Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম:সহজ পথে জানুন
    লাইফস্টাইল ডেস্ক
    লাইফস্টাইল

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম:সহজ পথে জানুন

    লাইফস্টাইল ডেস্কMd EliasAugust 23, 202518 Mins Read
    Advertisement

    সকালের রোদ্দুরে ছোট্ট মেহেদির হাত ধরে মসজিদে যাওয়ার দৃশ্য। বিকেলে স্কুল থেকে ফেরা মালিহার মুখে নবি-রাসুলদের গল্প শোনার অপেক্ষায় মায়ের চোখে স্নেহ। রাতের আঁধারে ছোট্ট ইমরানের শান্ত নিঃশ্বাসের পাশে দাঁড়িয়ে বাবা তার ভবিষ্যতের জন্য দোয়া। এগুলো শুধু নস্টালজিক মুহূর্ত নয়, এগুলোই তো মুসলিম পরিবারে ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এর প্রাণবন্ত প্রকাশ। কিন্তু এই প্রতিপালন কি শুধুই খাওয়া-পরার ব্যবস্থা আর স্কুলে ভর্তি করানো? নাকি এর গভীরে রয়েছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্পিত এক আমানতের দায়িত্ব, যার সুতীব্র তাৎপর্য বুঝতে পারলেই খুলে যায় সফলতার দরজা? বাংলাদেশের অলিগলি থেকে শুরু করে শহুরে ব্যস্ততায় ডুবে থাকা হাজার হাজার মা-বাবা আজ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। চারপাশের বৈপরীত্য, ভোগবাদী সংস্কৃতির চাপ, আর ডিজিটাল যুগের নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জের মাঝে ইসলামের সেই সুস্পষ্ট, যুক্তিপূর্ণ ও কোমল নির্দেশনা কীভাবে বাস্তব জীবনে ধারণ করবেন – তা জানাই তো অমূল্য সম্পদ। এই প্রতিপালন শুধু দুনিয়াবী সাফল্যের জন্য নয়; এর লক্ষ্য একটাই – আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতের যোগ্য এক প্রজন্ম গড়ে তোলা, যাদের পায়ের নিচে থাকবে বাবা-মায়ের জান্নাত। চলুন, জেনে নিই সহজ পথে সেই পথচলার নিয়মকানুন।

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম

    • ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম: আমানতের মহান দায়িত্ব
    • নবজাতক থেকে বয়ঃসন্ধি: বয়সভিত্তিক ইসলামিক গাইডেন্স
    • বাস্তব জীবনে প্রয়োগ: সমস্যা ও ইসলামিক সমাধান
    • বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে ইসলামিক প্যারেন্টিং: ঐতিহ্য, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
    • জেনে রাখুন

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম: আমানতের মহান দায়িত্ব

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কে কোনও সাধারণ দায়িত্ব হিসেবে দেখা হয় না। কুরআন ও হাদিসে একে ‘আমানত’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যার সঠিক হিফাজতের জন্য মা-বাবাকেই আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে… পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। নারী তার স্বামীর গৃহ ও সন্তানের দায়িত্বশীলা এবং তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে…” (বুখারি ও মুসলিম)। এই হাদিসটি সন্তান প্রতিপালনের গুরুদায়িত্বের প্রতি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।

    এই আমানত পালনের মূল ভিত্তি কী? এখানে কয়েকটি অপরিহার্য স্তম্ভ রয়েছে:

    1. তাওহিদের ভিত্তি স্থাপন: শিশুর মনে সর্বপ্রথম যে বীজ বপন করতে হবে, তা হল আল্লাহর একত্ববাদের জ্ঞান। দুনিয়ার সবকিছুর স্রষ্টা, রিজিকদাতা, পালনকর্তা একমাত্র আল্লাহ – এই বিশ্বাসই তার সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা বলয়। ছোট্ট বাচ্চাকেও সহজ ভাষায় আল্লাহর মাহাত্ম্য, তাঁর সৃষ্টির নিদর্শন (পাখি, ফুল, বৃষ্টি, তারামণ্ডলী) সম্পর্কে বলুন। “এই সুন্দর ফুল কে তৈরি করেছে?”, “এই সুস্বাদু ফল কে দিয়েছে?” – এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে তার মনে তাওহিদের বীজ রোপণ করুন।
    2. নবি-রাসুলদের ভালোবাসা: রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনী, তাঁর আদর্শ, ধৈর্য, দয়া, সততা ও সাহসিকতার গল্প শোনানো শিশুর চরিত্র গঠনের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে আজও দাদা-দাদীরা নবি-রাসুলদের কিসসা বলে শিশুদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করেন, যা শহুরে জীবনে অনেকাংশে হারিয়ে যাচ্ছে। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ নবিজির সুন্নাহর অনুসরণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
    3. নামাজের সাথে পরিচয়: হাদিসে আছে, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে নামাজের আদেশ দাও যখন তারা সাত বছরের হয় এবং দশ বছর বয়সে (নামাজ না পড়লে) প্রহার করো এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” (আবু দাউদ)। লক্ষ্য করুন, এখানে একেবারে ছোট বয়স থেকেই নামাজের সাথে প্রবৃত্ত করানো এবং অভ্যাস গড়ে তোলার উপর জোর দেওয়া হয়েছে। জোর জবরদস্তি নয়, বরং ধীরে ধীরে প্র্যাকটিক্যালি শেখানো। ছোট্ট শিশুকে নিয়ে জামাতে দাঁড়ানো, তার জন্য ছোট্ট মুসল্লি (প্রার্থনার মাদুর) কেনা, তার সাথে নিয়ে ওযু করা – এসবই নামাজের প্রতি তার আগ্রহ বাড়ায়।
    4. সুন্দর নামকরণ: রাসুল (সা.) সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখার তাগিদ দিয়েছেন। নাম শুধু একটি পরিচয় নয়; এটি ব্যক্তিত্বের ওপরও প্রভাব ফেলে। তাই ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের প্রথম ধাপগুলোর একটি হল তার জন্য একটি ভালো নাম নির্বাচন করা। নাম রাখার সময় আকিকা (জন্মের সপ্তম দিনে পশু কুরবানি ও নাম রাখা) সুন্নাহ অনুসরণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
    5. সঠিক পরিবেশ: সন্তান বড় হবে কোন পরিবেশে – এটা তার ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর…” (সুরা তাহরিম: ৬)। অর্থাৎ, মা-বাবার দায়িত্ব সন্তানকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। এজন্য প্রয়োজন:
      • ইলমের (জ্ঞানের) পরিবেশ: ঘরে কুরআন তিলাওয়াত, ইসলামিক বইপত্র, আলোচনা-পর্যালোচনার পরিবেশ থাকা।
      • আল্লাহর জিকির: ঘরে আল্লাহর স্মরণ, দোয়া-দুরুদ, ভালো কথাবার্তার প্রচলন।
      • নেক সঙ্গ: সন্তান কার সাথে মিশছে, তার বন্ধু-বান্ধব কারা – তা খেয়াল রাখা। রাসুল (সা.) বলেছেন, “মানুষ তার বন্ধুর দীন অনুসরণ করে থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ করে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।” (আবু দাউদ, তিরমিযি)।
      • সুস্থ বিনোদন: ইসলাম সম্মত উপায়ে খেলাধুলা ও বিনোদনের সুযোগ দেওয়া।

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালন মানে শুধু ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করাই নয়; বরং বর্তমান মুহূর্তে তার আত্মার বিকাশ, ঈমানের সুদৃঢ়তা এবং উত্তম চরিত্র গঠনেই নিবেদিত হওয়া। এটি একটি নিত্যদিনের সাধনা, যার কোনও ছুটি নেই।

    নবজাতক থেকে বয়ঃসন্ধি: বয়সভিত্তিক ইসলামিক গাইডেন্স

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কখনও একরৈখিক নয়; শিশুর বয়স ও বিকাশের ধাপ অনুযায়ী এর পদ্ধতি ও গুরুত্বের জায়গা বদলায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে, যেখানে যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার বাড়ছে এবং বাবা-মা উভয়েই কর্মব্যস্ত, সেখানে বয়সভিত্তিক এই গাইডেন্স বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক।

    শৈশবের শুরুতে: জন্ম থেকে ৭ বছর (ভালোবাসা, পরিচয় ও প্রাথমিক শিক্ষা)

    • আযান ও ইকামত: নবজাতকের ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া সুন্নাহ। এটি তার প্রথম শোনা শব্দ হওয়ায় এর প্রভাব গভীর। ঢাকার মিরপুরে বসবাসরত ফারহানা আক্তার তার কন্যা সন্তানের জন্মের পর এই সুন্নাহ পালনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, “এটা শুধু একটা রীতি নয়; মনে হয় যেন তাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে প্রথমেই অভ্যস্ত করানো হচ্ছে।”
    • তাহনিক ও আকিকা: জন্মের পর পরই সুন্নাহ অনুযায়ী খেজুর চিবিয়ে নবজাতকের মুখে দেওয়া (তাহনিক)। সপ্তম দিনে আকিকা করা (ছেলে সন্তানের পক্ষে দুটি ছাগল/ভেড়া, মেয়ের পক্ষে একটি), মাথার চুল কামানো, তার ওজনের সমান রূপা বা সোনা সদকা করা এবং সুন্দর নাম রাখা। এই অনুষ্ঠান শিশুকে পরিবার ও সমাজে স্বাগত জানানোর ইসলামী পদ্ধতি।
    • ভালোবাসা ও স্পর্শের শক্তি: রাসুল (সা.) শিশুদেরকে আদর করতেন, কোলে নিতেন, চুমু দিতেন। এই শারীরিক স্নেহ শিশুর মানসিক ও আবেগীয় বিকাশের জন্য অপরিহার্য। “বাচ্চাদেরকে আদর করো, তাদেরকে চুমু দাও…” (তাবারানি)। বাংলাদেশের অনেক পরিবারে এখনও এই সংস্কৃতি প্রবল, যা শিশুকে নিরাপত্তাবোধ দেয়।
    • প্রাথমিক শিক্ষার বীজ বপন: ৩-৪ বছর বয়স থেকেই সহজ-সরলভাবে:
      • কালিমা, দোয়া, ছোট সুরা: ঘুমানোর দোয়া, খাওয়ার দোয়া, বাথরুমে যাওয়ার দোয়া শেখানো। সুরা ফাতিহা, ইখলাস, ফালাক, নাস ইত্যাদি মুখস্থ করানো। এগুলোকে গান বা ছড়ার মতো করে শেখালে শিশুর আগ্রহ বাড়ে।
      • নৈতিকতার প্রাথমিক ধারণা: সত্য বলা, মিথ্যা না বলা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের স্নেহ করা, অন্যদের জিনিস না নেওয়া – এসব মূল্যবোধ গল্প, খেলা ও দৈনন্দিন আচরণের মাধ্যমে শেখানো।
      • নামাজের অভ্যাস: নামাজের সময় শিশুকে পাশে বসিয়ে রাখা বা তার ছোট্ট মুসল্লিতে দাঁড় করানো। তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে ওযু করানো। এটা তার জন্য খেলার মতো আনন্দের ব্যাপার করে তোলা। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ এই প্রাথমিক পরিচয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    প্রস্তুতির সময়: ৭ বছর থেকে বয়ঃসন্ধি (শিক্ষা, অনুশীলন ও দায়িত্ববোধ)

    • নামাজের ব্যাপারে কঠোরতা শুরু: হাদিসে বর্ণিত নির্দেশ অনুযায়ী সাত বছর থেকেই নামাজের জন্য স্পষ্ট আদেশ এবং নিয়মিত অভ্যাস গড়ার প্রতি জোর দিতে হবে। এটাই সেই সময় যখন শিশু যুক্তি বুঝতে শুরু করে। নামাজের গুরুত্ব, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক, জান্নাত-জাহান্নামের ধারণা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে বলতে হবে। দশ বছর বয়সেও যদি অনীহা দেখা দেয়, তবে শাসনের (প্রহার, তবে কখনওই মারাত্মক বা অপমানজনক নয়) কথা হাদিসে এসেছে। বর্তমান সময়ে এর অর্থ হতে পারে বিনোদন বা প্রিয় জিনিস থেকে সাময়িক বঞ্চিত করা বা অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া।
    • ইলমে দীনের শিক্ষা: শুধু নামাজ-রোজা নয়, ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস (ঈমানের স্তম্ভ), প্রাথমিক ফিকহ (পবিত্রতা, হালাল-হারাম), নৈতিকতা (আখলাক), কুরআন তেলাওয়াত ও অর্থ বোঝার চেষ্টা শুরু করা। বাংলাদেশে মক্তব, মাদ্রাসা বা বাড়িতে শিক্ষকের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তবে কেবল মুখস্থ নয়, বুঝে বুঝে শেখার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
    • চরিত্র গঠনের তালিম: এই বয়সেই সততা, আমানতদারিতা, দায়িত্ববোধ, ধৈর্য, পরোপকারিতা, বিনয়, লজ্জা (হায়া) ইত্যাদি গুণাবলি গভীরভাবে শেখানোর সময়। রাসুল (সা.)-এর জীবনী, সাহাবায়ে কেরামের গল্প, নৈতিক শিক্ষামূলক ঘটনাবলি এখানে সবচেয়ে কার্যকর। পরিবারের বড়দের আচরণই এখানে সবচেয়ে বড় শিক্ষণীয় উপাদান।
    • দায়িত্ব প্রদান: ঘরের ছোট ছোট কাজ (ঘর গোছানো, নিজের জিনিসপত্র ঠিক রাখা, ছোট ভাই-বোনের দেখাশোনা করা), সময়ানুবর্তিতা, সম্পদের মূল্যবোধ (টিফিনের পয়সা সঠিকভাবে খরচ করা) শেখানো। এতে তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও দায়িত্ববোধ গড়ে উঠবে।
    • লিঙ্গভিত্তিক শিক্ষা ও আদব: ইসলাম ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্য আলাদা আলাদা কিছু আদব ও আচরণবিধি শিক্ষা দেয়। ছেলেদের মধ্যে পুরুষালী গুণাবলি (সাহস, দায়িত্ববোধ, পরিবারের দেখভাল), মেয়েদের মধ্যে নারীত্বের গুণাবলি (লজ্জা, সংযম, সৌন্দর্যবোধ) গড়ে তোলা। এসময় থেকেই পর্দা সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা (বিশেষ করে মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে)। তবে তা ভয়ভীতি দেখিয়ে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও সম্মান রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝিয়ে বলতে হবে।

    চ্যালেঞ্জিং পথ: বয়ঃসন্ধি থেকে যৌবন (মার্গদর্শন, আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার ভারসাম্য)

    বয়ঃসন্ধি শুরু হওয়ার সাথে সাথে শারীরিক, মানসিক ও আবেগীয় পরিবর্তন আসে। এই সময়টাই ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম অনুযায়ী সবচেয়ে সূক্ষ্ম ও কৌশলপূর্ণ দিকরক্ষার প্রয়োজন হয়।

    • বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক: কৈশোরের জটিলতায় সন্তানকে একা ফেলে না দিয়ে তার বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করুন। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। জবরদস্তি বা একতরফা নির্দেশের পরিবর্তে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করুন। রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সাথে কেমন আচরণ করতেন তা অনুসরণ করুন।
    • আত্মপরিচয়ের সংকট মোকাবেলা: এই সময়ে সন্তান “আমি কে?”, “আমার অস্তিত্বের অর্থ কী?” – এই প্রশ্নগুলোর মুখোমুখি হয়। ইসলাম তার এই প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর দেয়। তাকে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য (আল্লাহর ইবাদত), দুনিয়ায় তার ভূমিকা (আল্লাহর খলিফা) এবং পরকালীন জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে দৃঢ়ভাবে জানান। তার মধ্যে আল্লাহভীতি (তাকওয়া) গড়ে তুলুন, যা তাকে যেকোনো গুনাহ থেকে বিরত রাখবে।
    • ফিতনা থেকে হিফাজত: বর্তমান যুগে ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, অপসংস্কৃতি, মাদক, অবাধ মেলামেশার মতো ফিতনাগুলো সর্বত্র। সন্তানকে এসবের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করুন। গোপনীয়তা ও পর্দার গুরুত্ব বোঝান। ইন্টারনেট ব্যবহারে সীমারেখা টানা, ভালো বন্ধু নির্বাচনে সাহায্য করা এবং পরিবারেই তার জন্য ইতিবাচক বিনোদনের ব্যবস্থা করা জরুরি।
    • স্বাধীনতা ও সীমানা: কৈশোরে স্বাধীনতা চাওয়া স্বাভাবিক। ইসলাম অন্ধ আনুগত্য শেখায় না; বরং যুক্তিসঙ্গত সীমানার মধ্যে স্বাধীনতা দেয়। সন্তানের সাথে আলোচনা করে পারিবারিক নিয়ম কানুন (যেমন বাইরে যাওয়ার সময়সীমা, বন্ধু নির্বাচন, ইন্টারনেট ব্যবহার) নির্ধারণ করুন। তাকে বুঝতে দিন যে এই সীমারেখাগুলো তার কল্যাণের জন্যই।
    • ভবিষ্যত পরিকল্পনা: এই বয়সেই তার উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ারের দিক নির্ধারণ হয়। ইসলামে জ্ঞানার্জন ফরজ। তাকে উৎসাহিত করুন প্রয়োজনীয় দুনিয়াবি শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি দ্বীনি জ্ঞানও ধরে রাখতে। তার আগ্রহ ও দক্ষতার দিকে লক্ষ্য রেখে পেশা নির্বাচনে সাহায্য করুন, তবে পেশাটি যেন হালাল উপার্জনের সুযোগ দেয় এবং ইসলামী মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ এই পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।

    বয়ঃসন্ধি পার করানোর মূলমন্ত্র হল ধৈর্য, প্রজ্ঞা, দোয়া এবং অবিচ্ছিন্ন ভালোবাসা। এটি এক পরীক্ষার সময়, যেখানে মা-বাবার নিষ্ঠাই সন্তানকে সঠিক পথে ধরে রাখতে পারে।

    বাস্তব জীবনে প্রয়োগ: সমস্যা ও ইসলামিক সমাধান

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম শুধু তাত্ত্বিক আলোচনা নয়; এটি দৈনন্দিন জীবনের নানা চ্যালেঞ্জে কীভাবে ইসলামের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন তারই নির্দেশিকা। বাংলাদেশের মা-বাবাদের মুখোমুখি হওয়া কিছু সাধারণ সমস্যা এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার সমাধান:

    আর্থিক চাপে ইসলামিক প্যারেন্টিং

    • সমস্যা: সন্তানের চাহিদা (ভালো স্কুল, কোচিং, জামা-কাপড়, গ্যাজেট) দিন দিন বাড়ছে। অপ্রতুল আয়ে হালাল উপার্জন করে এসব পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অনেক সময় হারাম উপার্জনের দিকে ঝুঁকতে হয় মনে হয়। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ এর সমাধান কী?
    • ইসলামিক সমাধান:
      • কর্মসংস্থানে আন্তরিকতা: রিজিকের মালিক আল্লাহ। হালাল উপার্জনের চেষ্টা করুন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও যোগ্যতার সাথে। রাসুল (সা.) বলেছেন, “উত্তম হালাল উপার্জন করা আল্লাহর নিকট প্রিয় আমল।”
      • সন্তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা (কানা’আত ও শুকর): যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা শিখুন। সন্তানকেও এই শিক্ষা দিন। অভাবের সময় ধৈর্য ধারণ (সবর) করুন। কুরআনে আছে, “নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের অগণিত প্রতিদান দেওয়া হবে।” (সুরা যুমার: ১০)।
      • অগ্রাধিকার নির্ধারণ: সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস (ভালো শিক্ষা, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসস্থান) এবং বিলাসিতার মধ্যে পার্থক্য করুন। ইসলাম বিলাসিতা ও অপচয় নিষেধ করে। সন্তানকে টাকা-পয়সার মূল্যবোধ শেখান।
      • দোয়া ও তাওয়াক্কুল: নিয়মিত দোয়া করুন আল্লাহ যেন হালাল রিজিক বাড়িয়ে দেন এবং সন্তানের ব্যয়ভার সহজ করে দেন। আল্লাহর উপর ভরসা (তাওয়াক্কুল) রাখুন। “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ বের করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেন যা সে কল্পনাও করে না…” (সুরা তালাক: ২-৩)।

    ডিজিটাল যুগের চ্যালেঞ্জ: গ্যাজেট, সোশ্যাল মিডিয়া ও অপসংস্কৃতি

    • সমস্যা: স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া সন্তানের হাতে এখন হাতের নাগালে। এর সুফল আছে, কিন্তু ক্ষতির সম্ভাবনাও বিপুল – সময় নষ্ট, আসক্তি, অশ্লীলতা, ভুল তথ্য, সাইবার বুলিং, ইসলামবিরোধী সংস্কৃতির প্রভাব ইত্যাদি।
    • ইসলামিক সমাধান:
      • শিক্ষা ও সচেতনতা: গ্যাজেটের ভালো-মন্দ উভয় দিক সম্পর্কে সন্তানকে সচেতন করুন। ইন্টারনেট ব্যবহারের ইসলামিক আদব (পর্দা, গিবত, অপবাদ থেকে বেঁচে থাকা, সময় নষ্ট না করা) শেখান। হারাম কন্টেন্ট দেখার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করুন।
      • সীমারেখা নির্ধারণ: বয়স ও প্রয়োজন অনুযায়ী গ্যাজেট ব্যবহারের সময়সীমা ঠিক করুন। নির্দিষ্ট সময়ের পর ফোন বা ল্যাপটপ অন্যত্র সরিয়ে রাখুন। ইন্টারনেটে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করুন।
      • বিকল্প সুস্থ বিনোদন: সন্তানকে বই পড়া, আঁকা, বাগান করা, খেলাধুলা, পারিবারিক আড্ডা, দ্বীনি শিক্ষার ক্লাস, সামাজিক সেবামূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করুন। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ সময়ের সদ্ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
      • উদাহরণ: বাবা-মা নিজে যেন ফোনের দাস না হন। সন্তানের সামনে নিজের গ্যাজেট ব্যবহারে সংযমী হোন। পারিবারিক সময়ে ফোন দূরে রাখুন।
      • গোপনীয়তা ও বিশ্বাস: সন্তানের গোপনীয়তার প্রতি সম্মান দিন, কিন্তু তার অনলাইন কার্যকলাপ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে তার সাথে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি করুন।

    ঈমানী দুর্বলতা ও দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া

    • সমস্যা: বাইরের পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধবের প্রভাব, বা পারিবারিক উদাসীনতার কারণে সন্তানের ঈমান দুর্বল হতে পারে, নামাজ-রোজায় অনীহা দেখা দিতে পারে, ইসলামী মূল্যবোধে সন্দেহ জাগতে পারে।
    • ইসলামিক সমাধান:
      • আল্লাহর দিকে ডাকার পদ্ধতি: ধমক বা জোরাজুরি নয়। নরম ভাষায়, হিকমতের সাথে (প্রজ্ঞার সাথে) আল্লাহর দিকে আহ্বান করুন (সুরা নাহল: ১২৫)। তার সন্দেহ ও প্রশ্নের উত্তর দিন ধৈর্য সহকারে। ইসলামের যুক্তিপূর্ণ, সুন্দর ও মানবিক দিকগুলো তুলে ধরুন।
      • দোয়া ও ধৈর্য: সন্তানের হেদায়েতের জন্য নিয়মিত দোয়া করুন। ইব্রাহিম (আ.) এর দোয়া স্মরণ করুন: “হে আমার রব! আমাকে নামাজ কায়েমকারী বানাও এবং আমার সন্তানদের মধ্য থেকেও (অনেককে নামাজি বানাও)।” (সুরা ইব্রাহিম: ৪০)। ধৈর্য ধারণ করুন; হেদায়েত দানকারী একমাত্র আল্লাহ।
      • ভালো সঙ্গ: তাকে ভালো, দ্বীনদার বন্ধু-বান্ধব ও পরিবেশে রাখার চেষ্টা করুন। ইসলামিক স্টাডি সার্কেল, ক্যাম্প বা দাওয়াতি কাজে অংশগ্রহণে উৎসাহিত করুন।
      • ইলমে দ্বীনের গভীরতা: ঈমান দুর্বলতার একটি কারণ হল দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা। তাকে গভীরভাবে ইসলাম শেখার সুযোগ দিন। বুঝে বুঝে কুরআন তিলাওয়াত ও তাফসির পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এ জ্ঞানের গুরুত্ব সর্বাধিক।

    ভাইবোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও হিংসা

    • সমস্যা: ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া, মারামারি, হিংসা, অভিযোগ – প্রায় প্রতিটি পরিবারের নিত্যদিনের সমস্যা।
    • ইসলামিক সমাধান:
      • ন্যায়বিচার: রাসুল (সা.) সন্তানদের মাঝে ইনসাফ (ন্যায়বিচার) করার বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন, বিশেষ করে উপহার বা স্নেহ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে। একজনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব অন্যজনের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
      • ভালোবাসা ও দোয়া: ভাইবোনের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য দোয়া করুন। তাদেরকে একে অপরের জন্য দোয়া করতে শেখান। “হে আল্লাহ! আমাদের হৃদয়গুলোকে একত্রিত করো…” (সুরা আলে ইমরান: ১০৩)।
      • দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতা: বড় ভাইবোনকে ছোটদের দেখভালের দায়িত্ব দিন। পারস্পরিক সহযোগিতার গল্প শোনান। রাসুল (সা.) ও তাঁর চাচাতো ভাই আলী (রা.) এর সম্পর্কের উদাহরণ দিন।
      • ঝগড়া মেটানোর কৌশল: ঝগড়া হলে উভয় পক্ষের কথা শুনুন। তাদের নিজেদের মধ্যে সমাধান খুঁজে নিতে উৎসাহিত করুন। ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করা শেখান। “ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করো, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং অজ্ঞদের থেকে দূরে থাকো।” (সুরা আরাফ: ১৯৯)।

    বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে ইসলামিক প্যারেন্টিং: ঐতিহ্য, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

    বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতির সাথে ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম এর সমন্বয় ঘটাতে গিয়ে কিছু অনন্য দিক চোখে পড়ে:

    • যৌথ পরিবারের অবসান: আগে যৌথ পরিবারে দাদা-দাদী, চাচা-চাচীরা সন্তান লালন-পালনে সরাসরি ভূমিকা রাখতেন এবং ইসলামী মূল্যবোধের চর্চা সহজ ছিল। এখন একক পরিবারে এই দায়িত্ব শুধু বাবা-মায়ের উপর, যা অনেক বেশি চাপ সৃষ্টি করে। সন্তানকে ইসলামী পরিবেশে রাখতে স্থানীয় মসজিদ, মক্তব, ইসলামিক সেন্টার বা দ্বীনদার আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করা জরুরি।
    • পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব: গ্লোবালাইজেশনের যুগে টিভি, ইন্টারনেট, পপ কালচারের মাধ্যমে পাশ্চাত্য জীবনধারা ও মূল্যবোধের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটছে। বাংলাদেশের শহুরে তরুণ-তরুণীরা অনেক সময় ইসলামী পরিচয়ের চেয়ে গ্লোবাল সিটিজেনশিপে বেশি আগ্রহী। এখানে ইসলামের সৌন্দর্য, যুক্তি ও আধুনিক জীবনের সাথে সামঞ্জস্যতা তুলে ধরা প্রয়োজন। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কে আধুনিক চাহিদার সাথে সংগতিপূর্ণ করে উপস্থাপন করতে হবে।
    • শিক্ষাব্যবস্থার দ্বন্দ্ব: সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলামী শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক অন্তর্ভুক্তি সীমিত। অনেক মা-বাবা সন্তানকে ভালো ফলাফল ও ক্যারিয়ারের জন্য সাধারণ স্কুল-কলেজে পাঠান, কিন্তু দ্বীনি শিক্ষার জন্য আলাদা সময় ও ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খান। মক্তব-মাদ্রাসা শিক্ষার মান ও আধুনিকতার অভাবও একটি চ্যালেঞ্জ। সমন্বিত শিক্ষা (দুনিয়াবি ও দ্বীনি) নিশ্চিত করার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা দরকার। বাংলাদেশের কিছু প্রতিষ্ঠান এই সমন্বয়ের চেষ্টা করছে।
    • ইতিবাচক উদ্যোগ: আশার কথা, বাংলাদেশে ইসলামিক প্যারেন্টিং বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বড় শহরগুলোতে ইসলামিক স্কলার ও মনোবিজ্ঞানীদের নিয়ে ইসলামিক প্যারেন্টিং কর্মশালা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকাশনা ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা ও সন্তান প্রতিপালনের দিকনির্দেশনা দিচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মেও বাংলায় ইসলামিক প্যারেন্টিং বিষয়ক কন্টেন্ট তৈরি হচ্ছে। সিলেটের রাহেলা বেগম, যিনি অনলাইনে ‘দ্বীনদার সন্তান গড়ার পাঠশালা’ নামে একটি গ্রুপ চালান, বলেন, “আমাদের লক্ষ্য মা-বাবাদের হাতে সহজ, প্র্যাকটিক্যাল ইসলামিক টুলস দেওয়া, যেন তারা ব্যস্ত জীবনেও সন্তানকে আল্লাহর পথে গড়ে তুলতে পারেন।
    • স্থানীয় উদাহরণের ব্যবহার: বাংলাদেশের গ্রামীণ ও শহুরে পরিবেশে ইসলামী মূল্যবোধকে প্রাসঙ্গিক করে তোলার জন্য স্থানীয় উদাহরণ, গল্প, এমনকি স্থানীয় ভাষার ইসলামিক গান ও কবিতা ব্যবহার করা যেতে পারে। রাসুল (সা.) এর জীবনীকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের সাথে তুলনা করে বোঝানো যেতে পারে। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কে শেকড়ের সাথে যুক্ত করতে এটি সহায়ক।

    বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের সাথে ইসলামের রয়েছে গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন। এই বন্ধনকে শক্তিশালী করেই বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে একটি সুস্থ, দ্বীনদার ও দেশপ্রেমিক প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব।

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম শুধু একটি গাইডলাইন নয়; এটি একটি পবিত্র সফর, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপই ইবাদতের সমতুল্য। এখানে শেখানো হয়নি পরিপূর্ণতা, বরং নিষ্ঠা, ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর উপর অগাধ ভরসার শিক্ষা। মেহেদি, মালিহা, ইমরানের মতো আপনার সন্তানের হাত ধরে আপনি যে পথ হাঁটছেন, তা সরাসরি জান্নাতের পথ। প্রতিটি আদব শেখানো, প্রতিটি হাদিসের গল্প বলা, প্রতিটি নামাজে ডাকা, প্রতিটি ভুলে ধৈর্য ধরা – এসবই আপনার সন্তানের জন্য জান্নাতের সিঁড়ি গড়ে তুলছে। মনে রাখবেন, আজকের এই প্রতিপালনই আগামীর উম্মাহর ভিত্তি। সুতরাং, হাল ছাড়বেন না, ক্লান্ত হবেন না। আপনার সন্তানকে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা শিক্ষক হিসেবেই নয়, বরং একজন সত্যিকার মুমিন, আল্লাহর খলিফা এবং সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে গড়ে তুলুন। শুরু করুন আজই, আল্লাহর সাহায্য চেয়ে, নবিজির সুন্নাহকে সঙ্গী করে। আপনার এই ছোট্ট আমানতটিকেই দিন পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর উপহার – ইসলামের সুগন্ধে ভরপুর এক পবিত্র জীবন। আপনার সন্তানই হোক আপনার জান্নাতের টিকিট।

    জেনে রাখুন

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কি শুধু মায়ের দায়িত্ব?
    না, একেবারেই না। ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্ব মা-বাবা উভয়ের উপর সমানভাবে বর্তায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল। বাবাকে পরিবারের রিজিকের ব্যবস্থা, সন্তানের শিক্ষা-দীক্ষা ও চরিত্র গঠনের সামগ্রিক দায়িত্ব নিতে হয়। মা প্রধানত সন্তানের প্রাথমিক লালন-পালন, আদব-কায়দা ও আবেগীয় বিকাশের মূল কেন্দ্র। তবে উভয়েই একে অপরের পরিপূরক এবং একসাথে কাজ করলে ইসলামে সন্তান প্রতিপালন সফল হয়।

    শিশুর ইসলামিক শিক্ষা কখন থেকে শুরু করা উচিত?
    ইসলামিক শিক্ষা শুরু হয় জন্মের পরপরই। ডান কানে আযান ও বাম কানে ইকামত দেয়া, তাহনিক, সুন্দর নাম রাখা – এসবই প্রাথমিক শিক্ষার অংশ। কথা বলতে শেখার পর থেকেই সহজ কালিমা, ছোট দোয়া ও নবি-রাসুলদের গল্প শেখানো যায়। তিন-চার বছর বয়স থেকেই নিয়মিত কুরআনের ছোট ছোট সুরা ও প্রয়োজনীয় দোয়াগুলো শেখানো উচিত। সাত বছর বয়স থেকে নামাজের তালিম ও ইসলামের মৌলিক বিষয়বস্তু শেখানো শুরু করতে হবে।

    সন্তান যদি ইসলামিক নির্দেশনা মানতে না চায়, তখন কী করণীয়?
    প্রথমত, ধৈর্য ধারণ করুন এবং জোরাজুরি বা রাগ থেকে বিরত থাকুন। প্রজ্ঞার সাথে (হিকমত) কথা বলুন। তার মতামত শুনুন, তার যুক্তিগুলো বুঝতে চেষ্টা করুন। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন যুক্তি ও প্রমাণ সহকারে। ভালোবেসে বুঝানোর চেষ্টা করুন। দোয়া অব্যাহত রাখুন। বয়স ও পরিস্থিতি অনুযায়ী, প্রয়োজনে কিছু সুযোগ-সুবিধা সাময়িকভাবে সীমিত করা যেতে পারে (যেমন গ্যাজেট ব্যবহার), তবে তা কখনওই অপমানজনক বা শারীরিকভাবে ক্ষতিকর হওয়া উচিত নয়। দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়লে হাদিসে হালকা প্রহারের কথা আছে, কিন্তু তা শিক্ষামূলক ও মারাত্মক নয়। মূল লক্ষ্য তাকে ভয় নয়, বরং আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টির দিকে আকৃষ্ট করা।

    বাংলাদেশে ইসলামিক প্যারেন্টিং চর্চার জন্য কোন নির্ভরযোগ্য রিসোর্স আছে?
    হ্যাঁ, বেশ কিছু রিসোর্স রয়েছে:

    • ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ: তাদের ওয়েবসাইট (https://islamicfoundation.gov.bd/) ও প্রকাশনায় সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক বই ও গাইডলাইন পাওয়া যায়। তারা সেমিনারও আয়োজন করে।
    • বিশ্বস্ত ইসলামিক স্কলারদের লেকচার ও বই: দেশের খ্যাতনামা আলেমদের লেকচার (ইউটিউব, অডিও), বইপত্র (যেমন ড. বিলাল ফিলিপ্স, শাইখ ইউসুফ ইসলাহি, মুফতি মেনক প্রমুখের বাংলা অনুবাদ)।
    • স্থানীয় মসজিদ ও মাদ্রাসা: ইমাম সাহেব বা আলেমদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া যায়। অনেক মাদ্রাসায় প্যারেন্টিং বিষয়ক ওরিয়েন্টেশন হয়।
    • বিশ্বস্ত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম: নির্ভরযোগ্য ইসলামিক ওয়েবসাইট বা অ্যাপ (যেগুলো সুপরিচিত আলেমদের তত্ত্বাবধানে চলে)।
    • ইসলামিক প্যারেন্টিং গ্রুপ ও কর্মশালা: ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলিতে এ ধরনের আয়োজন বাড়ছে।

    সন্তানকে শাসন করার ইসলামিক পদ্ধতি কি?
    ইসলাম শাসনের নামে কোনোরূপ নিষ্ঠুরতা, অপমান বা মারাত্মক শারীরিক শাস্তির অনুমতি দেয় না। শাসন হতে হবে শিক্ষামূলক, সংশোধনমুখী ও প্রেমপূর্ণ। পদ্ধতিগুলো হল:

    • ভালোবেসে সতর্ক করা ও উপদেশ দেওয়া।
    • অনুপযুক্ত আচরণের কুফল বুঝিয়ে বলা।
    • ভালো আচরণের জন্য পুরস্কৃত করা (উপহার, প্রশংসা, ভালোবাসা)।
    • অনুপযুক্ত আচরণের জন্য কিছু পছন্দের জিনিস বা সুযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ করা (যেমন টিভি দেখা, বাইরে যাওয়া)।
    • ধীরে ধীরে দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া (শিক্ষামূলক দায়িত্ব)।
    • সাত বছর বয়সের পর নামাজের জন্য আদেশ এবং দশ বছর বয়সে অনীহা দেখা দিলে শিক্ষামূলক ও হালকা প্রহারের কথা হাদিসে আছে, কিন্তু তা শেষ উপায় এবং মারাত্মক বা অপমানজনক হওয়া যাবে না। সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে শাসন যেন সন্তানের সাথে সম্পর্ক নষ্ট না করে।

    ইসলামে সন্তান লালন-পালনে বাবা-মায়ের জন্য বিশেষ কোন দোয়া আছে কি?
    হ্যাঁ, অনেক দোয়া আছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হল:

    • رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ (রব্বি হাবলী মিনাস সলিহিন) – “হে আমার রব! আমাকে সৎকর্মপরায়ণ সন্তান দান করুন।” (সুরা আস-সাফফাত: ১০০)
    • رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا (রব্বানা হাবলানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউনিও ওয়াজ’আলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা) – “হে আমাদের রব! আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকে আমাদের চোখের শীতলতা দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের (খোদাভীরুদের) নেতা বানিয়ে দিন।” (সুরা ফুরকান: ৭৪)
    • اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي فِي وَلَدِي (আল্লাহুম্মা আসলিহ লী ফী ওয়ালাদী) – “হে আল্লাহ! আমার সন্তানদের ব্যাপারকে আমার জন্য সংশোধন করে দিন।”
    • اللَّهُمَّ اهْدِ أَوْلَادِي (আল্লাহুম্মাহদি আওলাদী) – “হে আল্লাহ! আমার সন্তানদেরকে হেদায়াত দান করুন।”
    • اللَّهُمَّ احْفَظْهُمْ بِحِفْظِكَ (আল্লাহুম্মাহফাজহুম বিহিফজিকা) – “হে আল্লাহ! তোমার হিফাজতে তাদের হিফাজত করো।”

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম কে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা শুধু সন্তানের জন্যই কল্যাণকর নয়; এটি বাবা-মায়ের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার চাবিকাঠি। এই পথ কখনও কুসুমাস্তীর্ণ নয়; এতে আছে ধৈর্যের পরীক্ষা, দোয়ার সাধনা আর আল্লাহর উপর অবিচল ভরসা। কিন্তু এই পথের শেষ পরিণাম যে অপরিসীম সুখ ও আল্লাহর সন্তুষ্টি – তা নিশ্চিত। আপনার প্রতিটি প্রচেষ্টা, প্রতিটি ধৈর্যশীল মুহূর্ত, প্রতিটি দোয়া একদিন অঙ্কুরিত হবে আপনার সন্তানের সুন্দর চরিত্রে, তার ঈমানের দৃঢ়তায়, তার নেক আমলে। আর এভাবেই গড়ে উঠবে একটি সুস্থ, সুন্দর ও আল্লাহভীরু সমাজের ভিত্তি। আপনার হাতেই গড়ে উঠছে আগামীর আলোকিত বাংলাদেশ। শুরু করুন আজই – একটু বেশি ধৈর্য, একটু বেশি ভালোবাসা, একটু বেশি দোয়া দিয়ে।

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    আকিকা ইসলামিক প্যারেন্টিং ইসলামিক শিশু শিক্ষা ইসলামে ইসলামে মা বাবার দায়িত্ব ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম জানুন তাহনিক নামাজ শেখানো নিয়ম:সহজ পথে প্রতিপালনের বয়ঃসন্ধি ইসলামে বাংলাদেশ মুসলিম পরিবার লাইফস্টাইল শিশু প্রতিপালন সন্তান সন্তান লালন-পালন ইসলামে সন্তানের ইসলামিক শিক্ষা
    Related Posts
    বাচ্চাদের ইসলামিক কার্টুনের উপকারিতা

    বাচ্চাদের ইসলামিক কার্টুনের উপকারিতা: কেন জরুরি?

    August 23, 2025
    নারীদের ঘরোয়া ইনকাম আইডিয়া

    নারীদের ঘরোয়া ইনকাম আইডিয়া:সহজ উপায়ে আয়!

    August 23, 2025
    রিল আসক্তি

    রিল আসক্তি মস্তিষ্কের ভেঙে দিচ্ছে ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’, বাড়াচ্ছে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি

    August 23, 2025
    সর্বশেষ খবর
    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম

    ইসলামে সন্তান প্রতিপালনের নিয়ম:সহজ পথে জানুন

    বাচ্চাদের ইসলামিক কার্টুনের উপকারিতা

    বাচ্চাদের ইসলামিক কার্টুনের উপকারিতা: কেন জরুরি?

    নারীদের ঘরোয়া ইনকাম আইডিয়া

    নারীদের ঘরোয়া ইনকাম আইডিয়া:সহজ উপায়ে আয়!

    সংঘর্ষ

    কিশোরগঞ্জে যুবদলের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১, বহিষ্কার ২ নেতা

    হোয়াটসঅ্যাপ

    হোয়াটসঅ্যাপের নতুন AI ফিচার—বানান ঠিক করবে, মেসেজ করবে আরও আকর্ষণীয়

    খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার

    খেলোয়াড়দের সাক্ষাৎকার:সাফল্যের গোপন কৌশল

    ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা

    ক্রিকেটে নতুন প্রতিভা:ভবিষ্যতের তারকারা

    আসন্ন সিনেমার রিলিজ ডেট

    আসন্ন সিনেমার রিলিজ ডেট:জানুন এখনই!

    রিল আসক্তি

    রিল আসক্তি মস্তিষ্কের ভেঙে দিচ্ছে ‘রিওয়ার্ড সিস্টেম’, বাড়াচ্ছে ডিপ্রেশনের ঝুঁকি

    Samsung Galaxy S25 Ultra

    Samsung Galaxy S25 Ultra বাংলাদেশে ও ভারতে দাম বিস্তারিত স্পেসিফিকেশনসহ

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.