জুমবাংলা ডেস্ক : বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে দক্ষিণের উপকূলবাসী। এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্ত। ক্রমেই শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণাবর্তটি প্রবল সাইক্লোনে রূপান্তরিত হতে চলেছে। আজকালের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে প্রথমে লঘুচাপ, অতঃপর গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। গতিমুখ অনুযায়ী উপকূলের দিকে এগিয়ে এলে আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলে। এ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয়া হয়েছে অশনি। এ নামের অর্থ ক্ষুব্ধ। এদিকে অশনির আঘাতের আশঙ্কায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় প্রায় পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে প্রশাসন দাবি করেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ উত্তর-পূর্ব দিকে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণে আঘাত হানতে পারে। নিম্নচাপে রূপ নেয়ার পর এটির গতিপথ কোন দিকে যাবে তা জানা যাবে। যদিও ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের কথা মাথায় রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার। গতকালই সম্পন্ন হয়েছে জেলা পর্যায়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা।
বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ মোকাবেলায় বরিশাল বিভাগে ৪ হাজার ৯১৫টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যার মধ্যে বরিশাল জেলায় ১ হাজার ৭১টি আশ্রয় কেন্দ্র, পটুয়াখালীতে ৯২৫, ভোলায় ১ হাজার ১০৪, পিরোজপুরে ৭১২, বরগুনায় ৬২৯ এবং ঝালকাঠিতে ৪৭৪টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ আশ্রয় কেন্দ্রগুলোয় ২০ লাখ মানুষের পাশাপাশি কয়েক লাখ গবাদি পশুকেও স্থান দেয়া যাবে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ঘূর্ণাবর্তটি অবস্থান করছে দক্ষিণ আন্দামান সাগর ও সন্নিহিত এলাকায়। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রাথমিক প্রক্রিয়া হিসেবে সৃষ্টি হবে নিম্নচাপ। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে আঘাত করার সময় তিনদিন পিছিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের গতিমুখও পরিবর্তন হয়েছে। ১৩ মে দুপুরের পর থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাতের আশঙ্কার কথা নির্দেশ করছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের স্থলভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠতে পারে ঘণ্টায় ১০০-১৩০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোয় বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত মে মাসেই ওঠে এ ধরনের ঝড়। ২০০৯ সালের ২৫ মে ধেয়ে এসেছিল প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আইলা’। এর প্রভাবে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলীয় জেলাগুলো। ১১ বছরের ব্যবধানে ২০২০ সালে এ অঞ্চলে পুনরায় আছড়ে পড়েছিল ‘আম্ফান’। সেটাও ছিল মে মাসে। ২০২১ সালের ২৬ মে হাজির হয়েছিল ‘ইয়াস’। এবার আসছে ‘অশনি’।
বরিশাল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ আন্দামান সাগরের সৃষ্টি হতে যাওয়া লঘুচাপটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বাংলাদেশের দিকে মুখ করে আছে। এর গতিপথ একেক সময় একেক দিকে দেখাচ্ছে। এজন্য বলা মুশকিল, এটি তৈরি হলেও আসলে কোন দিকে ধাবিত হবে। আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এটি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও বাংলাদেশে আসবে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, ত্রাণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যারা জড়িত ও ইউএনও এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা নিয়ে শনিবার সকালে সভা করা হয়েছে। শুকনো খাবার ও সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সিপিপি স্বেচ্ছাসেবকদেরও প্রস্তুত করা হয়েছে। উপকূলীয় এলাকাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বরিশাল জেলায় ৩১৬টি সাইক্লোন শেল্টার এবং আরো ৭৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব শেল্টার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৬ লাখ ৪২ হাজার মানুষ এবং প্রায় ৫০ হাজার গবাদিপশু আশ্রয় নিতে পারবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’ মোকাবিলায় আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে। জানতে পেরেছি, ভারত মহাসাগরের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটি ‘ঘূর্ণি’ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আগামী ৯ মের মধ্যে লঘুচাপে রূপ নিতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ হবে। তিনি বলেন, ১১ তারিখের দিকে নিম্নচাপে রূপান্তরিত হবে। পরে এটি গভীর নিম্নচাপ হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের আশঙ্কা করা যাচ্ছে। যদি এটি ‘ঘূর্ণিঝড়ে’ রূপ নেয় তাহলে এর নাম হবে ‘অশনি’। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় নিয়ে জেলায় জেলায় আলোচনা করা হয়েছে। এ মাসের জন্য আমরা আগেই প্রস্তুত ছিলাম। তাই বিভাগের ছয় জেলার প্রায় পাঁচ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।