হঠাৎ করে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নানা কারণে সংকটে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কোম্পানি ঋণখেলাপি হয়ে পড়ে। এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সচল রাখতে সহজ শর্তে খেলাপি ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। পুনর্গঠনের পর শর্তসাপেক্ষে দেওয়া হচ্ছে নতুন ঋণ। ওই ঋণে সংকটে থাকা কোম্পানিগুলো ব্যবসা সচল রাখতে পারছে। পাশাপাশি ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্যও বাড়তি ঋণের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া মামলা করে, বন্ধকী সম্পদ নিলাম করে বা চাপ দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় বা নবায়ন করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খেলাপি ঋণের ঊর্ধ্বগতিতে যথাসম্ভব লাগাম টানার চেষ্টা করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল রাখা, ব্যবসা সচল করা, কর্মসংস্থান ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যেই মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এরপর থেকে ব্যাংক খাতে ওই সরকারের (আ.লীগ) ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের লুটপাটের চিত্র বেরিয়ে আসতে থাকে। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান, অনেকে গ্রেফতার হন। এছাড়া কিছু ব্যবসায়ীর অবৈধ সুবিধা নেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। তারাও চাহিদা অনুযায়ী ঋণ দিতে ব্যর্থ হয়। সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা।
সব মিলিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা দেখা দেয়। এতে অনেক কোম্পানি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে, ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়। যে কারণে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে খেলাপি ঋণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত বছরের মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সরকারের সময়কার পদত্যাগী গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সময়ের খেলাপি ঋণের তথ্য হালনাগাদ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই সময়ে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময়ে খেলাপি ঋণের প্রকৃত তথ্য গোপন করা হতো। খেলাপি ঋণ অনেক কমিয়ে দেখানো হতো।
বিশেষ করে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের লুটপাটের টাকা খেলাপি করা হতো না। নিয়মিত দেখানো হতো। যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুনের খেলাপি ঋণের তথ্য প্রকাশ করে বর্তমান সরকার। এতে খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বেড়ে যায়। জুনে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকায়। যা মার্চের চেয়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা বেশি। মার্চ থেকে জুন এই ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ১৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বাড়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা, বৃদ্ধির হার ৩৫ দশমিক ০৭ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকায়। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর এই ৩ মাসে বেড়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ।
চলতি বছরের মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩ মাস পরপর খেলাপি ঋণের সার্বিক তথ্য হালনাগাদ করে। এ হিসাবে সরকার পতনের পর প্রতি প্রান্তিকেই খেলাপি ঋণ অস্বাভাবিক গতিতে বেড়েই যাচ্ছে। আগে বাড়লেও সামান্য, কোনো কোনো প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমার নজিরও রয়েছে। জুনের তথ্য এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক চূড়ান্ত করেনি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক হিসাবে তা ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা ব্যবসাকে বাধাগ্রস্ত করিনি। ব্যবসাকে ব্যবসার মতো চলতে দিয়েছি। এ কারণে ব্যবসায় আগের মতো সুবিধা এখনো বহাল রাখা হয়েছে। যারা সংকটে পড়েছেন তাদের প্রচলিত নিয়মের আওতায় ব্যাংকিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বলেন, সব মিলে খেলাপি ঋণ এখন ৭ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এত বেশি খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংক খাত এমনিতেই দুর্বল। আগামীতে খেলাপি ঋণ যদি আরও বাড়ে, তবে ব্যাংক খাতে আরও জটিলতা বাড়বে। ফলে খেলাপি ঋণের আদায় বাড়াতে এখন বড় ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রচলিত আইনের আওতায় তাদের সম্পদ নিলাম, মামলা, জেলে দেওয়ার নিয়ম আছে। এর প্রয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বাড়লে সংকটও বেড়ে যায়। একদিকে খেলাপির কারণে প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন ঘাটতি বাড়ে। এতে ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়ে। বিনিয়োগযোগ্য তহবিল কমে যায়। বৈদেশিক বাণিজ্যে এলসি খোলার ক্ষেত্রে বাড়তি কমিশন দিতে হয়। ফলে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের খরচ বেড়ে যায়। এর প্রভাবে বৃদ্ধি পায় পণ্যের দাম। যার চাপ সরাসরি ভোক্তার কাঁধে পড়ে। বৈশ্বিকভাবে একটি নেতিবাচক বার্তা যায়।
এমন প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর নীতি গ্রহণ করেছে। তবে তা কোনো অবৈধ সুযোগ দিয়ে নয়। প্রচলিত নিয়মনীতির আওতায় যারা সঠিকভাবে ব্যবসা করবে, শুধু তারাই সহজ শর্তে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে খেলাপি ঋণ নবায়নের বা পুনর্গঠনের সুযোগ পাবেন। গত সরকারের আমলে যারা ব্যাংক লুট করেছেন। তাদের অনেকে পালিয়েছেন। আবার অনেকে জেলে রয়েছেন। ফলে তাদের কোম্পানিগুলোতে উৎপাদন সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। ফলে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তারা খেলাপি হয়ে যান। ইতোমধ্যে কোম্পানি চালু রাখার শর্তে ওইসব কোম্পানির খেলাপি ঋণ নবায়ন করে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নতুন ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের শর্ত আরোপ করেছে, যাতে ঋণের টাকা ভিন্ন খাতে নিতে না পারে। পাশাপাশি পাচার করতে না পারে। শর্তের মধ্যে রয়েছে-ঋণের টাকা সংশ্লিষ্ট কোম্পানির যে কাজে ব্যবহারের জন্য নেওয়া হয়েছে সেই খাতেই ব্যয় করতে হবে। কোনোক্রমেই অন্য খাতে নেওয়া যাবে না। সংশ্লিষ্ট খাতে যদি ঋণের টাকা খরচ না হয় তবে তা ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে। তা অন্য ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। রপ্তানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি আয় দেশে এনে ঋণের টাকা সমন্বয় করতে হবে। দেশীয় উৎপাদনের জন্য নিলে পণ্য উৎপাদন ও বিক্রির পর ৩ মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে নতুন ঋণ নিতে পারবে। এসব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তদারকি করছে।
ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে। ফলে বেশ কয়েকটি বন্ধ কোম্পানি সচল হয়েছে। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপের ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়েছিল। তিনটি ব্যাংক ১২ হাজার ১০০ কোটি টাকার ঋণ আদায়ে বন্ধকী সম্পদ নিলাম করে কিছু টাকা আদায় করেছে। বাকি টাকা ব্যবসা সচল রাখার স্বার্থে পুনর্গঠন করে দিয়েছে ব্যবসা চালু রাখার জন্য। এতে গ্রুপের খেলাপি ঋণ ২০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে নেমে এসেছে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিজের ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে মোট ঋণ ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে ৬৩৯ কোটি টাকা। আগে খেলাপি ঋণ আরও বেশি ছিল। ব্যবসা চালু রাখার স্বার্থে কিছু ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে। তবে তিনি বেনামে কোম্পানির কর্মচারীকে মালিক সাজিয়ে ঋণ নিয়েছেন প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। সেগুলো এখনো খেলাপি।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেক্সিমকোর কর্ণধার ও পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান পালিয়ে যান। তখন তার ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। পরে তিনি গ্রেফতার হয়ে এখন জেলে আছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে বেক্সিমকো গ্রুপের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছিল ৫৩ হাজার কোটি টাকায়। এরপর ব্যবসা সচল রাখার শর্তে খেলাপি ঋণ নবায়ন করে নতুন ঋণ দেওয়া হয়। এতে গ্রুপের ব্যবসা চলছে। ফলে মার্চ পর্যন্ত গ্রুপের খেলাপি ঋণ নেমে এসেছে ২০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকায়। ১৬টি কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ওইসব ঋণ নবায়নের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগের সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে লুটপাট করেছে সিকদার গ্রুপ। তাদেরও ব্যবসা বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়। গত বছরের ডিসেম্বরে সিকদার গ্রুপের খেলাপি ঋণ ছিল ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে তা কিছুটা কমে ২ হাজার ১০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। গ্রুপের আরও কিছু ব্যবসা সচল করার শর্তে নতুন ঋণ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সময়ে আরও এক সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী ছিল ওরিয়ন গ্রুপ। ডিসেম্বরে তাদের কোনো খেলাপি ঋণ ছিল না। মার্চে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এসব ঋণ পুনর্গঠন করার জন্য আলোচনা চলছে। জুনের মধ্যে কিছু ঋণ পুনর্গঠন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আরও এক সুবিধাভোগী গ্রুপ ছিল নাবিল গ্রুপ। ডিসেম্বরে গ্রুপের নামে ৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির তথ্য উদ্ঘাটিত হয়। ওই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের পুরোটাই অর্থাৎ ৭ হাজার কোটি টাকাই খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করে। পরে ব্যবসা সচল রাখার স্বার্থে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার ঋণ খেলাপিমুক্ত করা হয়। বর্তমানে তাদের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এসব ঋণও নবায়ন করার জন্য আলোচনা চলছে।
ডিসেম্বরে জেমকন গ্রুপের কোনো খেলাপি ঋণ ছিল না। মার্চে খেলাপি হয় ১৯৪ কোটি টাকা। এসব ঋণ এখন নবায়নের বিষয়ে আলোচনা চলছে।
ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ায় গত বছরের ডিসেম্বরে একটি ব্যবসায়িক গ্রুপের মোট ঋণের মধ্যে ৩৪ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা খেলাপি হয়ে পড়েছিল। পরে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে ২৭ হাজার কোটি টাকার ঋণ নবায়ন করেছে। ব্যবসা সচল রাখার স্বার্থে তাদের এসব ঋণ নবায়ন করার সুযোগ দেওয়া হয়। বাকি ৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকার ঋণ মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ছিল। এর মধ্যে কিছু ঋণ জুনের মধ্যে তারা নবায়ন করেছে।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদারের খেলাপি ঋণ নবায়নের জন্য ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চলছে। ইতোমধ্যে খেলাপি ঋণ আদায়ে তেজগাঁওয়ের তার কোম্পানির নামে ইউনাইটে কমার্শিয়াল ব্যাংকের কাছে বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।