নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাচলের নীলা মার্কেটকে কেন্দ্র করে বালু নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল এক খাবারের হাট। ব্যতিক্রমধর্মী এই ফুড জোনকে স্থানীয়রা বলছেন রসনার হাট। পুরো এলাকা যেন এক ভোজন জগৎ। আলোর ঝলকানি, ধোঁয়ার ঘ্রাণ, আর স্বাদের আমন্ত্রণে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মুখর থাকে চারপাশ। বালু নদীর তীর ও লেকের পাড়ে খোলা আকাশের নিচে গড়ে ওঠা এ খাবারের রাজ্যে প্রতিদিন জমে ওঠে ভোজন রসিকদের মিলনমেলা।
প্রায় দুই শতাধিক বাহারি খাবারের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোতে শুক্র-শনিবারসহ যেকোনো বন্ধের দিনে ভোজন রসিকদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। এখানে সন্ধ্যা নামলেই শুরু হয় রসনা, স্বাদের মহোৎসব। নদীর তীর আর লেকপাড় ঘেঁষে গড়ে ওঠা জমজমাট এ ফুড জোনে দূরদূরান্ত থেকে হাঁসের মাংস খেতে আসেন অনেকে। হাঁসের মাংস খাওয়ার জন্য এই মার্কেট ভোজনরসিকদের কাছে যেন এক রকম তীর্থস্থান। অনেকেই বসে উপভোগ করেন দেশি হাঁসের ঝাল ঝাল মাংস কষা, সঙ্গে বাহারি পিঠা।
বিখ্যাত হাঁস আর পিঠার জন্য
নীলা মার্কেটে মুখরোচক হরেক পদের খাবার থাকলেও দূরদূরান্ত থেকে শুধু মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে রান্না করা হাঁসের মাংস খেতেই অনেকে আসেন এখানে। খাবারের পাশাপাশি নদের পাড় কিংবা খোলা আকাশের নিচে জমে গল্প-আড্ডা। সেখানে আসা লোকজন নদের তীরের পিঠাঘরগুলোতে বসে আশ মিটিয়ে উপভোগ করেন দেশি হাঁসের মাংস আর নানান পদের পিঠা।
এছাড়া দোকানগুলোতে গরু, খাসি ও মুরগির মাংসও পাওয়া যায়। মাংস দিয়ে খাওয়ার জন্য চিতই পিঠার পাশাপাশি পাওয়া যায় চালের গুঁড়ার চাপটি ও রুমালি রুটি। এছাড়া বালিশ, চমচম, রসগোল্লা, ছানা, সন্দেশ, লেংচা, রসমালাইয়ের মতো হরেক পদের গরম মিষ্টি, সামুদ্রিক মাছ, তান্দুরি ও স্পেশাল মালাই চা, ফুচকা, চটপটি, পানিপুরি, তাজা ফলের জুস পাওয়া যায়। নীলা মার্কেটের কিছু দোকানে হরেক পদের ভর্তা ও ভাতের ব্যবস্থাও রয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শুক্র, শনিবারসহ বন্ধের দিনগুলোতে উপচে পড়া ভিড় জমে এসব খাবার দোকানে। বিকেল থেকে শুরু করে রাত পেরিয়ে ভোর পর্যন্ত চলে খাবারের এই আয়োজন। খাবার ছাড়াও স্থানটিতে আছে শিশুপার্ক ও শিশুদের খেলনার দোকান। বালু নদে রয়েছে নৌভ্রমণের ব্যবস্থা।
খাবারের দরদাম
হাঁসসহ বিভিন্ন পদের মাংস প্রতি প্লেট ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হয়। রুমালি রুটি, চিতই পিঠা বিক্রি হয় প্রতিটি ২০ টাকা দরে আর চাপটির মূল্য ১০ টাকা। তান্দুরি চা ৫০ ও স্পেশাল মালাই চা ৭০ টাকা করে বিক্রি হয়। আকারভেদে সামুদ্রিক ও দেশি কাঁকড়া প্রতিটি ৩০০-৪০০, এক কেজি ওজনের টুনা মাছ প্রতিটি ৮০০-৯০০, কোরাল প্রতিটি ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, স্কুইড প্রতিটি ১৫০-৩৫০ ও অক্টোপাস ৩৫০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। চটপটি বিক্রি হয় প্রতি প্লেট ৪০-৬০ টাকায়।
শুরু থেকেই স্থানটিতে খাবার খেতে আসেন রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী রাসেল মাহমুদ। তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ সালের দিকে নীলা মার্কেট খাবারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার পর ক্রমেই স্থানটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। প্রতিদিনই রাতভর দূরদূরান্ত থেকে লোকজন দল বেঁধে এখানে আসে। হাওর অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা দেশি হাঁস, আতপ চালের রুটি এখানকার বিখ্যাত খাবার। এসব খাবার মাটির চুলায় রান্না হয় বলে খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়।
মটির চুলায় কাঠের ‘লাকড়ি’
নীলা মার্কেটের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, এখানে হাঁসের মাংস রান্না হয় মাটির চুলায়, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় শুকনো কাঠ। এ কারণে খাবারের স্বাদ অনেকটাই বেড়ে যায় বলে দাবি করছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেকের দোকানে সাইনবোর্ডেও লেখা থাকে- ‘লাকড়ি দিয়ে মাটির চুলায় রান্না হয়!’
নিমন্ত্রণ পিঠা ঘরে রান্না করছিলেন শম্পা আক্তার। মাটির চুলার বিশেষত্ব জানাল গেলো তার কাছে। তিনি বলেন, মাটির চুলায় কাঠ দিয়া রানলে রান্নাডা হইতে টাইম লাগে। আস্তে আস্তে রান্না হয়। এজন্য খাবারডা মজা হয়। আর হাঁসের মাংস তো অনেক সময় নিয়া রান্না করা লাগে। মাংস শক্ত থাকলে খাইয়া মজা নাই।
এই মার্কেটের হাঁসের আরেকটি বৈশিষ্ট্য বেশিরভাগ হাঁস আসে হাওড় অঞ্চল থেকে। জামাই-বউ পিঠা ঘরের মালিক মোহম্মাদ সেলিম মিয়া জানালেন, তাদের নির্দিষ্ট লোক রয়েছে, যারা এই হাঁস সরবারহ করেন।
হাঁস ছাড়াও আরও যা পাবেন
হাঁসের মাংস আর চিতই পিঠা ছাড়াও এই মার্কেটে আরও বাহারি সব খাবার পাওয়া যায়। এরমধ্যে অন্যতম হলো, গরম গরম মিষ্টিজাতীয় খাবার। চোখের সামনে বানানো মিষ্টি তাৎক্ষণিক অর্ডার দিয়ে খাওয়া যায় এখানে। রসগোল্লা, বালিশ মিষ্টি, মালাই চপ, সন্দেশ, লেংচা, গোলাপ জামুন, ছানা, দধি থেকে শুরু করে প্রায় সবধরনের জনপ্রিয় মিষ্টি এখানে পাওয়া যায়। এছাড়াও, খাবারের মধ্যে রয়েছে তান্দুরি চা. ৫০ ও ৬০ টাকা মূল্যে দুই ধরনের তান্দুরি চা পাওয়া যায় এখানে।
এছাড়াও নীলা মার্কেটের আরেকটি জনপ্রিয় খাবারের নাম বারবিকিউ! মাছ, মাংস আর সামুদ্রিক বিভিন্ন প্রাণির বারবিকিউ জায়গাটির জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, আর নানান ধরনের মাংসের বারবিকিউ পাওয়া যায় এখানে। এছাড়া, স্পেশাল আইটেম হিসেবে কোনো কোনো দোকানে রয়েছে হান্ডি বিফের আয়োজন।
যাবেন যেভাবে
ঢাকার গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে নীলা মার্কেটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে কুড়িল বিশ্বরোড হয়ে নীলা মার্কেট যাওয়া যায়। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতাগামী বিআরটিসি বাস আছে। সেই বাসে করে যাওয়া যাবে নীলা মার্কেট। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ভুলতাগামী বিআরটিসি বাসে করে গেলে নীলা মার্কেট পর্যন্ত টিকিটের মূল্য ১০ টাকা। এছাড়া অটোরিকশায়ও যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দরদাম করে যেতে হবে। এছাড়া অটোরিকশায়ও যাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দরদাম করে যেতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।