নানা কারণেই অমর হয়ে থাকবেন জুবিন গার্গ। আসামের জনপ্রিয় এই সংগীতশিল্পী গেল ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে মার যান। জুবিন শুধু একজন কণ্ঠশিল্পীই ছিলেন, তিনি ছিলেন মানুষের প্রাণের স্পন্দন। তার গান যেমন মায়ায় ভরিয়ে রাখতো শ্রোতাদের হৃদয়, তেমনি জীবনের নানা কাজকর্ম ও আদর্শ তাকে পৌঁছে দিয়েছে অমরত্বের কাতারে।
তার মৃত্যুর পর আসাম প্রদেশ তিনদিন ধরেই বলা চলে অকেজো হয়ে আছে। চলছে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক। লাখ লাখ মানুষ তাকে বিদায় জানাতে নেমে এসেছে রাস্তায়। যা গড়েছে রেকর্ডও। এ আর রহমান, শ্রেয়া ঘোষাল থেকে শুরু করে ভারতের নানা অঞ্চলের স্টার-সুপারস্টারেরা তার জন্য প্রার্থনা করে শোকগাঁথা লিখেই চলেছেন। এ যেন শোকের উৎসব নামিয়ে দিয়েছেন জুবিন।
সোশ্যাল মিডিয়াতে ভক্তরাও আজ চারদিন ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা আবেগ-অনুভূতির কথা। যার অনেক পোস্ট হয়েছে ভাইরাল। অনেকেই বিশ্লেষণ করছেন নিরবে নির্ভৃতে আর বলিউডের ঝলকানি ও মিডিয়া হাইপের বাইরে থেকেও জুবিন কেন এতো জনপ্রিয় ছিলেন? কেন তার শোকে ভারতবর্ষকে এভাবে নাড়িয়ে দিলো? নানা কারণ ও ব্যাখ্যা উঠে আসছে সেসব লেখায়।
তারমধ্যে কটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে জুবিনের অমরত্বের কারণ নিয়ে। যেখানে ৬টি কারণকে উল্লেখ করা হয়েছে। দেখে নেয়া যাক সেই কারণগুলো-
ক্ষমতার কাছে মাথা নত না করা
জীবনভর জুবিন গার্গ ছিলেন অকুতোভয়। তিনি কখনও রাজনীতিক বা ক্ষমতার সামনে নতি স্বীকার করেননি। যখন দরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকারকে সহায়তা করেছেন। যখন দরকার হয়েছে সরকার বা ক্ষমতার বিপক্ষে একাই দাঁড়িয়ে থেকেছেন ন্যার ও বঞ্চিত মানুষের অধিকারের পক্ষে।
ধর্মের নামে বিভাজন নয়
ধর্ম দিয়ে বিভাজনের রাজনীতিকে তিনি সবসময় ঘৃণা করেছেন। মানুষকে এক করার শক্তিই ছিল তার কণ্ঠে। তিনি নিজের মুখে ঘোষণা দিয়ে গেছেন, ‘মোর কোনো ধর্ম ও জাতি নাই। মুই সবাইকে ভালোবাসি।’ আর তাই হয়তো তার মৃত্যুর পর যেমন মন্দিরে চলেছে প্রার্থনা তেমনি আসামের মসজিদ-মাদ্রাসাতেও হয়েছে মিলাদ ও দোয়ার মাহফিল। যা অসাম্প্রদায়িক এক শিল্পী জুবিনকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে।
রাজনীতির প্রলোভন থেকে দূরে ছিলেন
কোনও রাজনৈতিক দল তাঁর কণ্ঠস্বর কিনতে পারেনি। তিনি ছিলেন কেবল মানুষের শিল্পী। কখনো নিজেকে কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্তও করেননি। ক্ষমতার সুবিধাও নেননি। নিজেকে তিনি সোশ্যালি লেফটিস্ট বা সংস্কারপন্থী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বামপন্থী হিসেবে পরিচিত করতেন। নারী-পুরুষের সমঅধিকার সমর্থন করা, সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হওয়া, ধর্ম, বর্ণ, জাতিগত বিভেদ না মানা, পরিবেশ সুরক্ষায় জোর দেওয়া নিয়ে আজীবন কথা বলেছেন তিনি। এইসব কারণে তিনি পৌঁছে গিয়েছিলেন সব শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের হৃদয়ে। জুবিন হয়েছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা প্রতীকও।
খ্যাতি পেয়েও ছিলেন মাটির মানুষ
বলিউডে জনপ্রিয়তা, অর্থ ও খ্যাতি পেয়েও জুবিন ছিলেন সরল, অকৃত্রিম এবং মানুষের কাছাকাছি। বাস করতেন নিজের পৈতৃক ভিটায়। সাধারণ মানুষের মতোই। যে কেউ যে কোনো সময় তার দেখা পেত, তার সান্নিধ্যে যেতে পারতো। তিনি সবাইকে ভালোবাসতেন হৃদয় দিয়ে।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার
যখন অন্যরা নীরব ছিলেন, তখন জুবিন গার্গ অন্যায়ের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলেছিলেন একাই। মানুষ তাকে চিনেছে ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে। যিনি নিজের স্বার্থের কথা কখনো ভাবতেন না। এই স্বার্থহীনতার আদর্শ জুবিনকে সবসময় অনন্য করে রাখবে।
মানবিকতায় ভরপুর জীবন
বন্যার ত্রাণ থেকে শুরু করে নানা সামাজিক কাজে তিনি সবসময় এগিয়ে এসেছেন, থেকেছেন মানুষের পাশে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।