হার্টের একটি ছিদ্র নিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে এক বছর বয়সী ছোট্ট অয়ন। দিনাজপুরের হিলি পৌর শহরের ধরন্দা গ্রামের আলী হোসেন অন্তর ও আঁখি মনি দম্পতির সন্তান সে।
অর্থের অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে না পেরে দিশেহারা বাবা-মা। চিকিৎসকরা বলেছেন, দ্রুত অস্ত্রপচার করলে হয়তো বেঁচে যেতে পারেন কোমলমতি এই শিশুটির জীবন।
অন্তর-আঁখি দম্পতি দুজনেই শিক্ষার্থী। এক বছর আগে তাদের কোল জুড়ে আসে শিশু অয়ন। জন্মের পরই বুকে ব্যাথা এবং নিউমোনিয়া ছিল। জন্মের তিন মাসের মাথায় বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষার পর ধরা পড়ে শিশু অয়নের হার্টে একটি বড় ছিদ্র রয়েছে।
সন্তানের চিকিৎসায় সহায়-সম্বল যা ছিল সবই শেষ হয়ে গেছে। সঠিক চিকিৎসা দিতে না পারায় দিন দিন শিশুটি মৃতুর কোলে ঢেলে পড়ছে। হার্টে ছিদ্রের আকার ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করছে।
চিকিৎসকরা বলেছেন, দ্রুত হার্টের অপারেশন করতে হবে। অপারেশন করতে ব্যয় হবে প্রায় সাত লাখ টাকা। অথচ আজ এই দম্পতি একেবারেই নিঃস্ব। সন্তানের জীবন বাঁচাতে অন্যের কাছে হাত পাতা ছাড়া আর কিছুই করার নেই।
যে বয়সে শিশু অয়ন বাবা-মায়ের কোলে হেসে খেলে বেড়ে উঠবে- সেই বয়সে মৃত্যুর হাতছানি দেখতে হচ্ছে শিশুটির। মৃত্যু কী সেটা বোঝে না শিশুটি, এটুকু বোঝে বুকে তার বেজায় যন্ত্রণা। সেই যন্ত্রণার কারণে সারাক্ষণ কান্না করে শিশুটি। কোন কিছু খেতে দিলে খেতে পারে না। কোনো খাবার খেলেই খাবার বমি হয়ে যায়। অর্থের অভাবে বন্ধ রয়েছে শিশুটির চিকিৎসা।
এলাকাবাসী মনির হোসেন বলেন, “এক বছর বয়সী বাচ্চাটাকে নিয়ে খুবই বিপদে আছে পরিবারটি। বাচ্চাটার হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছে। প্রথম থেকে শিশুটির অনেক চিকিৎসা করেছে। তবে দিন দিন শিশুটির অবস্থা খারাপ হচ্ছে। অর্থের অভাবে ভাল চিকিৎসা করতে পারছে না অন্তর। আমরা যতদূর পারছি সহযোগিতা করছি। তবে শিশুটির চিকিৎসায় অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই দেশবাসীর কাছে আবেদন জানাই- এগিয়ে আসুন, ফুটফুটে এই শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য আপনার সহৃদয় হাত বাড়িয়ে দিন।”
শিশু অয়নের ফুফু মুক্তা বেগম বলেন, “আমার ছোট ভাইয়ের ছেলের হার্টে ছিদ্র দেখা দিয়েছে। তাদের প্রথম সন্তান, অনেক আশা এবং স্বপ্ন বাচ্চাটাকে নিয়ে। দিন যত যাচ্ছে, বাচ্চাটার অবস্থা খারাপ হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে অনেক টাকা লাগবে, এত টাকা আমার ভাই কোথায় পাবে? জানি না আল্লাহপাক কী করবেন?”
অয়নের বাবা-মা অন্তর ও আঁখি বলেন, “আমাদের কোলে ফুল ফুটতে না ফুটতেই তা ঝরে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অয়ন আমাদের অনেক আদরের সন্তান। জন্মের পর থেকেই অসুস্থ সন্তানকে বাঁচাতে দিনাজপুর, রংপুর, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েছি। আমাদের যা সম্পদ ছিল, তা শেষ হয়ে গেছে। এখন আমরা নিঃস্ব। তবুও ছেলের অসুখ ভাল করতে পারলাম না। হার্টের ছিদ্র অনেক বড় আকার ধারণ করেছে। ডাক্তার বলেছেন, দ্রুত হার্ট অপারেশন করতে হবে। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে পারছি। আজ আমরা নিরুপায়, এমন কেউ কি আছেন, আমার অবুঝ সন্তানের পাশে দাঁড়ানোর?”
এ বিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, “ধরন্দা গ্রামের একটি শিশুর হার্টে ছিদ্র ধরা পড়েছে। বিষয়টি জেনেছি। শিশুটির বাবা-মা অফিসে এসেছিলেন। আমি তাদের সরকারি অনুদানের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে বলেছি। আবেদন করলে সরকারিভাবে ৫০ হাজার টাকা পাবে শিশুটি।”
কোনো বাবা-মা চান না তাদের আদরের সন্তান পৃথিবী ছেড়ে চলে যাক। ছোট্ট ফুলের মতো আদরের এই সন্তান হারিয়ে গেলে কীভাবে বাঁচবেন তার বাবা-মা? তার চিকিৎসার জন্য প্রায় সাত লাখ টাকা আমাদের সমাজের অনেকের কাছেই অতি সামান্য। সেই সামান্য টাকায় যদি একটি জীবন বেঁচে যায় এর চেয়ে মহৎ আর কী হতে পারে? কেউ কি সত্যিই নেই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর মতো? বাবা-মায়ের মুখের হাসি কেউ কী ফিরিয়ে দিতে পারার মতো মনোভাব কি আমরা হারিয়ে ফেলেছি? আমরা যদি সবাইমিলে শিশুটির পাশে দাঁড়াই, তাহলে হয়তো একটি প্রাণ বাঁচবে সহজেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।