পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি বা ফাইভ জি যুগে সরাসরি প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দেশের অন্যতম দুই মোবাইল অপরাটের গ্রামীণফোন ও রবি এক সঙ্গে বিভাগীয় শহরে এই প্রযুক্তি তাদের গ্রাহকদের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান এক ভিডিও বার্তায় জানান, তারা প্রথম দেশের অপরেটর হিসেবে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে ফাইভ জি চালু করেছেন। একইদিনে এক অনুষ্ঠানে রবির ফাইভ জি চালু ঘোষণা দেয়। বিটিআরসির হিসেব অনুযায়ী দেশে যে প্রায় ২০ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এ ঘোষণার ফলে বিপুল সংখ্যক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে ফাইভ জির আওয়াত চলে আসলো। এমন বাস্তবতায় তুলে ধরছি ফাইভ জি চালুর সুবিধাগুলো।
মোবাইল ফোনের পঞ্চম জেনারেশন ইন্টারনেটকে সংক্ষেপে ডাকা হয় ফাইভ জি। যেখানে দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট তথ্য ডাউনলোড এবং আপলোড করা যাবে। যার সেবার আওতা হবে ব্যাপক। এরফলে রেডিও তরঙ্গের আরো বেশি ব্যবহার নিশ্চিত করবে এবং একই সময় একই স্থানে বেশি মোবাইল – ফোন ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবে। এর মাধ্যমে মাধ্যমে উন্নত ভয়েস কলিংয়ের পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, বিগ ডেটা, ইন্টারনেট অফ থিংস বা আইওটি এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসকে সমর্থন করে। যা স্মার্ট শহর, স্মার্ট ফ্যাক্টরি এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির ভিত্তি স্থাপন করা যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন গ্রাহক যদি তার মোবাইল ফোনে সফলভাবে ফাইভ জি চালু করতে পারেন তিনি প্রত্যাহিক জীবনের অন্তত ৮ থেকে ১০ টি ক্ষেত্রে এর থেকে সুবিধা নিতে পারবেন। প্রথমত হচ্ছে ফাইভ জির ফলে উচ্চগতির ইন্টানেট সার্ভিস পাবেন একজন গ্রাহক। যা তাকে দ্রুত ডেটা ট্রান্সফার ও লো-ল্যাটেন্সি সুবিধা দেবে। এর মাধ্যমে ভিডিও স্ট্রিমিং ও অনলাইন গেমিং: হাই রেজোলিউশনের ভিডিও ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেমিং সহজ হবে।
দ্বিতীয় সুবিধাটি হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। একজন শিক্ষার্থী যখন ফাইভ জি কানেকশন নিবেন তার জন্যে ভার্চুয়াল কার্যক্রম সহজ হয়ে যাবে। শিক্ষায় যোগ হবে নতুন মাত্রা। তৃতীয় সুবিধাটি হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে। ফাইভ জি প্রযুক্তির ফলে দূরবর্তী অঞ্চলে রোগীদের সেবা বা টেলিমেডিসিন প্রদান সহজ হবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা দূর থেকে রোবটিক অস্ত্রোপচার পরিচালনা করতে পারবেন। এছাড়া এআই নির্ভর ডায়াগনোসিস ব্যবহার করে দ্রুত ও নির্ভুল রোগ নির্ণয় করা যায়।
ফাইভ জি ব্যবহার করে শিল্প ও কৃষি ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফাইভ জির মাধ্যমে কারখানায় রোবট নিয়ন্ত্রণ আরও নির্ভুল ও দ্রুতগতির হবে। এছাড়া সেন্সর-ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থায় রিয়েল-টাইম মনিটরিং ও মেইন্টেন্যান্স সহজ করা যাবে। কৃষিতে ফসলের অবস্থা নিরীক্ষা, কীটনাশক ছিটানো, ও মাঠ পর্যবেক্ষণে ফাইভ জি ব্যবহার করে ড্রোন চালিয়ে করা যাবে।
ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে যানজট। যানবাহন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ফাইভ জি প্রযুক্তির ব্যবহার করেও সুফল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইওটি ও রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহারের মধ্য দিয়ে স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট নিশ্চিত করা সম্ভব। অটোনোমাস গাড়ি ও ড্রাইভিং সিস্টেম চালুর মধ্য দিয়ে স্বয়ংক্রিয় যানবাহন ব্যবস্থা চালু করা যায়। এছাড়া ফাইভ জি প্রযুক্তি ব্যবহার করে উন্নত সিসিটিভি ও নজরদারি ব্যবস্থা কার্যকরের মধ্য দিয়ে গণপরিবহনে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সম্ভব।
সারাবিশ্বের ব্যাকিং ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছে ফাইভ জি প্রযুক্তি। পরিবর্তন আনা যাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরেও। দ্রুত সময়ের মধ্যে লেনদেন সম্পন্ন ও রিয়েল টাইম ডাটা প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে দ্রুত গ্রাহক সেবা দেয়া সম্ভব। ফাইভ জি ও এআই দিয়ে যৌথভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতারক চিহ্নিত করা সহজ হবে।
বাংলাদেশ একটি দূর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রতিবছর প্রাণহানীসহ বিপুল সম্পত নষ্ট হয় বন্যায়। এমন বাস্তবতায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ফাইভ জি ব্যবহারে সুফল পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহার করে ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদির সময় দ্রুত সতর্কবার্তা পৌছানোর মাধ্যমে দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব।
ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, লাইভ ইভেন্ট ও ই-স্পোর্টসে একজন ব্যবহারকারীর পুরো অভিজ্ঞতা পাল্টে দেবে ফাইভ জি মোবাইলে নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।