জুমবাংলা ডেস্ক : গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় ১২ বছরের শিশু জিহাদ মাহমুদ মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে গত সাত বছর ধরে শিকলে বন্দি করে রেখেছেন তার মা-বাবা। টাকার অভাবে জিহাদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না পরিবার। জিহাদ মাহমুদ স্থানীয় চাপাইর ইউনিয়নের বড়কাঞ্চনপুর টেকিবাড়ি এলাকার মুদি দোকানদার ফজলুর রহমানের ছেলে। জিহাদ বাক প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে কালিয়াকৈর-ফুলবাড়িয়া সড়কের পাশে বড়কাঞ্চানপুর টেকিবাড়ি বাজার। ওই বাজার থেকে পূর্ব দিকে মুদি দোকানদার ফজলুর রহমানের বাড়ি। বাড়িতে এক ঘরের বারান্দায় খুটির সঙ্গে হাতে শিকলে বাঁধা বাক প্রতিবন্ধী ও মানসিক ভারসাম্যহীন শিশু জিহাদ। পাশে বসেই তাকে খাবার খাওয়াচ্ছেন তার মা জিয়াসমিন বেগম। মানুষ দেখলেই শিকল মুক্ত হওয়ার জন্য জিহাদ শিকল ধরে টানাটানি করে।
জিহাদের পরিবার ও স্থানীয়ারা জানায়, জিহাদ জন্মের পর থেকেই কথা বলতে পারে না। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলে বোঝা যায় সে মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝে মধ্যে উত্তেজিত হয়ে উঠতো। বাড়ি ঘরের এবং আশপাশের মানুষের বাড়িতে গিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করতে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ তাকে খোজে পাওয়া যায় না। কোথায় কোথায় যেন চলে যায়। মাঝে মধ্যেই তাকে খোঁজে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে। সবসময় চোখে চোখে রাখাও কঠিন। তাই গত সাত বছর ধরে তার পায়ে শিকল বেধে ঘরের একটি খুটির সঙ্গে বেধে রাখা হয়। ইচ্ছে করলে সে ঘরের বারান্দায় শুয়ে থাকতে পারে।
জিহাদের মা জিয়াসমিন বেগম বলেন, ছেলেটা আমারে মা আর বাবারে বাবা বলে ডাকতে পারে। আর কিছুই বলতে পারে না। একটা ছেলে যখন প্রতিবন্ধি হয়ে জন্ম নেয় তখন মা-বাবার মনটা কেমন হয় একবার ভেবে দেখেন। ছেলেটা হঠাৎ করেই কোনো একদিকে চলে যায়। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তাকে খুজে আনতে হতো। অথবা মানুষজন তাকে দেখে বাসায় দিয়ে যেতো। কিন্তু একেবারে যদি হারিয়ে যায় তখন কি হবে? ছেলে যেমনই থাকুক ওকে হারাতে চাইনা। তাই একটা শিকল দিয়ে ঘরের বারান্দার খুটির সঙ্গে আটকিয়ে রাখি। যাতে কোথাও চলে যেতে না পারে।
বাবা ফজলুর রহমান বলেন, রাতের বেলায় আমাদের সাথেই সে ঘুমায়। তখন শিকল দিয়ে বাধা থাকে না। মাঝে মধ্যেই মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে ঘরে ভাংচুর করে সব লণ্ডভণ্ড করে রাখে। জিহাদকে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। তারা বলেছে, দীর্ঘ মেয়াদি চিকিৎসা করালে জিহাদ ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এর জন্য অনেক টাকারও প্রয়োজন। সেই টাকা আমাদের নেই। কিন্তু ছেলেটারে দেখলে বুকটা ফেটে যায়। যেভাবে পারি ওকে সুস্থ্য করতে চাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, জিহাদের পিতা মুদি দোকানদার ফজলুর রহমান তার বাবা মারফত আলীকে হারান অনেক বছর আগেই। বর্তমানে তিনি ও তার স্ত্রী জিয়াসমিন, বৃদ্ধা মা ফিরোজা বেগম (৭০), বড় ছেলে জিসান মাহমুদ ও জিহাদ মাহমুদকে নিয়েই তাদের পরিবার। বাবা মারফত আলীর কোন সম্পত্তি ছিল না। ফলে মায়ের পৈত্তিক সূত্রে পাওয়া অল্প একটু জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে তারা পাঁচজন কোন রকমে খেয়ে-পড়ে দিন অতিবাহিত করছেন। একদিকে অর্থ সংকটে থেমে গেছে জিহাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অপরদিকে কোন রকমে খুড়িয়ে চলছে তাদের পাঁচজনের সংসার। এ অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে পরিবারটি। মানসিক ভারসাম্যহীন ও বাক প্রতিবন্ধি জিহাদের চিকিৎসা করাতে না পেরে পরিবারটি খুবই অসাহায়ের মধ্যে আছে।
কালিয়াকৈর উপজেলার চাপাইর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান সেতু বলেন, জিহাদের পরিবারটি খুবই অসহায়। মাঝে মধ্যেই আমি তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়ে থাকি। তারা আরও ভালো কিভাবে চলতে পারে সে বিষয়ে দেখা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।