জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকার ৯০ শতাংশ স্ট্রিট ফুড বা রাস্তার খাবারই অনিরাপদ। এসব খাবারে ই-কোলাই ও সালমেনেলার মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে- এমন তথ্যই উঠে এসেছে সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৭ সালের নভেম্বরে পরিচালিত খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ক এক সমীক্ষায়।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। এবারের খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ একটি সম্মিলিত দায়িত্ব’।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র পদক্ষেপের যুগ্ম ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান সিদ্দিক।
তিনি জানান, মুখরোচক খাবার বলতেই মাথায় আসে ‘স্ট্রিট ফুড,’ যা সাধারণত রাস্তার পাশে তৈরি, বিক্রি ও খাওয়া হয়। নগরের প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ (নারী ৬০ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ শতাংশ) দিনে অন্তত একবার স্ট্রিট ফুড খেয়ে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ৯০ শতাংশ স্ট্রিট ফুডই অনিরাপদ।
বিশ্বখাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ লোক খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগের অন্যতম কারণও হচ্ছে অনিরাপদ খাদ্য ও পানি।
সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৭ সালের নভেম্বরে পরিচালিত খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক দূষণ ও জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ক সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন মনিরুজ্জামান সিদ্দিক। এতে দেখা যায়, ঢাকার ৯০ শতাংশ স্ট্রিট ফুডই অনিরাপদ। এতে ই-কোলাই ও সালমোনেলার মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর.বি) এক গবেষণায় ৫৫ শতাংশ রাস্তার খাবারে ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। আর ৮৮ ভাগ বিক্রেতার হাতে অস্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে।
এসব তথ্য অনুযায়ী, ভেজাল খাদ্য খাওয়ার ফলে প্রতিবছর তিন লাখ লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এবং ৫০ হাজার লোক ডায়াবেটিসে এবং আরও ২ লাখ লোক কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাই ধারণা করা যেতে পারে, ভেজাল খাদ্যজনিত উদ্ভূত স্বাস্থ্য প্রতিক্রিয়া মোকাবেলায় যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে তা জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন সহায়ক কর্মকাণ্ডে ব্যয় হতে পারত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশ যেহেতু বিশ্ব বাণিজ্যে নিয়োজিত, তাই আমদানি ও রফতানি করা খাদ্যপণ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. নিরাপদ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কাঠামো শক্তিশালী ও নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা আইন এবং প্রবিধানগুলো যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।
২. সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষা এবং সচেতনতা বাড়াতে হবে।
৩. স্বাস্থ্যবিধি, স্যানিটেশন, এবং খাদ্যের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিটগুলোর জন্য কঠোর প্রবিধান তৈরি এবং যথাযথ প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. খাদ্যের ঝুঁকি শনাক্তকরণ ও খাদ্য পরীক্ষার জন্য সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ এবং স্বীকৃত খাদ্য পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।
৫. খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে ব্যাপক প্রচারের জন্য সরকারি, বেসরকারি, শিল্প সমিতি, এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় করতে হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যসংক্রান্ত জ্ঞান বিনিময় করতে হবে।
৬. খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঘটনার ক্ষেত্রে সময়মত পণ্য প্রত্যাহারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ট্রেসেবিলিটি এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর জন্য বারকোড এবং ব্লকচেইনের মতো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে।
৭. নতুন নতুন সমস্যা শনাক্ত করা এবং কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা মোকাবেলায় গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
এসব পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে, খাদ্য নিরাপত্তার প্রক্রিয়াগুলো উন্নত করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা এবং একটি টেকসই নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।