জুমবাংলা ডেস্ক : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ইলিশের দাম আকাশছোঁয়া। বাজারে মাত্র ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১,৯০০ টাকা দরে। ৮০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ২,৩০০ থেকে ২,৮০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র আলীপুর-মহিপুর ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা জেলেরা সেখানে অবস্থান নিয়েছেন।
চট্টগ্রামের বাঁশখালীর একটি ট্রলার ‘এফবি আল-আসফাক’ গত ৪ জুলাই ১৫ জন মাঝিমাল্লাসহ সমুদ্রে যাত্রা করে। কিন্তু সমুদ্রে পৌঁছে তিনদিনে মাত্র ২০০টি মাছ পায় তারা, যার মোট ওজন ১৬৩ কেজি। ট্রলারের মাঝি সালাহউদ্দিন (৪২) জানান, মাছগুলো আকার অনুযায়ী তিনটি আলাদা দামে বিক্রি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “তিন দিন পরে সমুদ্র উত্তাল হয়ে পড়ে, তখন আমাদের ফিরে আসতে হয়। জীবন বাঁচাতে রাতেই আলীপুরে চলে আসি।” পরে মহিপুর আড়তে মাছগুলো বিক্রি করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন জানান, এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি করেছেন মনপ্রতি এক লাখ তিন হাজার টাকায়, ৮০০ গ্রামের ইলিশ ৮৬ হাজার টাকা মন এবং ৬৫০ গ্রামের ইলিশ ৭৬ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে।
তার কথায়, “ইলিশের দাম বেশি—এই কথা ঠিক। কিন্তু আমি সাড়ে সাত লাখ টাকা খরচ করে সমুদ্রে গিয়ে মাত্র তিন লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছি। লোকসান হয়েছে চার লাখ টাকা। তাই শুধু দাম বেশি বললে চলবে না, জেলেরা কেমন কষ্টে আছে সেটাও দেখতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সমুদ্র সবসময়ই উত্তাল থাকে। এই সময় ইলিশ ধরতে হয় জীবন বাজি রেখে। তখন ইলিশ বেশি সুস্বাদু হয় ঠিকই, তবে সংকট থাকায় দাম চড়া থাকে। যদি পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা যায়, দামটা কমে যাবে।”
এছাড়া নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে আসা ট্রলার ‘এফবি মা-বাবার দোয়া’-এর মাঝি তৈয়বুর রহমান জানান, “গত তিন মাস ধরে আমরা সাগরে যেতে পারিনি। মে ও জুন মাসে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল, তারপর পুরো একমাস খারাপ আবহাওয়া। এর ফলে বাজারে মাছ কম উঠছে, তাই দাম বেশি। তবে মাছের পরিমাণ বাড়লে দাম কমে আসবে।”
মহিপুর ঘাটের জেলে জিয়াবুল বলেন, “সরকার বলে ইলিশের দাম নির্ধারণ করবে, কিন্তু একজন জেলে কত কষ্ট করে ইলিশ ধরে তা কেউ বোঝে না। ইলিশের দাম বেশি হলেও আমরা এখনো লোকসানে। সরকার যদি দাম নির্ধারণ করেই, তাহলে বরফ, তেল ও অন্যান্য সরঞ্জামের দামও নির্ধারণ করতে হবে।”
কুয়াকাটার ‘খান ফিস’-এর পরিচালক জাহাঙ্গীর খান বলেন, “ইলিশের দাম কেন এত বেশি, সেটা আমরা নিজেরাও জানি না। আমরা প্রতিদিন ঢাকাসহ বিভিন্ন মোকামে মাছ পাঠাই। সেখানকার বিক্রির ওপর নির্ভর করে আমাদের কাছ থেকে মাছ কেনা হয়। মাছ বেশি হলে অবশ্যই দামও কমবে।”
কলাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, “দীর্ঘদিন জেলেরা সাগরে যেতে না পারার কারণে ইলিশের সরবরাহ কম, ফলে দাম বেড়েছে। তবে ইলিশের পরিমাণ বাড়লে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমরা নজরদারিতে আছি যাতে কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করতে না পারে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।