অ্যান্টার্কটিকার শীত, তীব্র বাতাস আর বিশাল বরফের রাজ্য—এই সবকিছুর মাঝেও একদিনের জন্য যেন থমকে দাঁড়ায় সময়। ১৯৫৯ সালের ২৬ জুলাই , একটি সাধারণ দিনের অভিযানে বেরিয়ে আর ফিরলেন না তরুণ ব্রিটিশ অভিযাত্রী ডেনিস টিঙ্ক বেল। হিমবাহের গভীর ফাটলে নিখোঁজ সেই মানুষটির খোঁজ মেলে ৬৫ বছর পর। যখন জলবায়ু পরিবর্তনের হাওয়া গলিয়ে দিচ্ছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ।
সাম্প্রতিক এক অভিযানে, পোল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা কিং জর্জ দ্বীপের ইকোলজি গ্লেসিয়ারে খুঁজে পান কয়েকটি হাড়, একটি হাতঘড়ি, পুরোনো রেডিও ও পাইপ। পরীক্ষায় নিশ্চিত হয়, এগুলোই সেই ডেনিস বেলের চিহ্ন। যিনি মাত্র ২৫ বছর বয়সে হারিয়ে গিয়েছিলেন বরফের অতলে।
ডেনিস বেল জন্মেছিলেন ১৯৩৪ সালে। রয়্যাল এয়ারফোর্সে কাজের পর প্রশিক্ষণ নেন আবহাওয়া বিজ্ঞানে। এরপর ১৯৫৮ সালে পাড়ি জমান পৃথিবীর একপ্রান্তে অ্যান্টার্কটিকায়।
ফকল্যান্ড আইল্যান্ডস ডিপেনডেন্সিস সার্ভের হয়ে কিং জর্জ দ্বীপে ছোট একটি ঘাঁটিতে শুরু হয় তার দুই বছরের গবেষণা অভিযান। আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ, কুকুরের স্লেজ গাড়ি চালানো আর খাদ্য সরবরাহের দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি ছিলেন দলের এক উজ্জ্বল মুখ। হাস্যরসিক, পরিশ্রমী, এবং দারুণ রাঁধুনি হিসেবেও খ্যাত।
সেই ১৯৫৯ সালের ২৬ জুলাই। ডেনিস ও তার সহকর্মী জেফ স্টোকস যখন বেরিয়েছিলেন হিমবাহ পরিমাপের অভিযানে, কুকুরগুলো ক্লান্ত হয়ে পড়লে বেল এগিয়ে যান একাই। কিন্তু হঠাৎই এক গভীর ক্রেভাসে পড়ে যান তিনি।
সহকর্মীরা চেষ্টা করেও তাকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হন। কোমরের বেল্ট ছিঁড়ে গিয়ে ডেনিস আরও গভীরে হারিয়ে যান। বরফের অতল থেকে আর কোনো সাড়া আসেনি তার।
সেই খবরে ডেনিসের পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। বড় ভাই ডেভিড বেল বলেন, ‘আমাদের মা কখনোই এই শোক মেনে নিতে পারেননি।’ তবে তার ভাই খুশি এতবছর পরে হলেও বেলের দেহাবশেষ ফিরে পাওয়ায়।
ডেভিড ও তার বোন ভ্যালেরি শিগগিরই ইংল্যান্ডে ফিরে ডেনিসকে যথাযোগ্য সম্মানে সমাহিত করবেন বলে জানিয়েছেন।
পোলিশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ইকোলজি গ্লেসিয়ার দ্রুত গলছে। গলে যাওয়া বরফের সঙ্গে ডেনিসের দেহাবশেষ ভেসে আসে অন্য এক স্থানে। যেখানে তারা চার ধাপে সাবধানে উদ্ধার করেন হাড়, ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও অন্যান্য নিদর্শন।
ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক মনুমেন্ট ট্রাস্টের চেয়ারম্যান রড রিস জোন্স বলেন, ‘এটি কেবল এক অভিযাত্রীর মরদেহ ফেরানোর ঘটনা নয়, বরং বিজ্ঞান ও অ্যান্টার্কটিক অনুসন্ধানের ইতিহাসের এক নিঃশব্দ স্বীকৃতি।’
বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা কাহিনিগুলো মাঝে মাঝে ফিরে আসে। কখনও হাড়ের আকারে, কখনও একটি ঘড়ির টিকটিকি শব্দে। আর সেসবই আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সময় থেমে থাকে না, ইতিহাসও হারায় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।