৫০০ বছর পর অবশেষে মোনালিসা নিয়ে রহস্যের জট খুলল

mona

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কালজয়ী শিল্পী লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অন্যতম বিখ্যাত শিল্পকর্ম ‘মোনালিসা’ নিয়ে আগ্রহ ও গবেষণার শেষ নেই। এর কারণ মোনালিসার রহস্যময়ী সৌন্দর্য এবং চিত্রকর্মটির মডেলের পেছনে থাকা প্রকৃতি এবং ছোট্ট সেতুটি। মোনালিসাকে ধরা হয়ে থাকে লিসা দেল জিওকোন্দো নামে ইতালির একজন অভিজাত নারীর প্রতিকৃতি হিসেবে। ইতালির কোনো একটি গ্রামে ১৫০৩ থেকে ১৫০৬ সালের মধ্যে এই ছবি আঁকা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

mona

বিখ্যাত এই চিত্রকর্মটির মডেলের পেছনে (ব্যাকগ্রাউন্ড) থাকা প্রকৃতি ও সেতুটির অবস্থান ঘিরে কয়েক শতাব্দী ধরেই বিতর্ক চলছে। ভিঞ্চির মোনালিসার পেছনের ল্যান্ডস্কেপ (প্রকৃতি) বিরামহীনভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। শিল্প সম্পর্কিত ইতিহাসবিদ পরামর্শ দিয়েছেন, যে পেছনের দৃশ্যটি কাল্পনিক ছিল। তবে অনেকে একে ইতালির নির্দিষ্ট কয়েকটি স্থান বলে দাবি করে আসছেন। তবে মোনালিসা চিত্রকর্মটি ভিঞ্চি ঠিক কোথায় এঁকেছিলেন সেই রহস্যের সমাধান হয়েছে বলে দাবি করেছেন অ্যান পিজোরুসো নামের এক ভূতত্ত্ববিদ।

রেনেসাঁ যুগের শিল্প ইতিহাসবিদ এই ভূতাত্ত্বিক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, তিনি অবশেষে বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত চিত্রকর্মের রহস্য সমাধান করতে পেরেছেন। খবর দ্য গার্ডিয়ান

অ্যান পিজোরুসো তার দুটি বিশেষ অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা একত্রে কাজে লাগিয়ে দাবি করেছেন উত্তর ইতালির লম্বার্ডি অঞ্চলের লেক কোমোর তীরবর্তী লেকোর সুস্পষ্ট বেশ কিছু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এঁকেছেন ভিঞ্চি।

চিত্রকর্মের সেতু, পর্বতশ্রেণি এবং লেকের সঙ্গে লেকোর ১৪ শতকের আজজোন ভিসকন্টি ব্রিজ, দক্ষিণ-পশ্চিম আল্পস এলাকাটি এবং লেক গার্লেটের সঙ্গে হুবহু মিল প্রমাণ করেছেন পিজোরুসো নামের ওই নারী। লিওনার্দো ৫০০ বছর আগে ওই স্থান পরিদর্শন করেছিলেন বলে প্রমাণাদি রয়েছে।

Bridge

অ্যান পিজোরুসো বলেন, ‘এই মিলগুলো অনস্বীকার্য, যা নাকচ করা যায় না। আমি এই বিষয়ে খুব আত্মবিশ্বাসী। আমি সত্যিই মনে করি এটি সুস্পষ্টভাবে সেই রহস্যের উম্মোচন করেছে।’

এর আগে ২০১১ সালের দাবি করা হয়েছিল মোনালিসার পেছনের সেতু এবং সড়কটি উত্তর ইতালির একটি ছোট শহর ববিওতে ছিল। এক দশক পরে ২০২৩ সালে বলা হয় লেওনার্দো আরেজ্জো প্রদেশের সেতু এঁকেছিলেন।

তিনি বলেন, শুধু সেতু নিয়ে পর্যালোচনা করাটা যথেষ্ট ছিল না। এমন খিলানযুক্ত সেতু সেই সময় ইতালি এবং ইউরোপের বিভিন্ন স্থানেই ছিল এবং সেতুগুলো দেখতে অনেকটা একই রকম ছিল। শুধুমাত্র একটি সেতু দিয়ে চিত্রকর্মটির আঁকার অবস্থান শনাক্ত করাটা বাস্তবসম্মত নয়। আগের সবাই সেতুর কথা বলেছেন তবে কেউ ভূতাত্ত্বিক অবস্থান নিয়ে কথা বলেননি।

তিনি বলেন, ভূতত্ত্ববিদরা চিত্রকর্মের দিকে বেশি মনোযোগী হন না। আবার শিল্পসম্পর্কিত ইতিহাসবিদরা ভূতত্ত্বের দিকে কম মনোযোগ দেন। শিল্পবিষয়ক ইতিহাসবিদরা বলেছেন, লিওনার্দো সর্বদা তার কল্পনা ব্যবহার করেছেন। তবে আপনি এই ছবিটি বিশ্বের যে কোনও ভূতাত্ত্বিককে দেখালে তিনি সহজে বুঝতে পারবেন আমি কেন লেকোর কথা বলছি। এমনকি একজন ভূতাত্ত্বিক নন এমন যে কোন সাধারণ মানুষও এই মিল খুঁজে পাবেন।

তিনি আরও বলেন, লেকোর শিলা এবং চুনাপাথর লিওনার্দো তার চিত্রে সঠিকভাবে ধূসর-সাদা রঙে চিত্রিত করেছেন। লেকো ছাড়া ববিও বা আরেজ্জোতে কোন হ্রদ বা লেক নেই। তাই এটি যে লেকো অঞ্চল তা সুস্পষ্টভাবে চিত্রকর্মে ফুঁটে ওঠেছে।

ইন্টারনেটের গতি নিয়ে বাংলাদেশীদের জন্য সুখবর

ভিঞ্চি ষোল শতকের শুরুতে এই কালজয়ী মোনালিসা চিত্রকর্মটি এঁকেছিলেন। চিত্রকর্মটি বর্তমানে প্যারিসের লুভর জাদুঘরে রাখা হয়েছে। প্রতিবছর লাখো মানুষ এটি দেখতে যান। তবে ১৯১১ সালে চিত্রকর্মটি চুরি হওয়ার পর থেকে এর জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে।