জুমবাংলা ডেস্ক : প্রবল বর্ষণ ও উজানের ঢলে নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। জেলার ৮টি উপজেলার নিচু এলাকাগুলো ৭ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে খাদ্য সংকটে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বন্যায় এ পর্যন্ত জেলায় পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৬ আগস্ট) বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। প্রতিটি বাড়ি ৩ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে। নিচু এলাকাগুলো ডুবেছে ৬ থেকে ৭ ফুট পানিতে। বসতঘরে পানি প্রবেশ করায় বাসিন্দারা কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এলাকার সবগুলো প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্যার্তদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে।
বসত ও রান্নাঘরে পানি ঢুকে পড়ায় খাবার সংকটে রয়েছে বেশির ভাগ মানুষ। জেলার প্রধান সড়কসহ প্রায় ৮০ ভাগ সড়ক কয়েক ফুট পানিতে নিমজ্জিত। বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কগুলোয় যান চলাচল অনেকটাই কম।
এদিকে সোমবার ভোরে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ২৩ ভেন্ট রেগুলেটরটি সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে। এতে সাগর থেকে লোকালয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হওয়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘রোববার গভীর রাতে রেগুলেটরে ফাটল ধরে। আজ ভোররাতে এটি মাঝ বরাবর দেবে গিয়ে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এতে আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বন্যা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহার এবং ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূইয়া উপজেলার মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী জানান, রেগুলেটরের আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যার পানি এক থেকে দেড় ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমিল্লা বেগমগঞ্জ-সোনাপুর আঞ্চলিক ফোরলেন সড়কে ও ঢাকা-নোয়াখালী রেললাইনে পানি উঠছে। এছাড়া কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর রেগুলেটর ধসে যাওয়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
নোয়াখালীতে গত কয়েকদিনের ভয়াবহ বন্যায় জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা তলিয়ে গেছে। এরমধ্যে ৮৭ ইউনিয়ন ও ৭ পৌরসভার ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। জেলায় এক হাজার ৯৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে ১ লাখ ৮২ হাজার ৩০৯ জনকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
এ পর্যন্ত সরকারিভাবে নগদ ৪৫ লাখ টাকা, ৮৮২ মেট্রিক টন চাল ও ১ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনও ৯১৮ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় বন্যায় ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ৮৮টি মেডিকেল টিম বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছে।
জেলা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বন্যার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, মুহুরী নদীর উজানের পানি প্রবেশ করায় ফেনী জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী উপজেলার আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলায় গত দুদিন বৃষ্টি না হলেও উজানের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি ও সড়ক তলিয়ে গেছে। স্কুলে ঢুকে পড়েছে পানি। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
এ বিষয়ে কবিরহাটের বাসিন্দা মোহাম্মদ সালাম জানান, বন্যা ও ভারিবর্ষণের কারণে কবিরহাটের সব রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে বন্ধ রয়েছে। এদিকে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজ করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কর্মহীনদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে সরকার ও বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী মুন্সী আমির ফয়সাল বলেন, ‘রেগুলেটর ধসে গেলেও বন্যার পানি নিষ্কাশনে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। তবে প্রতিদিনকার ৪ থেকে ৫ ফুট উচ্চতার জোয়ার আসলে আগে এ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করতে পারতো না, এখন তা লোকালয়ে প্রবেশ করবে।’
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এ মুহূর্তে বন্যা পরিস্থিতি আমি সরেজমিন পরিদর্শনে আছি। আমরা চেষ্টা করছি দুর্গত মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পৌঁছে দেয়ার জন্য। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং টিম রেগুলেটর এলাকায় কাজ করছে।’
এদিকে বন্যায় বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গত তিনদিনে নোয়াখালীতে ৬৩ জনকে সাপে কেটেছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সাপে কেটেছে ২৮ জনকে। বন্যার কারণে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০৮ জন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আব্দুল আজিম জানান, মেডিকেল টিম ছাড়াও হাসপাতালে সার্বিক চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।