বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং সুইসকন্ট্যাক্ট-এর স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প (PRABRIDDHI) প্রবৃদ্ধি’র যৌথ উদ্যোগে “বিনিয়োগ পরিবেশ শক্তিশালীকরণে মিউনিসিপ্যাল সক্ষমতা সূচক (এমসিআই)-এর ভূমিকা” শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিডা’র মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত এই কর্মশালার মূল লক্ষ্য ছিল ২০২৪ সালে পরিচালিত এমসিআই জরিপের ফলাফল উপস্থাপন, বিশ্লেষণ এবং বাংলাদেশের স্থানীয় পর্যায়ের ব্যবসায়িক পরিবেশ ও নীতিনির্ধারণ কাঠামোর সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরা।
কর্মশালায় বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট (BICI) প্রোগ্রামের সাথে এমসিআই-এর প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরা হয় এবং পৌরসভাগুলোর প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর সম্ভাব্য অবদান নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবসার সুযোগ তৈরি, অবকাঠামো উন্নয়ন, কর ব্যবস্থার সহজীকরণ, বিরোধ নিষ্পত্তি, ও অর্থায়নের প্রবেশাধিকার ইত্যাদি খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়।
এমসিআই (MCI) ২০২৪-এর মূল গবেষণা বিশ্লেষণে জানা যায়, সুশাসন, ডিজিটালাইজেশন, স্থানীয় সক্ষমতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশের পৌরসভাগুলোকে বিকল্প অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে স্থানীয় বিনিয়োগ যেমন বাড়বে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতি তথা জিডিপি বৃদ্ধিতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং সভাপতিত্ব করেন বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) শাহ মোহাম্মদ মাহবুব। এছাড়া বিশেষ অতিথি ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য (ইনভেস্টমেন্ট ইকোসিস্টেম) মো. মোখলেছুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব) এবং সুইসকন্টাক্টের প্রবৃদ্ধি প্রকল্পের টিম লিডার মার্কাস এহমান।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, “মিউনিসিপ্যাল সক্ষমতা সূচক একটি দারুণ উদ্যোগ। আমরা আগে থেকেই ঢাকার বাইরে কাজ না করায় কিছুটা পিছিয়ে ছিলাম। ফলে অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী মনে করেন, ঢাকার বাইরে বিনিয়োগে ততটা ভালো রেসপন্স পাওয়া যায় না। কিন্তু এই সূচকের মাধ্যমে যদি স্থানীয় সক্ষমতা বাড়ানো যায়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ানো সম্ভব। পৌরসভার প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নিয়মিতভাবে মূল্যায়নের জন্য এ ধরনের সূচক অব্যাহত রাখা উচিত।”
বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) শাহ মোহাম্মদ মাহবুব এমসিআই-কে বিডা’র সামগ্রিক বিনিয়োগ সংস্কার কাঠামোর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিবেশ সমৃদ্ধ করার জন্য এ ধরনের সূচক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমি আশা করি, এটি একটি এককালীন কার্যক্রম হিসেবে থেমে থাকবে না। কমপক্ষে তিন থেকে চারটি খাতে এ সূচক প্রয়োগ করে এর গ্রহণযোগ্যতা ও উন্নয়ন সম্ভাবনা যাচাই করা প্রয়োজন। আমরা আশা করছি, সুইসকন্টাক্ট এই খাতে উন্নয়নের সুযোগগুলো চিহ্নিত করতে পারবে। আমরা যখন এই কার্যক্রম শুরু করব, তখন আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা প্রত্যাশা করি।”
কর্মশালায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ প্রতিনিধি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিনিয়োগ সক্ষমতা উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের ব্যাপক আগ্রহ প্রতিফলিত হয়।
পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম. মসরুর রেজা এমসিআই ২০২৪-এর বিস্তারিত ফলাফল উপস্থাপন করেন এবং স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সূচকটির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বলেন, “পলিসি এক্সচেঞ্জ, বিডা ও সুইসকন্ট্যাক্ট এর এই যৌথ উদ্যোগ দেশব্যাপী ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গঠনে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আগের সূচকগুলো—যেমন বিশ্বব্যাংকের ‘Ease of Doing Business’—সূচকে কেবল দুটি শহরকে বিবেচনায় নেওয়া হতো, সেখানে সুইসকন্ট্যাক্টের সহায়তায় প্রণীত মিউনিসিপ্যাল সক্ষমতা সূচকে (MCI) দেশের পৌরপর্যায়ে বিনিয়োগ পরিবেশের একটি সামগ্রিক ও বাস্তবভিত্তিক চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।”
PRABRIDDHI প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সুইসকন্ট্যাক্ট-এর প্রতিনিধিরাও কর্মশালায় অংশ নেন। তারা জানান তথ্যনির্ভর নীতি প্রণয়ন ও স্থানীয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে MCI একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
আলোচনার শেষে অংশগ্রহণকারীরা জানান, MCI থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও বিশ্লেষণকে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে কৌশলগতভাবে কাজে লাগানো হবে, এবং জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের মধ্যে আরও সমন্বয় জোরদার করা হবে।
PRABRIDDHI প্রকল্পের সহায়তায় এবং পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের পরিচালনায় ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট ইমপ্রুভমেন্ট (BICI) প্রোগ্রামের অধীনে মিউনিসিপ্যাল সক্ষমতা (এমসিআই) সূচকটি তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সূচকটি দেশের সাতটি পৌরসভায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে তাদের বিনিয়োগ-প্রস্তুতি এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা মূল্যায়ন করা হয়। এমসিআই এমন একটি সূচক যা দেশের পৌরসভা গুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে একটি অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এই সূচক কেবল বিনিয়োগ পরিবেশ বিশ্লেষণই নয়, বরং ব্যবসায়িক সংস্কার কাঠামো চিহ্নিত করে একটি কৌশলগত রোডম্যাপও উপস্থাপন করে—যা স্থানীয় সরকার ও বেসরকারি খাতকে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত করে বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, প্রবৃদ্ধি (PRABRIDDHI) একটি স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প যা অর্থায়ন করেছে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকার, বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও সুইসকন্ট্যাক্ট।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।