জুমবাংলা ডেস্ক : অ্যান্থনি আকাশ গোমেজ। ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারানোর পর একমাত্র ছোট বোনসহ তার ঠাঁই হয়েছিল মামা-ফুফু আর খালাদের বাড়িতে। এরপর থেকে তাদের কাছেই মানুষ। পড়াশোনা শেষ করে রাজধানীতে বেসরকারি একটি চাকরিতেও যোগ দিয়েছিলেন।
সবকিছু ভালোই চলছিল, তবে সম্প্রতি অফিস থেকে ৭ লাখ টাকা চুরির অপবাদ দেয়া হয় আকাশকে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়লে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন আকাশ। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে আকাশকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
মারা যাওয়ার আগে একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন আকাশ। যেখানে ফুফুদের জানিয়ে গেছেন, যে অফিসে চাকরি করতেন সেখান থেকে তাকে ৭ লাখ টাকা চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি চুরি করেনি। মিথ্যা অপবাদে তাকে অপমানিত করা হয়েছে। লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
আকাশের গ্রামের বাড়ি নবাবগঞ্জের মোহাব্বতপুরে। রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ থেকে বিবিএ শেষ করে জীবিকার তাগিদে ফার্মগেটের রাজাবাজার এলাকায় থেকে বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি।
আকাশের মামা জেমস গোমেজ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিশাল গোমেজ জানান, বাবা-মাকে হারানোর কিছুদিন পর আকাশের ছোট বোনও মারা যায়। তারপর থেকে ছোট ফুফুকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করতো। গত বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আকাশকে তার কোম্পানি থেকে একটি বিশেষ মিটিংয়ে ডাকা হয়। অফিসের অ্যাকাউন্টস বিভাগে কাজ করায় সেদিনের মিটিংয়ে ৭ লাখ টাকা চুরির দায় চাপানো হয় তার ঘাড়ে। সেই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন ও মানিব্যাগসহ সবকিছু রেখে দেয় অফিস কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনার পর অপমান সইতে না পেরে বাসায় এসে জীবাণুনাশকের সঙ্গে গুড়ো মরিচ মিশিয়ে খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আকাশ। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালের এ ঘটনার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বাড়িওয়ালা আকাশের রুমের দরজায় নক করেন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় দরজা খুলে দেন আকাশ। একপর্যায়ে দ্রুত তাকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সেখানকার চিকিৎসকেরা আকাশকে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলেন। এরপর সেখানে থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয় আকাশকে। তবে বাঁচানো যায়নি, রক্তবমি করতে থেকে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় মারা যান।
আকাশের চাচাতো ভাই ম্যানুয়েল ভিকি গোমেজ জানিয়েছেন, আকাশ টাস গ্রুপ, এসএমএসএ এক্সপ্রেস ফ্রাঞ্চাইজিস (TAS group, SMSA Express) নামের বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। সেখানে অ্যাকাউন্স বিভাগের দায়িত্ব সামলাতেন। তবে তার সঙ্গে কখনো কারও বিবাদ হয়নি। টাকা চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নেন তিনি।
মৃত্যুর আগে মা সম্বোধন করা ফুফুর উদ্দেশে লিখে যাওয়া চিরকুটে আকাশ লিখেছেন, ‘মা আমি চলে যাইতেছি। আমার এই চলে যাওয়া নিয়ে তুমি রাগ করো না। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। মা মারা যাওয়ার পর থেকে তোমার কাছ থেকে অনেক আদর পেয়েছি। বিশ্বাস করো মা আমি একটি ঢাকাও চুরি করিনি। আর কেউ জানুক আর না জানুক তুমি তো জানো আমি কেমন।’
জনপ্রিয় এক নায়কের সঙ্গে বিছানায় শুতে বলা হয়েছিল, দাবি এই নায়িকার
চিরকুটে আকাশ আরও লিখেছেন, ‘আমি অনেক অপমান সহ্য করছি। অনেক কষ্ট সহ্য করছি কিন্তু বলতে পারিনি। আমাকে পুলিশ কাছে ধরিয়ে দিবে। এই হিসাব ঠিক হবে ঠিকই, কিন্তু আমার সম্মান কোনোদিন ঠিক হবে না। আমি আর কোনোদিন উঠে দাড়াতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার ভুল-ক্রুটি মাফ করে দিও। অনেক কথা কলতে ইচ্ছে করছে মা, কিন্তু অফিসে আমার ফোন সবকিছু রেখে দিয়েছে। তুমি ভালো থাক। আমার এই মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না, কেউ না- ইতি তোমার আকাশ।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।