জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে তদন্তাধীন নয়টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে।এর মধ্যে বাজেয়াপ্ত করা ২৭ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় এক সেমিনারে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে গঠিত দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এ প্রতিবেদন উত্থাপন করে।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘বাংলাদেশ মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়নে প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে আর্থিক অনিয়ম তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা সংস্থাটি।
সেমিনারে বিএফআইইউ কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বিএফআইইউ’র অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসেন বলেন, পাচার করা অর্থ উদ্ধার জটিল কাজ। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে।সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকে থাকা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থের বিষয়ে ২০১৪ সাল থেকে তথ্য প্রকাশ করে আসছে ব্যাংকটি। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে জানানো হয়, এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আর্থিক তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ।
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) এপ্রিল পর্যন্ত তদন্তাধীন নয়টি মামলার বিপরীতে ৮৬৬ কোটি টাকা জব্দ করেছে বিএফআইইউ। যদিও আগের (২০২০-২১) অর্থবছরে সাতটি মামলার বিপরীতে ক্রোককৃত টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ বছরে ৬৩টি তদন্তাধীন মামলার বিপরীতে টাকা ক্রোক করা হয়েছে ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বিএফআইইউ চলতি অর্থবছরের দশ মাসে বাজেয়াপ্তকৃত অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ২৭ কোটি টাকা। একইসঙ্গে গত পাঁচ অর্থবছরের সরকারের কোষাগারে জমা পড়েছে ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ থেকে মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, হংকং, দুবাই, সিঙ্গাপুর ও ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থপাচার হয় বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে করোনা পরবর্তীতে দেশে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি ও ডলার এক্সচেঞ্জ রেট। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের সভাপতিত্ব অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, এবিবি চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেনসহ বিএফআইইউর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
গভর্নর বলেন, ‘আমাদের যে পরিমাণ রিজার্ভ আছে তাতে ভয়ের কিছু নেই। সাধারণত তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান ডলার মজুদ থাকলে স্থিতিশীল ধরা হয়। বর্তমানে আমাদের ৪১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আছে। এক মাসে আমদানি ব্যয় মেটাতে লাগে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে প্রয়োজন সাড়ে ২২ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া সরকারের নিরাপত্তা সামগ্রী বাবদ আরও তিন বিলিয়ন ডলার দরকার হয়। সব মিলিয়ে ২৬ বিলিয়ন ডলার থাকলেই চিন্তা মুক্ত থাকা যায়।’
‘গত অর্থবছরে ব্যাংগুলো থেকে ৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনে নিয়েছে। কারণ সে সময় কোভিডের কারণে আমদানি ব্যয় কম ছিল। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
তিনি বলেন, করোনায় সেবা দিতে গিয়ে ১৮৯ জন ব্যাংকার প্রাণ হারিয়েছেন এবং অসংখ্য ব্যাংকার আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ সে সময়ে সম্মুখসারির যোদ্ধা ছিলেন ব্যাংকাররা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো এবং ইসলামী ব্যাংক প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
গভর্নর বিএফআইইউ’র বিষয়ে বলেন, ‘অ্যান্টি মানিলন্ডারিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সংস্থাটি। লন্ডারিংয়ের টাকা যাতে টেরোরিজমে ব্যয় না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেন গভর্নর।’
দুর্যোগকবলিত এলাকার বিষয়ে গভর্নর বলেন, সিলেটের কৃষকরা ঋণ পরিশোধ করুক বা না করুক তাদেরকে ঋণ বিতরণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া বন্যার্ত এলাকায় সিএসআর খাত থেকে ব্যয়ের পরামর্শ দেন তিনি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মোহাম্মদ সলীমুল্লাহ বলেন, ‘মানিলন্ডারিং মানে শুধু বিদেশে টাকা পাচার নয়। অবৈধ উপার্জিত অর্থ বৈধতার চেষ্টা করা হলে সেটিকে লন্ডারিং বলা হয়। আমাদের আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। মানুষ আমাদের কাজে সন্তুষ্ট কি না- তা ভাবতে হবে। কাজের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে।’
যেহেতু বাংলাদেশের টাকা বিদেশে চলে না, তাহলে লন্ডারিং হচ্ছে কেন এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘মূলত টাকা পাচার হচ্ছে না। দেশের সম্পদ পাচার হয়। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, রপ্তানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে অর্থাৎ যে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আসার কথা আসছে না। বিপরীতে দেশের সম্পদ চলে যাচ্ছে। এ ছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে কিছু টাকা পাচার হয়। এক্ষেত্রেও বৈদেশিক মুদ্রা দেশের আসছে না। অর্থপাচারের দুর্বলতা হিসেবে সংশ্লিষ্টদের বুঝতে না পারা এবং সিস্টেমে গলদকে দায়ী করেন সলীমুল্লাহ।
সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখা মানেই পাচার নয় উল্লেখ করে সলীমুল্লাহ বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের অনেকেই সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। তাহলে কি উন্নত বিশ্ব থেকেও টাকা পাচার হয়? সুইস ব্যাংকে টাকা রাখার মানেই টাকা পাচার নয়। এ ছাড়া বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশের সুইস ব্যাংকে টাকা রাখছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।