লাইফস্টাইল ডেস্ক : পরীক্ষার আগে বা অফিসে কোনো ডেডলাইন থাকলে রাত জেগে অথবা ভোরে উঠে পড়াশোনা করার সময় কি ঘুমটাই না পায়! অথচ অনেক সময় ছুটির দিনে সেই কাক ভোরে ঘুম ভেঙে যায় আপনা থেকেই। আসলে আমরা যত বেশি স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনুভব করি, এমন সময়ে তত বেশি ঘুম পায়। কাজ করতে করতে ঝিমুনি চলে আসে। বইয়ের ওপর মাথা দিয়ে অজান্তেই ঘুমিয়ে যাই আমরা। কিন্তু মাঝেমধ্যে জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় আসে, যখন ঘুম পেলেই ঘুমিয়ে পড়া যায় না। আর লম্বা সময় ধরে পড়াশোনা বা কাজ করতে একঘেয়ে লাগে খুব। এমন নিশুতি রাত বা কাকডাকা ভোরে ঘুমকে পরাস্ত করে জেগে থাকার কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক এবারে।
১। বারবার বিরতি নেওয়া
এমন সময় একমনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘুম ঘুম চোখে বইয়ের পাতায় বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ হবে না। কাজ তো হবেই না, অন্যান্য শারীরিক অস্বস্তি দেখা দেবে। তাই এ রকম সময় কাজ করতে করতে দ্রুত একটু পায়চারি করে আসতে হবে। একটা পছন্দের গান শোনা যায়। দু–তিন মিনিট ব্রিদিং এক্সারসাইজ করলেই বা ক্ষতি কী। দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিংও করতে পারেন। এ রকম বিরতিগুলো অবশ্যই ছোট হতে হবে। এক ঘণ্টা পরপর দশ মিনিট ব্রেক নিলেই যথেষ্ট। এতে ঘুম পাবে না, ভুলও কম হবে পড়ায় বা কাজে।
২। ক্যাফেইন গ্রহণ
টম অ্যান্ড জেরি কার্টুনে জেগে থাকার জন্য টম বেচারা একের পর এক কাপ কফি পান করে যাচ্ছিল, যতক্ষণ না তার পেট ঢোল হয়ে যায়। আমাদের অবস্থাও মাঝেমধ্যে তেমনই হয় রাত জাগার সময়। বৈজ্ঞানিকভাবেই প্রমাণিত, ক্যাফেইন আমাদের ঝিমুনি কাটিয়ে চনমনে অনুভব দিতে পারে। তখন কাজে ফোকাস করা সহজ হয়। তবে প্রাপ্তবয়স্ক হলে দিনে পাঁচ কাপ আর কৈশোর না পার হলে শরীরের ওজনের প্রতি কেজির জন্য আড়াই মিলিগ্রামের বেশি না গ্রহণ করলেই ভালো ক্যাফেইন। এ সময় পান করা যায় কফি, চা, হট চকলেট আর কোলাজাতীয় সোডা পানীয়। কিন্তু চটকদার বিজ্ঞাপনে ভুলে গিয়ে কম বয়সীদের কখনো বাজারের হাই ডোজের ক্যাফেইনযুক্ত এনার্জি ড্রিংক পান করা উচিত নয়।
৩। কাজে বৈচিত্র্য আনা
সারাক্ষণ একই কাজ করলে ঘুম ঘুম ভাব আরও জেঁকে বসবে। বড় একটি কাজ বা পড়ার পুরো পাঠটিকে ভেঙে কিছু অংশে বিভক্ত করে নিতে হবে৷ এভাবে ধাপে ধাপে ভাগ করে নিলে আর এত একঘেয়ে লাগবে না কাজ করতে। পড়ার বেলায় বিভিন্ন বিষয় অল্প অল্প করে পড়ে বেশি কাজে দেবে এমন সময়। অন্য কাজের বেলায়ও তাই করতে হবে। কাজের ফোকাস এভাবে বারবার বদলাতে পারলে আর অবচেতনে ঘুমের কোলে ঢলে পড়তে হবে না।
৪। একটু আলো বাতাসের স্থানে যাওয়া
ঘরের এক কোণে টেবিলে মুখ গুঁজে কাজ করতে করতে শরীর ও মনে ক্লান্তি আসে এমনিতেই। এমন সময় জানালায় গিয়ে দাঁড়ান একটু। রাতের তারা বা ভোরের উষার লালিমা উপভোগ করুন। ছাদেও যেতে পারেন বা সুযোগ থাকলে বাইরে। তরতাজা বাতাসটুকু অনুভূতি দিয়ে আকণ্ঠ পান করুন। আবার ২০২২ সালের এক নির্ভরযোগ্য গবেষণা বলে, ৪০০ কিলোওয়াট তাপ নিয়ন্ত্রিত আলোয় কাজের স্ট্রেস কমে যায়। সাদা ফ্লুরোসেন্ট লাইটে বাড়ে বরং স্ট্রেস। ডেলাইট লেখা এনার্জি বালব ব্যবহার করলে ভালো। সব সময় লাইটিং নিজের ইচ্ছামতো করা সম্ভব নয়। তাই দিন হলে বাইরে বেরিয়ে একটু প্রাকৃতিক সূর্যালোকে থেকে আসা যায়।
৫। ছোট একটা পাওয়ার ন্যাপ নেওয়া
কাঁটা দিয়েই কাঁটা তুলতে হয়। ২০১৬ সালের এক গবেষণা বলে, ছোট পাওয়ার ন্যাপ যেকোনো কিছু আত্মস্থ ও মুখস্থ করার শক্তি বাড়ায়। ঠিকঠাক ঘুমালেও দিনের মাঝে লম্বা সময় ধরে কাজ করতে গেলে ক্লান্তি আসে। তখন এমন ছোট একটা ঘুম দিয়ে উঠতে হবে। তবে তা যেন ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি না হয়। আমরা যেমন দুপুরে পেট ঠুসে খেয়ে ভাতঘুম দিই, তাতে আরও বাড়ে ক্লান্তি কাজ করতে বসলে এর পরে৷
৬। শক্তিদায়ক স্ন্যাক খাওয়া
ঘুমানোর উপায় নেই, ক্যাফেইন পান করা হয়ে গেছে বেশ কয়েকবার। এমন সময় শরীরে শক্তির মিটারের পারদ নামতে থাকে। এ সময় আর একটি উপায়ই বাকি থাকে। তা হলো একই সঙ্গে সুস্বাদু আর স্বাস্থ্যকর হালকা কিছু খাওয়া। অনেকক্ষণ কিছু না খেলে কাজ করতে গেলেই ঘুম পায়। আর তা হয় বৈজ্ঞানিক কারণেই। দুই ঘণ্টা পর পর কিছু একটা খেলে এমন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। তবে সেই স্ন্যাক যেন জাংক ফুড না হয়। অতিরিক্ত চিনি, লবণ বা তেলযুক্ত খাবার আখেরে আরও বাড়াবে ক্লান্তি।
৭। কাজের মধ্যেই সচল থাকা
লম্বা সময় ধরে ডেস্কে বসে থাকা ক্লান্তি আনবেই। আর এমন সময় ঘিরে ধরে ঘুম ঘুম ভাব। বিরক্তি, হতাশা আর শ্রান্তির অনুভব আসে একে একে। এরপর পায় শুধু ঘুম। এমন অবস্থা এড়াতে একটু সচল থাকা দরকার। কাজের মধ্যেই স্ট্রেচিং করা যায়, ফ্রি হ্যান্ডও। আবার ইয়োগাও খুব কার্যকর এ ক্ষেত্রে। ভালো লাগার অনুভূতি দেয় এমন হরমোন নিঃসরণে সাহায্য করে নিয়মিত ব্যায়াম। তখন এমনিতেই এনার্জি লেভেল ভালো থাকে বলে সহজেই এ রকম ঘুম পায় না।
সূত্র: হার্ভার্ড হেলথ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।