আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার ফলে ৬৭ জন পরীক্ষার্থী একসঙ্গে প্রথম হয়েছেন। ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা থাকলে প্রথমে এই পরীক্ষায় পাস করতে হয়। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার পরই ছাত্র-ছাত্রীরা এই পরীক্ষায় বসার সুযোগ পান। কীভাবে তারা একসঙ্গে প্রথম হলেন তা তুলে ধরেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।
ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্টকে সংক্ষেপে নিট বলা হয়। জাতীয় টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) প্রতিবছর দেশজুড়ে পরীক্ষার আয়োজন করে নিট। এই পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে দেশের প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
চলতি বছরের নিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে ৪ জুন।
নিটের ফল প্রকাশের পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এবার পরীক্ষায় বড়সড় দুর্নীতি হয়েছে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে মনে করছেন অনেকে।
কিসের ভিত্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হচ্ছে? এ ধরনের সর্বভারতীয় পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস কি সম্ভব? নিটের ফলে প্রথম অসঙ্গতি র্যাংক বিভাজন নিয়ে।
এবারের পরীক্ষায় মোট ৬৭ জন প্রথম হয়েছেন। যা এই পরীক্ষার ইতিহাসে প্রথম।
একসঙ্গে ৬৭ জন প্রথম হওয়ায় শুরুতেই খটকা লাগে। এর আগে পর্যন্ত নিটে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন সর্বোচ্চ চার জন। শুধু প্রথম স্থান অধিকার করাই নয়, এই ৬৭ জনেরই প্রাপ্ত নম্বর ৭২০-র মধ্যে ৭২০।
অর্থাৎ তারা ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। একটি প্রশ্নের উত্তরও ভুল করেননি তারা।
তর্কের খাতিরে মেনেও নেওয়া যায়, ৬৭ জনই নির্ভুল উত্তর লিখেছেন। তাই প্রথম হয়েছেন। তার পরেও প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীদের প্রাপ্ত নম্বর আরও বড় প্রশ্ন তুলেছে।
এবারের নিটে কেউ কেউ ৭১৮ ও ৭১৯ নম্বরও পেয়েছেন। নিটের নম্বর দেওয়ার নিয়ম অনুযায়ী যা সম্ভব নয়। তবে কি নিয়মবহির্ভূতভাবে ওই ছাত্রছাত্রীদের নম্বর দেওয়া হয়েছে?
নিটে মোট ১৮০টি প্রশ্ন থাকে। প্রতি প্রশ্নের সঠিক উত্তরে ৪ নম্বর করে পেয়ে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। একটি প্রশ্ন ভুল হলে ওই চার নম্বর কাটা যায়। সেই সঙ্গে বাড়তি এক নম্বরও হারান পরীক্ষার্থীরা।
কেউ ১৮০টি প্রশ্নের উত্তর ঠিক লিখলে ৭২০ নম্বর পাবেন। আবার, ১৭৯টি ঠিক উত্তর লিখে এবং একটি প্রশ্নের উত্তর ছেড়ে দিলে পাবেন ৭১৬ নম্বর। কেউ যদি ১৭৯টি ঠিক লিখে একটি প্রশ্নের উত্তর ভুল লেখেন, সে ক্ষেত্রে তার ৭১৫ নম্বর পাওয়ার কথা।
এই হিসাব অনুযায়ী, নিটের খাতায় কারো ৭১৯ কিংবা ৭১৮ পাওয়ার কথাই নয়। ৭২০-র পরবর্তী সর্বোচ্চ নম্বর হতে পারে ৭১৬। এখানেই ৭১৮, ৭১৯ নম্বর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা।
এ প্রসঙ্গে এনটিএর যুক্তি, কয়েকজন পরীক্ষার্থী পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে দেরি করেছিলেন। তারা অপেক্ষাকৃত কম সময় পেয়েছেন। তাই তাদের বাড়তি কিছু নম্বর দেওয়া হয়েছে। এনটিএর এই অদ্ভুত যুক্তি মানতে নারাজ বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা।
গত ৫ মে দেশের ৫৭১টি শহরে নিট পরীক্ষা হয়েছিল। দেশের বাইরেও ১৪টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সারা দেশে ৭০০-র বেশি মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠানে এক লাখের বেশি শূন্যপদ পূরণের জন্য এই পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
নিটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, যে ৬৭ জন ৭২০ নম্বর পেয়েছেন, তাদের মধ্যে আটজন একই পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়েছেন। একে নিছক কাকতালীয় ঘটনা বলতে নারাজ বিক্ষুব্ধরা।
প্রশ্ন উঠেছে, নিটের ফল প্রকাশের দিন নিয়েও। কারণ এই ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা ছিল আগামী ১৪ জুন। কেন তড়িঘড়ি নির্ধারিত সময়ের ১০ দিন আগে ফল প্রকাশ করা হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিক্ষুব্ধদের দাবি, কারচুপি ও দুর্নীতি করা হয়েছে। তা ধামাচাপা দিতেই ১০ দিন আগে ভোটের ফল প্রকাশের দিন এই ফলও প্রকাশ করা হয়েছে। যাতে ভোটের ফলের দিকেই সবার নজর থাকে। নিটের ফল নজর এড়িয়ে যায়।
এই দুর্নীতির অভিযোগ করে ইতিমধ্যে সরব হয়েছে কংগ্রেসসহ একাধিক বিরোধী দল। আদালতে মামলাও করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করছেন মামলাকারীরা। এমনকি বিহার থেকে গত ১২ মে নিটের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এনটিএ অবশ্য দুর্নীতির যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষাকেন্দ্রের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বাইরের কেউ আর ভিতরে প্রবেশ করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
নিটের ফল নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন তুলেছেন ছাত্রছাত্রীরা। এই পরীক্ষা বাতিল করে আবার নতুন করে পরীক্ষার আয়োজনের দাবি জানাচ্ছেন।
নিটের ফলপ্রকাশের পরই এ নিয়ে মোদির সরকারকে একহাত নিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘নতুন সরকার শপথ নেওয়ার আগেই ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষায় দুর্নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। ২৪ লাখ ছাত্রছাত্রী বিপদে পড়েছেন। কিছু পরীক্ষার্থী এমন নম্বর পেয়েছেন, যা সাধারণ হিসাবের বাইরে। এই সরকার ক্রমাগত দুর্নীতির দায় অস্বীকার করে চলেছে। শেষ পর্যন্ত নিটের জল কত দূর গড়ায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।