শিশুশিল্পী হিসেবে রুপালি জগতে পা রেখে তামিল সিনেমার শীর্ষ নায়কদের একজনে পরিণত হয়েছেন থালাপাতি বিজয়। সর্বশেষ ‘থালাপাতি ৬৯’ সিনেমার জন্য ২৭৫ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ‘তামিলাগা ভেটরি কাজাগম’ নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন এই নায়ক।

থালাপাতি বিজয় অভিনীত শেষ সিনেমা ‘জন নায়াগান’। আগামী বছরের ৯ জানুয়ারি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে এটি। শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল স্টেডিয়াম বুকিত জলিলে সিনেমাটির অডিও গান প্রকাশের আয়োজন করা হয়। বিজয়কে দেখতে এ মাঠে জড়ো হন ৯০ হাজার ভক্ত-অনুরাগী। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
এ মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাতে দেখা যায়, সম্পূর্ণ স্টেডিয়াম আলোকসজ্জায় সজ্জিত। প্রিয় তারকাকে পেয়ে ভক্তরা উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছেন। আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত পুরো স্টেডিয়াম। ভক্তদের সঙ্গে সেলফি তুলতেও দেখা গেছে বিজয়কে। এ অনুষ্ঠানে বিজয় বলেন, “শ্রীলঙ্কার পর বিশ্বে সবচেয়ে বড় তামিল জনগোষ্ঠীর একটি রয়েছে মালয়েশিয়ায়।”
রুপালি পর্দা থেকে রাজনীতির মাঠে নেমেছেন বিজয়। চলচ্চিত্র ছেড়ে রাজনীতিতে কেন এলেন তা নিয়ে আগেও কথা বলেছেন এই নায়ক। মালয়েশিয়ার ভরা স্টেডিয়ামে বিজয় বলেন, “আমার জন্য একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ আমার জন্য প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। এ কারণে আমি আগামী ৩০-৩৩ বছর তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত। বিজয় ভক্তদের জন্য আমি সিনেমা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি।”
প্রতিশ্রুতি দিয়ে থালাপাতি বিজয় বলেন, “প্রথম দিন থেকেই সব ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছি। যদিও এটা পুরোনো গল্প। কিন্তু আমার ভক্তরা শুরু থেকে টানা ৩৩ বছর ধরে আমার পাশে থেকেছেন। আমি সিনেমায় এসেছিলাম একটি ছোট বালুর ঘর বানানোর স্বপ্ন নিয়ে আর আপনারা আমাকে একটি প্রাসাদ উপহার দিয়েছেন। তাই যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের জন্য আমিও দাঁড়াব। ভক্তদের কৃতজ্ঞতার ঋণ শোধ করব।”
রাজনৈতিক দল গঠনের ৮ মাস পর অর্থাৎ গত ২৭ অক্টোবর তামিলনাড়ু রাজ্যের বিক্রবান্দি শহরে দলের সম্মেলনে যোগ দেন বিজয়। এটি ছিল তার দলের প্রথম জনসভা। রাজনৈতিক এই জনসভায় ৩ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। সেই মঞ্চে বিজয় বলেছিলেন, “আমি আমার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছি। আমি এটিকে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি, আমার পারিশ্রমিক ছুড়ে ফেলে দিচ্ছি। আমি আপনাদের বিজয় হিসেবে আপনাদের কাছে এসেছি। আমি আপনাদের ওপরে সমস্ত আস্থা-বিশ্বাস রাখছি।” রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগের ভাবনার কথা উল্লেখ করে বিজয় বলেছিলেন, “আগে ভাবতাম রাজনীতি কেন? কিন্তু শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবা কি স্বার্থপরতা নয়?”
২০২৬ সালের তামিলনাড়ুর বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে আপাতত প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিজয়। পাশাপাশি ‘জন নায়াগান’ সিনেমার শুটিং চালিয়েছেন তিনি। এইচ বিনোদন পরিচালিত এই সিনেমায় তার বিপরীতে দেখা যাবে পূজা হেগড়েকে।
বিজয়-পূজা ছাড়াও সিনেমাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন—ববি দেওল, শ্রুতি হাসান, প্রকাশ রাজ, প্রিয়ামণি, মমিতা বাইজু প্রমুখ। কেভিএন প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে সিনেমাটি। জানা যায়, সিনেমাটির বাজেট ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি।
থালাপাতি বিজয়ের বাবার নাম এসএ চন্দ্রশেখর। তিনি ছিলেন তামিল সিনেমার পরিচালক। মা শোভা চন্দ্রশেখর ছিলেন গায়িকা। মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ে নাম লেখান বিজয়। ‘বেট্রি’ নামের সিনেমাটি পরিচালনা করেন তার বাবা। প্রথম সিনেমার জন্য ৫০০ রুপি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। এরপর বেশ কয়েকটি সিনেমায় দেখা যায় তাকে।
রুপালি পর্দায় অভিষেকের আট বছর পর অর্থাৎ ১৯৯২ সালে ‘নালায়া থেরপু’ সিনেমার প্রথম নায়ক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তার প্রথম ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘পুভে উনাকাগা’। এটি মুক্তি পায় ১৯৯৬ সালে। তবে ২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া এই অভিনেতার ‘থিরুমালাই’ সিনেমাটি তার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যুক্ত করে।
পরের বছর ‘ঘিল্লি’ সিনেমায় একজন কাবাডি খেলোয়াড়ের ভূমিকায় অভিনয় করে সকলের মন কাড়েন বিজয়। এই সিনেমার মাধ্যমে প্রথম তামিল অভিনেতা হিসেবে বক্স অফিসে ৫০ কোটি রুপি আয় করেন। পরবর্তী সময়ে ‘থিরুপাচি’, ‘সাচেন’, ‘শিবাকাসি’, ‘পক্কিরি’, ‘কাবালান’, ‘নানবান’, ‘থুপ্পাক্কি’, ‘কাত্থি’, ‘মার্সাল’, ‘সরকার’, ‘মাস্টার’ প্রভৃতি সিনেমা তাকে তুমুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


