আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মালয়েশিয়াকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে ফেলে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের আগের কয়েক সপ্তাহে বেশ চাপের মধ্যে ছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ। তার ক্ষমতাসীন জোট একের পর এক উপনির্বাচনে হেরে যাচ্ছিল। ছয় দশকের পুরনো শাসকগোষ্ঠীকে হটিয়ে ২০১৮ সালে যে সরকার গঠিত হয়েছিল, তার জন্য এ পরাজয়গুলো হজম করা খুব কঠিন ঠেকেছিল। মাহাথিরের ‘নয়া মালয়েশিয়া’ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি জীবনধারণের ব্যয় কমাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। নির্বাচনে জিতে আসতে ‘নয়া মালয়েশিয়া’ পরিকল্পনা অত্যন্ত সফল বিবেচিত হলেও সরকার গঠনের পর জাতিগত ও ধর্মীয় দিক থেকে ব্যাপক মতপার্থক্যের মধ্যে থাকা জোটের চার সদস্যকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাহাথির।
মহাসড়কে টোল আরোপ করা নিয়ে বিরোধ বড় আকারে দানা বাঁধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের বরাতে জানা গেছে, গত জানুয়ারিতে মহাসড়কে টোল সংগ্রহের দায়িত্ব প্লাস মালয়েশিয়া বেরহাদের স্থলে মাজু গ্রুপের কাছে হস্তান্তরের কথা ভাবছিলেন। প্লাস মালয়েশিয়া ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠান। ৩ হাজার কোটি রিঙ্গিত বা ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের চুক্তির অংশ হিসেবে সড়ক থেকে টোল সংগ্রহ করত মাজু গ্রুপ। এর বিনিময়ে সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিভিন্ন ঠিকাদারি কন্ট্রাক্ট পেত গ্রুপটি। কিন্তু মাহাথিরের জোট সদস্যরা এতে বাগড়া বাধায়। জোটের সবচেয়ে বড় অংশীদার ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন পার্টি বা ড্যাপ দৃঢ়তার সঙ্গে এ চুক্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সবশেষে প্লাস মালয়েশিয়ার সব দরপত্র প্রত্যাখ্যান করে সরকার এবং মহাসড়কের ভাড়া সম্পূর্ণ বাতিলের স্থলে কমিয়ে আনার মাধ্যমে আপসে যায়।
জানুয়ারিতে সরকারের এ ব্যর্থ চুক্তিটির মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কীভাবে জোট সরকারের মধ্যে নীতিগত ব্যাপারে মতপার্থক্য বিরাজ করছিল। জোট সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে এ রকম মতপার্থক্যের জেরেই গত সপ্তাহে পতন হয় মাহাথির সরকারের। নতুন প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন তাদের সমর্থনে সরকার গঠন করছেন, যারা ২০১৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিল এবং যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মালয়দের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে।
৯৪ বছর বয়সী মাহাথির অবশ্য এখনো হাল ছেড়ে দেননি। তিনি আনোয়ার ইব্রাহিম ও ড্যাপের সঙ্গে জোট চাঙ্গা করেছেন এবং রোববার তিনি জানান, সংসদের পরবর্তী অধিবেশনে মুহিউদ্দিনকে আস্থা ভোটে হারানোর জন্য পর্যাপ্ত এমপির সমর্থন রয়েছে তার। ৯ মার্চ মালয়েশিয়ার সংসদের পরবর্তী অধিবেশন শুরু হবে। মাহাথির যদি শিগগিরই ফের সরকার গঠন করতে পারেন, তবে জোটের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য দূর হয়ে যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে নতুন করে সংকট দানা বাঁধতে পারে।
মালয়েশিয়ার সামনে রাজনৈতিক সংকট ঠিক এমন সময় এল, যখন গভীর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটি। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ভ্রমণ ও ব্যবসায় কার্যক্রমে স্থবিরতা বিরাজ করছে। মালয়েশিয়ার শেয়ারবাজারে ২০১৮ সালের নির্বাচন-পরবর্তী খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। গত সপ্তাহে রিঙ্গিতের মান দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
সূত্র : ব্লুমবার্গ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।