সুয়েব রানা, সিলেট : সিলেট সীমান্তে আবারও বিএসএফ কর্তৃক পুশ ইন-এর ঘটনা ঘটেছে। আজ ২৮ মে ২০২৫, ভোররাতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) একযোগে ৬৮ জন বাংলাদেশি নাগরিককে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়। বিজিবির সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধীনস্থ তিনটি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে এই পুশ ইন কার্যক্রম সংঘটিত হয়।
Table of Contents
বিজিবির তৎপর টহল দলের সক্রিয় অভিযানে সবাইকে সীমান্ত এলাকায় আটক করা সম্ভব হয়। জানা গেছে, আটককৃত ব্যক্তিরা পূর্বে বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে ভারতে গমন করেছিলেন।
ঘটনাস্থল ও আটক বিবরণ
ঘটনাটি ঘটে ২৮ মে তারিখে আনুমানিক রাত ৩টা ৩০ মিনিট থেকে ৪টা ৩০ মিনিটের মধ্যে। সীমান্তের যেসব বিওপি দিয়ে এই পুশ ইন হয় সেগুলো হলো—মিনাটিলা, শ্রীপুর এবং নোয়াকোট।
মোট ৬৮ জনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলার আওতাধীন মিনাটিলা ও শ্রীপুর বিওপি এলাকা থেকে ৫২ জন এবং সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপি এলাকা থেকে ১৬ জনকে আটক করা হয়।
মিনাটিলা বিওপির ঝিংগাবাড়ি নামক স্থান থেকে ৬টি পরিবারের মোট ২০ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে পুরুষ ৬ জন, মহিলা ৭ জন এবং শিশু ৭ জন রয়েছে। সকলেই কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা।
শ্রীপুর বিওপির জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল সংলগ্ন এলাকা থেকে ৫টি পরিবারের ৩২ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে পুরুষ ৭ জন, মহিলা ১০ জন এবং শিশু ১৫ জন। এদের মধ্যে কুড়িগ্রামের ১৯ জন, যশোরের ৯ জন এবং বাগেরহাটের ৪ জন।
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ জেলার নোয়াকোট বিওপির ছনবাড়ি নামক স্থান থেকে ৫টি পরিবারের ১৬ জনকে আটক করা হয়, যাদের মধ্যে পুরুষ ৫ জন, মহিলা ৫ জন এবং শিশু ৬ জন রয়েছে। তারা সবাই কুড়িগ্রাম জেলার অধিবাসী।
আটককৃতদের পরিসংখ্যান
এই ৬৮ জনের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ, ২২ জন মহিলা এবং ২৮ জন শিশু রয়েছে। জেলাভিত্তিক হিসেবে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ৫৫ জন, যশোর জেলার ৯ জন এবং বাগেরহাট জেলার ৪ জন এই পুশ ইনকৃতদের মধ্যে রয়েছেন।
বিজিবি অধিনায়কের বক্তব্য
বিজিবি সিলেট ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ নাজমুল হক এই বিষয়ে বলেন—
“সীমান্ত রক্ষা শুধু দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের জাতির প্রতি অঙ্গীকার। আজকের ঘটনাতেও আমরা সময়মতো প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ৬৮ জন অনুপ্রবেশকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বিজিবির প্রতিটি সদস্য সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করছে।
আমরা আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের থানায় হস্তান্তর করছি। পাশাপাশি আমরা মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও কাজ করি। নারী ও শিশুসহ প্রতিটি মানুষের নিরাপত্তা ও সম্মান নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব।
আমি দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি—সীমান্ত এলাকায় কোনো সন্দেহজনক চলাচল চোখে পড়লে দ্রুত বিজিবিকে জানান। আমরা সবসময়ই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত।”
“আমরা দায়িত্ব পালন করি সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে। একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক সীমান্ত নিশ্চিত করাই আমাদের অঙ্গীকার। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি—মানবিকতা এবং নিরাপত্তা একসঙ্গে বজায় রেখেই দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব। আমাদের প্রতিটি সদস্য সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।”
— লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ নাজমুল হক, অধিনায়ক, ৪৮ বিজিবি, সিলেট ব্যাটালিয়ন
বর্তমান অবস্থা
আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এবং বিজিবি সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে সীমান্তে নজরদারি আরও জোরদার করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।