জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধা সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জহুরুল ইসলাম। স্কুলে যোগদান করেছেন দুই মাস। কিন্তু এখনো বেতন বোনাস পাননি। এরমধ্যে তাকে বদলি করা হয়েছে বান্দরবনের আলী কদম উচ্চ বিদ্যালয়ে। একইভাবে পঞ্চগড়ের স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন আহসান হাবীব। মাউশির নির্দেশে তাকেও যেতে হচ্ছে বান্দরবনের রোয়াংছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সরকারি মাধ্যমিকে গত রোববার ৭২ শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
এর মধ্যে ৬৮ জনই নতুন শিক্ষক যারা এ বছর যোগ দিয়েছেন শিক্ষকতা পেশায়। অর্থাৎ মোট বদলির ৯৪ ভাগের বেশি শিক্ষক তরুণ। মাউশির আঞ্চলিক অফিস থেকেও আরো অনেককে এভাবে বদলি করা হয়েছে। এর ফলে বেতন না পাওয়া, পার্বত্য অঞ্চলে এমন পোস্টিংকে শাস্তি হিসেবে মনে করছেন তরুণ শিক্ষকরা। মাধ্যমিকের নতুন শিক্ষকদের উপর মাউশির এ নির্দেশ মড়ার উপর খাড়ার ঘা।
মাউশি কর্মকর্তারা বলছেন, বিসিএস চিকিৎসকদের পোস্টিং গ্রাম অঞ্চলে দেয়া হলেও এবার প্রথমদিকে নতুন শিক্ষকদের পোস্টিং দেয়া হয় শহর অঞ্চলে। যা শুধু নজিরবিহীন নয়, চাকরি বিধিমালার সঙ্গেও সাংঘর্ষিক। এর ফলে ৪৮৩ জন শিক্ষকের সমন্বয়ের জন্য বদলি করা হয়। সেখানে দেখা যায় উত্তরাঞ্চলের শিক্ষকদের পার্বত্য অঞ্চলে পাঠানো হয়। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা হওয়ায় সে বদলি আদেশ বাতিল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
সরেজমিন শিক্ষাভবন ঘুরে দেখা গেছে তরুণ শিক্ষকদের দুর্দশার চিত্র। পরিচালক বেলাল হোসাইনের কক্ষের সামনে অপেক্ষা করছেন একাধিক নতুন শিক্ষক। তারা জানান, মাধ্যমিকের সহকারী পরিচালকের সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তার কাছে কীভাবে যাবেন তা নিয়ে দ্বিধাদন্দ্বে রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, আমার বাড়ি ঝিনাইদহ। ঝিনাইদহের সরকারি মাধ্যমিকের একটি স্কুলে পোস্টিং পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার দ্বিতীয় দফায় বদলি করা হয়েছে দূরবর্তী জেলা ভোলায়।
তিনি বলেন, বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত। আমার কোনো ভাই-বোন নেই। প্রতি দুসপ্তাহ পরপর বাবাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হয়। ঈদের পর বাবার বাইপাস সার্জারির কথা রয়েছে। বদলির কথা এখনো তাকে বলার সাহস পাইনি। ভোলায় বদলি হয়েছে শুনলে তিনি স্ট্রোক করতে পারেন বলে আশংকা করছেন এই শিক্ষক।
অপর এক শিক্ষক বলেন, আমার পারিবারিক সমস্যা কম। প্রথমে ঝিনাইদহে পোস্টিং দেয়া হলেও এবার বান্দরবান জেলায় পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আমার জেলায় আমার বিষয়ের শিক্ষকের পদ পূর্ণ হয়নি। আমাদের কথা হচ্ছে পোস্টিং যদি দিতেই হয় তবে পার্শ্ববর্তী দিক। এতো দূরে পোস্টিং দেয়া মানে শিক্ষকতা পেশায় এসেই মানসিক হোচট খাওয়া।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাধ্যমিকে বদলি সমস্যা দীর্ঘদিনের। অনেক শিক্ষক আছেন, যারা তাদের কর্মজীবন একটি স্কুলে কাটিয়ে দেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। যার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব রয়েছে সেসব শিক্ষকরাই ভালো স্কুলে ও শহরে থাকতে পারেন। অথচ বদলির বিষয়ে সরকারের নীতিমালা রয়েছে। কিন্তু এরপরও এ বিষয়ে প্রহসন কাটছে না।
একাধিক শিক্ষক বলেন, একই শিক্ষককে দুবার বদলির ঘটনা ঘটেছে। প্রথমে মাউশি থেকে নোয়াখালীতে পরে সেখান থেকে খাগড়াছড়িতে বদলি করা হয়। তবে এ বিষয়ে মাউশির কোনো কর্মকর্তায় আমাদেরকে কিছুই বলতে চাননি। পরিচালক বেলাল হোসাইন বলেন, এটি মহাপরিচালক অনুমোদন করেছে, আমার বলার এখতিয়ার নেই। অন্যদিকে ডিজি মহোদয় বলছেন বদলির বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য এখনই করবো না।
বেতন বন্ধ ৪৮৩ শিক্ষকের
সারাদেশে সরকারি মাধ্যমিকের সংখ্যা ৩৪০টি। এছাড়াও রয়েছে আত্তিকৃত ৩০০ বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। যার মধ্যে ৫ হাজারের বেশি সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক রয়েছে। নতুন যোগদান করেছেন দুই হাজার শিক্ষক। ফলে অনেক শিক্ষক অতিরিক্ত হয়ে পড়ায় তাদের বেতন আটকে গেছে।
মাউশি মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েও এখনো বেতন পাননি এসব শিক্ষকরা। এসময় একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ঘোষণার ১৩ মাস পর নিয়োগ পেয়েছি। পর দুই মাস হলো এখনো বেতন হয়নি, সামনে ঈদ। দীর্ঘ ৩ মাসেও বেতন না পাওয়াটা শুধু অপমানজনক নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য লজ্জার।
তবে সমস্যা সমাধানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন জানিয়েছিলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। খুব শিগগিরই নতুন শিক্ষকরা বেতন পাবেন। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
মাউশি কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি ১০৫ জন শিক্ষককে বদলি করায় অতিরিক্ত শিক্ষকের জটিলতা কাটছে। খুব শিগগিরই এসব শিক্ষকের বেতনের সমস্যার সমাধান হবে।
সার্বিক বিষয়ে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর নেহাল আহমেদকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।