জুমবাংলা ডেস্ক : প্রতিদিনের একঘেয়ে জীবন আর কর্মব্যস্ত সময়কে ছুটি দিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ থেকে।
ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক শোভার এক অনন্য মিশেল ছড়িয়ে আছে পুরো জেলায়। চলুন জেনে নিই নারায়ণগঞ্জের যেসব জায়গায় ঘুরতে যাওয়া যেতে পারে।
পানাম নগর
পানাম নগরে পা রাখলেই মনে হবে আপনি চলে এসেছেন সুদূর অতীতের কোনো সময়ে। যে সময়টাতে রাজা ছিল, রাণী ছিল, মন্ত্রী ছিল আর ছিল রাজার বিশাল সাম্রাজ্য।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত পানাম ছিল বাংলার প্রাচীনতম শহর। ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে নগরটি বিস্তৃত।
পানাম নগরীর দুই পাশে আছে ঔপনিবেশিক আমলের মোট ৫২টি স্থাপনা। ভবনগুলোর কোনোটির জানালা ভাঙা, কোনোটির ইট-পলেস্তারা খসে পড়েছে, কোনোটি আবার প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের অংশ হিসেবে।
পানাম নগর
জরাজীর্ণ হলেও ভবনগুলোর দিকে তাকালে রুচি আর আভিজাত্যের ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। এখানে গেলে ৪০০ বছরের পুরনো টাকশাল বাড়ি ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তৈরি নীলকুঠি দেখতে পাওয়া যায়।
রোববার সারাদিন এবং সোমবার একবেলা বন্ধ থাকে পানাম সিটি। খোলা থাকে সপ্তাহের অন্যান্য দিন ছাড়াও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে। প্রবেশ করতে ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে নিতে হয়।
ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার অথবা মাইক্রোবাস নিয়ে সরাসরি পানাম নগর যাওয়া যায়। আর বাসে যেতে চাইলে গুলিস্তান থেকে বাসে উঠে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ মোগড়াপাড়া চৌরাস্তায় নামতে হয়।
গুলিস্তান থেকে এসি বাসের ভাড়া ৬০-৭০ টাকা এবং নন-এসি দোয়েল, স্বদেশ বাসগুলোতে ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। মোগড়াপাড়া থেকে অটোরিকশায় জনপ্রতি ১০-২০ টাকা দিয়ে পানাম নগর যাওয়া যায়।
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার পূর্বদিকে সোনারগাঁও। আবহমান গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকশিল্পকে ধরে রাখতে ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁওয়ের পানাম নগরীর একটি পুরোনো বাড়িতে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
এখানে রয়েছে সরদার বাড়ি, জয়নুল আবেদিনের ঐতিহাসিক সংগ্রাম ভাস্কর্য, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের আবক্ষ ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিনের ভাস্কর্য, জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর, লোকজ মঞ্চ, কারুশিল্প গ্রাম। এছাড়াও জাদুঘরের বিভিন্ন গ্যালারিগুলোতে কাঠে বিভিন্ন কারুশিল্প, পটচিত্র, মুখোশ, আদিম জীবনভিত্তিক নিদর্শন, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, পোড়ামাটির ফলক, লোকজ অলংকারসহ প্রাচীন নিদর্শন দেখা যায়।
সোনারগাঁও লোকশিল্প জাদুঘর বন্ধ থাকে বৃহস্পতিবার। জাদুঘরে প্রবেশ করতে ৫০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে নিতে হবে। তবে সোনারগাঁও এর মূল ভবনে প্রবেশের টিকিট মূল্য ১০০ টাকা।
পানাম নগর থেকে সোনারগাঁওয়ের দূরত্ব খুব বেশি না। ১০-২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় অটোরিকশায় খুব সহজেই এখানে আসা যায়।
বাংলার তাজমহল
দিল্লির তাজমহল দেখার সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই, পরিস্থিতি এমন হলে বাংলার তাজমহল দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারে।
আগ্রার তাজমহলের প্রতিরূপে সোনারগাঁও উপজেলার পেরাব গ্রামে নির্মাণ করা হয়েছে বাংলার তাজমহল বা দ্বিতীয় তাজমহল। শিল্পপতি ও চলচ্চিত্রকার আহসান উল্লাহ মনি এটি নির্মাণ করেছেন।
তাজমহলের প্রধান ভবন নির্মাণ করা হয়েছে দামি স্বচ্ছ পাথরে। তাজমহলের ভেতরে আহসান উল্লাহ মনি এবং তার সহধর্মিণী রাজিয়ার কবর সংরক্ষণ করা হয়েছে।
আগ্রার তাজমহলের মতোই ভবনের সামনে আছে পানির ফোয়ারা, ফুলের বাগান এবং দর্শনার্থীদের বসার স্থান, মূল ভবনের ৪ কোণে নির্মিত হয়েছে ৪টি বড় মিনার।
পিরামিড
আগ্রায় গিয়ে হয়ত তাজমহল দেখা সম্ভব হবে। কিন্তু সুদূর মিশরে গিয়ে পিরামিড দেখার সৌভাগ্য কজনের হয়?
কিন্তু নারায়ণগঞ্জেই তাজমহলের কাছেই মিশরের পিরামিডের প্রতিরূপ নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে গেলে দর্শনার্থীরা একইসঙ্গে পৃথিবীর দুটি বিখ্যাত স্থানের আবহ কিছুটা হলেও পাবেন।
তবে, এখানকার পিরামিডে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য, ইন্দিরা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি ভাস্কর্য, ২৫০ আসন বিশিষ্ট সিনেমা হল ও সেমিনার কক্ষ।
এছাড়াও আসল পিরামিডের স্বাদ দিতে ভেতরে রাখা হয়েছে মমির প্রতিরূপ, রাজা-রাণীদের অলংকার, পোশাক, আসবাবপত্রের প্রতিরূপ।
দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে বাংলার তাজমহল। ভেতরে প্রবেশ করতে গুণতে হবে ১৫০ টাকা। তাজমহল ও পিরামিডে প্রবেশের মূল্য একসঙ্গে পরিশোধ করতে হয়। আলাদা প্রবেশের ব্যবস্থা নেই।
তাজমহল বা পিরামিড যেতে হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে কুমিল্লা বা সোনারগাঁগামী বাসে চড়ে প্রথমে মদনপুর বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় সহজেই তাজমহল ও পিরামিড দেখতে যাওয়া যায়।
এছাড়া রাজধানীর কুড়িলের ৩০০ ফিট রাস্তা দিয়ে ভুলতা গিয়ে, সেখান থেকে অটোরিকশা বা সিএনজিতেও তাজমহল যাওয়া যেতে পারে।
সোনাকান্দা দূর্গ
নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলায় শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বতীরে মুঘল আমলে নির্মিত সোনাকান্দা দূর্গ অবস্থিত। ধারণা করা হয়, এই জলদূর্গটি ১৬৫০ সালের দিকে তৎকালীন বাংলার সুবাদার মীর জুমলা নির্মাণ করেন।
ঢাকা শহরকে বহির্শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে সপ্তদশ শতকে ৩টি জলদূর্গ নির্মাণ করা হয়েছিল। সোনাকান্দা দূর্গ তার একটি। চারপাশে মজবুত উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা সোনাকান্দা দূর্গটি চতুর্ভুজাকৃতির।
একটি আয়তাকার তোরণ কাঠামোর মধ্যে এর প্রবেশদ্বার স্থাপন করা হয়েছে। দূর্গের দুটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো-বিশাল আয়তনের সুরক্ষা প্রাচীর এবং অন্যটি পশ্চিম দিকে জলদস্যুর আক্রমণ থেকে রক্ষাকারী উঁচু মঞ্চ। গোলা নিক্ষেপের জন্য প্রাচীরের মধ্যে আছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র।
মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি
ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদী রোডে অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি। এটির নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার অন্তর্গত।
১৮৮৯ সালে ৪০ হেক্টর জমিতে জমিদার রামরতন ব্যানার্জী জমিদার বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন। বিশালায়তনের এই বাড়িতে ১০০টির বেশি কক্ষ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি কক্ষেই পাওয়া যাবে নিখুঁত নির্মাণশৈলী আর কারুকার্যের ছোঁয়া।
কাচারি ঘর, বৈঠকখানা, অতিথিশালা, নাচঘর, পুজামণ্ডপ, ভাঁড়ারসহ বিভিন্ন অংশে ভাগ করা রয়েছে এই জমিদার বাড়ি। বর্তমানে মুড়াপাড়া ডিগ্রী কলেজ ভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে জমিদার বাড়ির মূল ভবনটি। তার পাশে ১৯৯৫ সালে আরও একটি প্রশাসনিক ভবন নির্মিত হয়।
মায়াদ্বীপ
মেঘনা নদীর বুকে এক টুকরো সবুজ হয়ে জেগে উঠেছে মায়াদ্বীপ। ত্রিভুজাকৃতির এই চরটি নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার বারদী ইউনিয়নে অবস্থিত।
আকারে কিছুটা ছোট হলেও খোলা প্রান্তরের মাঝে নদীর কলকল ধ্বনি আর মন শীতল করা ঠাণ্ডা বাতাস মনকে ভরিয়ে দেবে অকৃত্রিম আনন্দে।
এখানে যেতে হলেও আগের মতো মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা থেকে অটোরিকশা নিয়ে যেতে হবে বারদী বৈদ্যেরবাজারে। তারপর সেখান থেকে মেঘনা নদীর ঘাটে।
ঘাট থেকে ২০০-৩০০ টাকা ঘণ্টা কিংবা ১২০০-১৫০০ টাকায় সারাদিন চুক্তিতে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে মায়াদ্বীপে ঘুরতে যাওয়া যাবে। গাড়িতে করেও সেখানে পৌঁছানো যায়। মায়াদ্বীপ পৌঁছাতে ২০-২৫ মিনিট সময় লাগতে পারে।
জিন্দা পার্ক
মানুষের কোলাহল আর কর্মব্যস্ততা থেকে দূরে থাকতে পূর্বাচলের কাছে জিন্দা পার্ক সময় কাটানোর একটি সহজ গন্তব্য হতে পারে। রূপগঞ্জের দাউদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত এই পার্কটি প্রায় ১৫০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।
এখানে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির ১০ হাজারের বেশি গাছ ও ৫টি জলাধার। এছাড়া পার্কের ভেতর আছে মার্কেট, সুন্দর স্থাপত্যশৈলীর একটি লাইব্রেরি, ক্যান্টিন ও বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীতে পূর্ণ মিনি চিড়িয়াখানা।
পরিবার বা বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে পিকনিক কিংবা ডে আউট করতে চাইলে জিন্দা পার্ক হতে পারে প্রথম পছন্দ।
কুড়িল বিশ্বরোড পূর্বাচল হাইওয়ে (৩০০ ফিট রাস্তা) দিয়ে বিআরটিসি বাসে জিন্দা পার্ক যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে এটি খোলা থাকে।
টিকিটের দাম প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ১৫০ টাকা এবং শিশুদের জন্য ৫০ টাকা। ভেতরে খাবার নিয়ে যেতে চাইলে টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।