জুমবাংলা ডেস্ক : ভোলার মনপুরা উপকূলের মেঘনায় ভরা মৌসুমে জেলের জালে মিলছে না রূপালি ইলিশ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা মেঘনায় জাল পেতে রাখলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ, যা ২-৪টি পাচ্ছে তারও ওজন ৪০০-৫০০ গ্রাম।
সেই ইলিশ বিক্রি করে যে পরিমাণ টাকা পায়, তা দিয়ে খরচ তো দূরে থাক সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে জেলেদের। এতে করে প্রতিনিয়ত ঋণের বোঝা বাড়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলেরা।
তবে মেঘনায় আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান। অন্যদিকে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আশাবাদ ব্যক্ত করে জানান, বৃষ্টি বাড়লেই মেঘনায় দেখা মিলবে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের।
মেঘনার জেলে শাহে আলম মাঝি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে সাড়ে ৪ হাজার টাকার বাজার-সদাই করে সাত জেলেকে সঙ্গে নিয়ে মেঘনায় ইলিশ শিকারে যান। টানা ৬ ঘণ্টা জাল পেতে রাখেন মেঘনায়। তার পর জাল টেনে দেখা মেলে ৪ ইলিশের।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকালে ঘাটে এসে সেই ৪০০-৫০০ গ্রামের চারটি ইলিশ আড়তদারের কাছে ১২০০ টাকায় বিক্রি করি। এতে করে একদিন মেঘনায় মাছ শিকারে যাওয়ায় লোকসান হয় তিন হাজার ২০০ টাকা। সেই লোকসানের টাকা ও সংসার চালাতে ফের আড়তদার থেকে ঋণ নিতে হবে।
এদিকে হাজিরহাট মৎস্য ঘাটের মতিন মাতাব্বরের আড়তের মাঝি কালাম, হারুন, জাকির ও ইব্রাহীম মাঝি জানান, ইলিশের আশায় প্রতিনিয়ত তারা মেঘনায় যান। কিন্তু প্রতিদিনই একই অবস্থা। কোনো দিন চারটি আবার কোনো দিন ছয়টি ইলিশের বেশি পাওয়া যায় না। এতে করে তেল খরচ ও খাবারে যে টাকা যায় ইলিশ বিক্রি করে সেই টাকা ওঠে না। এভাবে ইলিশ ধরা পড়লে দেনার দায়ে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
হাজিরহাট মৎস্যঘাটের মৎস্য আড়তদার মতিন মাতব্বর, দাসেরহাট ঘাটের গিয়াস উদ্দিন আযম, বাছেদ মেম্বার, টেকের মাথার আড়তদার আবুল কাশেম মেম্বার, পঁচা কোড়ালিয়া ঘাটের আড়তদার লিটন শাহ ও ছাত্তার জানান, ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশের দেখা নেই। এতে করে প্রতিনিয়ত জেলেদের মাছ শিকারের জন্য টাকা দিতে হয়। আর সেই টাকা তারা ঢাকার আড়তদারদের কাছ থেকে নেয়। এতে প্রতিনিয়ত তাদেরও ঋণের বোঝা বাড়ছে। ইলিশ না পড়লে তাদের কোটি কোটি টাকা লোকসান হবে।
সরেজমিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার সকাল ৯টায় হাজিরহাট মৎস্যঘাট, দাসেরহাট ঘাট, জনতাঘাট, টেকের মাথা ঘাট, পঁচা কোড়ালিয়া ঘাটে দেখা যায়, মৎস্য আড়তদাররা মাছের গদি খুলে বসে রয়েছে। কিন্তু গদির বাক্সে ইলিশ নেই। কিছুক্ষণ পর পর ৪-৫টি করে জেলেরা মাঝারি সাইজের ইলিশ নিয়ে আসছে। পরে সেই ইলিশ গদির বাক্সে ওঠানো হয়। পরে পাইকার ডেকে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। একই অবস্থা প্রত্যেক আড়তদারদের।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। ইলিশের ভরা মৌসুম আগস্ট-সেপ্টেম্বরে। প্রাকৃতি বৃষ্টির কারণে মৌসুম নভেম্বরে যেতে পারে। তবে আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়বে।
এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন জানান, মেঘনায় ডুবোচরের কারণে নদীর নাব্যতা কম থাকায় ইলিশের দেখা মিলছে না। তবে বৃষ্টি পড়লে মেঘনায় কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।