আজকাল অনেকেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্লুটুথ হেডফোন বা ওয়্যারলেস ইয়ারফোন (যেমন অ্যাপল এয়ারপডস, বোস, বিটস বা হাড়-পরিবাহী হেডফোন) কানে গুঁজে রাখেন। অনেকে আশঙ্কা করেন—এতে কি ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়তে পারে?
কেন এই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে?
ব্লুটুথ ডিভাইসগুলো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বিকিরণ (RFR) নির্গত করে, যা কিছু মানুষের মতে দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
২০১৫ সালের কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছিল যে, মোবাইল ফোন, ওয়াই-ফাই, মোবাইল টাওয়ার বা ওয়্যারলেস বেবি মনিটরের মতো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের (EMR) দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শে থাকলে মস্তিষ্কের টিউমার, বন্ধ্যাত্বসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। এ কারণে বিশ্বজুড়ে ২০০–এর বেশি বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও জাতিসংঘকে (UN) কঠোর নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
২০১৯ সালে এয়ারপডসসহ অন্যান্য ওয়্যারলেস হেডফোনের জনপ্রিয়তা বাড়ায় এই বিতর্ক ফের সামনে আসে। মূলত মনোযোগ ছিল RFR–এর দিকে, যা খুব কম ব্যান্ডউইথে ওয়্যারলেস যোগাযোগ চালায়।
রেডিয়েশনের ধরন ও ঝুঁকি
রেডিয়েশন দুই ধরনের—
আয়নাইজিং রেডিয়েশন (যেমন এক্স-রে, গামা রশ্মি) → ডিএনএ নষ্ট করে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
নন-আয়নাইজিং রেডিয়েশন (যেমন রেডিও তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ, ব্লুটুথ) → এতে সরাসরি ডিএনএ নষ্ট করার মতো শক্তি নেই।
তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে নন-আয়নাইজিং অতিবেগুনি (UV) রশ্মি ত্বকের ক্যানসারের কারণ হতে পারে। শিশুদের খুলি পাতলা হওয়ায় তারা তুলনামূলক বেশি বিকিরণ শোষণ করে—এ কারণে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে সতর্ক।
বিজ্ঞান এখন কী বলছে?
ব্লুটুথ ডিভাইস থেকে নির্গত বিকিরণ মোবাইল ফোনের তুলনায় ১০ থেকে ৪০০ গুণ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউট (NCI) জানায়, এই তরঙ্গের শক্তি এতটাই কম যে, এটি ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না।
২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্লুটুথের বিকিরণ এক্স-রে–এর তুলনায় লক্ষ লক্ষ গুণ দুর্বল।
আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া বা ইউরোপে ব্লুটুথ ডিভাইস ব্যবহারের কারণে মস্তিষ্কের ক্যানসারের হার বাড়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি।
তবুও সতর্কতা কেন জরুরি?
মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (CDC), খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (FDA) এবং ফেডারেল যোগাযোগ কমিশন (FCC) বলছে—ব্লুটুথ ডিভাইসে ক্যানসারের ঝুঁকি নেই। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার গবেষণা সংস্থা (IARC) এখনও RFR–কে ‘সম্ভাব্য ক্যানসার সৃষ্টিকারী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।