স্পোর্টস ডেস্ক : সময়টা ৮ বছরেরও বেশি। এত লম্বা সময়ে শুধু ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ স্থির রাখা কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভব। আপনি যখন জানবেন, আপনার পারফরম্যান্স কাউন্ট হচ্ছে না, তখন শতভাগ নিবেদন দিয়ে কাজ করা কঠিন।
তাই, জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন কবর দিয়ে দেন অনেকে। কিন্তু, ভালো কিছুর আশায় ২২ গজে কখনো হাল ছাড়েননি মোশাররফ হোসেন রুবেল। জানতেন, একদিন পুরস্কৃত হবে ঘামের প্রতিটি বিন্দু।
শ্রষ্টার পরম মায়া হাল না ছাড়া সেই মানুষটার জন্য। সাড়ে আট বছর পর রুবেল মাঠে নামলেন দেশের হয়ে। ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছিল মোশাররফ রুবেলের। চারটি ম্যাচ খেলেছিলেন। ব্যাট হাতে ২৬ রানের পাশাপাশি বল হাতে একটি মাত্র উইকেট পাওয়ায় থিতু হতে পারেননি রুবেল। দল থেকে বাদ পড়েন। এরপর জাতীয় দল মানে তার কাছে অন্য জগতের কিছু। এ সময়ে জীবনে কত কিছুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। কত নাটকীয়তা জন্ম নিয়েছে, কিন্তু জাতীয় দলে সুযোগ মেলেনি তার। শেষ পর্যন্ত ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে সাড়ে আট বছর পর দলে ফেরেন রুবেল। কিভাবে ফিরেছিলেন জাতীয় দলে? সেই গল্পই আজ জানাব।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান সিরিজের কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য ৩০ সদস্যের দল ঘোষণা করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু, সেখানেও তার জায়গা হয়নি। মোশাররফ হোসেন রুবেল তখন হাই পারফর্মেন্স ইউনিটের সাথে স্পিন প্র্যাকটিস করছেন। তখন এইচপির কোচ ছিলেন ভেঙ্কটেশ রাজু। এইচপি ক্যাম্পে ভালো করায় কোচ ভেঙ্কটেশ রাজু বাংলাদেশ টিম ম্যানেজম্যান্টকে রুবেলের কথা বলে যান।
কিন্তু, নির্বাচকরা তার দিকে নজর দেননি। সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলছিলেন আরাফাত সানী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিভিন্ন অপশন খুঁজছিলেন কোচ হাথুরুসিংহে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ থেকে সোহরাওয়ার্দী শুভকে বেছে নিলেও স্কিল ট্রেনিংয়ে শুভর বোলিংয়ে খুশি হননি কোচ। নেটে এবং প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে শুভর বোলিং কোচের মন গলাতে পারেনি। এজন্য বিকল্প অপশন দেখতে চেয়েছেন হাথরুসিংহে।
তখন নির্বাচক হাবিবুল বাশার মোশাররফ হোসেন রুবেলের কথা বলেন। তাতে সমর্থন করেন মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে তাকে দেখতে চাওয়ায় ক্যাম্পে ডাক পড়ে রুবেলের।
কিন্তু, রুবেলকে যখন জাতীয় দলের জন্য ডাকা হয়, তখন তিনি ভারতের কলকাতায়। দুপুরে ফোন দিয়ে হাবিবুল বাশার তাকে পরদিন রিপোর্ট করতে বলেন। কিন্তু, বিকেলে বা রাতে কোনো ফ্লাইট পাচ্ছিলেন না রুবেল। উপায় না দেখে, কলকাতা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে হরিদাসপুরের (ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা) উদ্দেশে রওনা হন। এ পারে (বাংলাদেশ) এসে আবার গাড়ি নিয়ে যশোরে। রাতে যশোর থেকে পরদিন ভোরে ঢাকার ফ্লাইট ধরেন। বিমানবন্দর থেকে সোজা মিরপুর স্টেডিয়ামে রিপোর্ট করেন বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার।
অনুশীলন ও প্রস্তুতি ম্যাচে হাথুরুসিংহের মন জয় করায় জাতীয় দলের মূল স্কোয়াডেও তার সুযোগ হয়। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে তাকে নেওয়া হয়নি। তৃতীয় ওয়ানডেতে ফিরিয়ে এনে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দেওয়া হয়। বলা যায়, এক কথায় দ্বিতীয় ‘অভিষেক’।
শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। ৮ ওভারে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে আফগানিস্তানকে হারাতে বড় ভূমিকা রাখেন। ম্যাচ শেষে রুবেলকে নিয়ে তখনকার অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, ‘রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে এসেছে মোশাররফ রুবেল। রিজার্ভ বেঞ্চ থেকে কেউ এসে যদি পারফরম্যান্স করে, তখন টিম আরো বুস্ট আপ হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এটা অবশ্যই তার জন্য পজিটিভ, আমাদের জন্যও পজিটিভ। তাকে যে ভূমিকার জন্য দলে আনা হয়েছে, সে তা পূরণ করতে পেরেছে। আশা করি, ওর নিজেরও আত্মবিশ্বাস বাড়বে এবং সামনে আরও ভালো করতে পারবে।’
কিন্তু বেশিদিন জাতীয় দলে থাকতে পারেননি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরের সিরিজে আশানুরুপ কিছু না পাওয়ায় বাদ পড়তে হয়। এরপরও রুবেল ঘরোয়া ক্রিকেটে হাল ছাড়েননি। শতভাগ নিবেদন দিয়ে খেলে গেছেন।
কিন্তু, ২০১৯ সালের পর বিপিএল তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ হয়ে থাকল। বিপিএলের পর তার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ে। সেই টিউমারের সঙ্গে লড়লেন তিন বছর। মাঠের যুদ্ধে ব্যাট-বলে বিজয়ের পতাকা উড়ালে জীবনের লড়াইয়ে রুবেল পারলেন না। সবাইকে কাঁদিয়ে আজ তিনি পাড়ি দিলেন অন্তিমে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।