিও উঠছে না। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা।
তাড়াশ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আক্তার হোসেন জানান, মাঠটির অর্ধেকের কিছু কম অংশ আমার ওয়ার্ডে পড়েছে। এর মধ্যে পুকুর কাটতে দেই নাই। কিন্তু সাস্তান ও শ্রীপুর অঞ্চলে অনেকগুলো পুকুর কাটার ফলে আশপাশের তিন ফসলি জমি এক ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে। মোহাম্মদ মেম্বর ও জহুরুল ইসলামসহ অনেকেই কৃষকদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে জমি লিজ নিয়ে পুকুর খনন করেছে বলে জানান তিনি।
৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বুলন চন্দ্র বসাক বলেন, এক সময় মাধবপুর হয়ে সাস্তান পর্যন্ত একটি ছোট নদী ছিল। পুকুর খননের কারণে নদীটি আবদ্ধ হয়ে গেছে। সান্তান থেকে শ্রীকৃষ্ণপুর পর্যন্ত অসংখ্য পুকুর খনন হয়েছে। ফলে এ মাঠের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
তাড়াশ উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে তাড়াশ সদর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটছে। পুকুর খননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ারটা আমাদের নেই। তবে অভিযোগ পেলেই উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হয়। প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বন্ধ করলেও কিন্তু রাতের আঁধারে চলে পুকুর খনন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেজবাউল করিম বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বেশ কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলেই আমরা ক্যানেলের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন করে দিচ্ছি। সাস্তান এলাকাতেও ক্যানেল করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।