বঙ্গোপসাগরের বুক জুড়ে আবারও সৃষ্টি হচ্ছে এক গভীর শঙ্কা—ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সাগরে প্রতিকূল পরিস্থিতির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে গঠিত হতে পারে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়। সম্ভাব্য নাম ‘শক্তি’ প্রস্তাব করেছে শ্রীলঙ্কা, এবং এটি বর্তমানে দেশের আবহাওয়াবিদ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের বিশেষ দৃষ্টিতে রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়: সৃষ্টির কারণ ও সম্ভাব্য প্রভাব
ঘূর্ণিঝড় একটি ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যা সাগরের উষ্ণ জলের উপরে কমচাপ সৃষ্টি হয়ে ধাপে ধাপে নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ এবং অবশেষে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ সম্পর্কে আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য এক অনুকূল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। তার মতে, এটি গঠন হওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
Table of Contents
বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ১৬ থেকে ১৮ মে’র মধ্যে সাগরে একটি সার্কুলেশন তৈরি হতে পারে, যা ধাপে ধাপে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে খুলনা, চট্টগ্রাম উপকূল এবং ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে আঘাত হানার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য সতর্কবার্তা এবং প্রস্তুতি
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ যদি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানে, তবে এটি প্রবল বৃষ্টিপাত, জলোচ্ছ্বাস এবং ঝড়ো হাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করবে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগ ও চট্টগ্রাম অঞ্চল এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আবহাওয়া অধিদফতর এখনো পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সতর্কতা জারি না করলেও, পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইতিমধ্যে আগাম প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপকূলীয় মানুষদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে যেন যেকোনো সময় আশ্রয়কেন্দ্রে গমন করা যায়। এই সতর্কতার অংশ হিসেবে, আবহাওয়ার আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তীব্র গরমে বিপর্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ, জনগণের পাশে নেই রাজনৈতিক নেতারা
বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন, সাগরে বর্তমানে যে ধরনের উষ্ণতা এবং বায়ুর চাপের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, তা ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য অত্যন্ত উপযোগী। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে জীবন ও সম্পদের বিপুল ক্ষতি হতে পারে।
বাংলাদেশ সরকারের আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যদি পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে সময়মতো চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করা হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে অতীত অভিজ্ঞতা ও করণীয়
ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রযুক্তির ভূমিকা
বিগত কয়েক বছরে ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত আগাম পূর্বাভাসে প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে উন্নত হয়েছে। উপগ্রহ চিত্র, রাডার এবং উচ্চ প্রযুক্তির পূর্বাভাস মডেলের মাধ্যমে আগাম সতর্কতা পাওয়া সম্ভব হয়েছে। ফলে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে।
‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আগাম সতর্কতা পেতে বাংলাদেশের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ ইতিমধ্যে একযোগে কাজ শুরু করেছে। উপকূলীয় অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, জরুরি খাবার ও চিকিৎসা সামগ্রী সংরক্ষণ করাও শুরু হয়েছে।
সাধারণ মানুষ কীভাবে প্রস্তুতি নেবে?
- নিয়মিত আবহাওয়ার খবর অনুসরণ করা।
- ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা।
- গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও জিনিসপত্র জলরোধক প্যাকেটে সংরক্ষণ করা।
- স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র সম্পর্কে জানা এবং পরিবারের সদস্যদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার পূর্বপ্রস্তুতি রাখা।
সম্ভাব্য প্রভাব ও পরবর্তী করণীয়
‘শক্তি’ ঘূর্ণিঝড় যদি বাস্তবে রূপ নেয় এবং উপকূলে আঘাত হানে, তাহলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বড় আকারের জলোচ্ছ্বাস ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ফসলের ক্ষতি, ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং মানুষের প্রাণহানির সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই এখনই উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রবল শক্তি নিয়ে আঘাত হানতে পারে এমন একটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতনতা, প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সরকার-জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারি।
FAQs: ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্ন
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কখন গঠন হতে পারে?
আগামী ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ গঠন হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা পূর্বাভাস দিয়েছেন।
কোন কোন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে?
খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূল ছাড়াও ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলেও এটি আঘাত হানতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় কী কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
নিয়মিত আবহাওয়ার আপডেট দেখা, বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা, গুরুত্বপূর্ণ জিনিস সংরক্ষণ, ও আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে তথ্য কোথা থেকে পাওয়া যায়?
আবহাওয়া অধিদফতরের ওয়েবসাইট ও স্থানীয় প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তথ্য পাওয়া যায়।
ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে প্রযুক্তি কতটা কার্যকর?
উপগ্রহ ও রাডার প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন ঘূর্ণিঝড় পূর্বাভাস অনেক আগেই দেওয়া যায়, যা ক্ষয়ক্ষতি রোধে সহায়ক।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া কি বাধ্যতামূলক?
না, তবে জীবনের নিরাপত্তার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মেনে চলা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।