বর্তমান দূষণ ও ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অজান্তেই দেহে জমছে নানা ক্ষতিকর উপাদান, যা পরবর্তীতে জটিল রোগের কারণ হতে পারে। এই পরিস্থিতি বোঝাতে এবং সুস্থ থাকার উপায় খুঁজতে সম্প্রতি দক্ষিণী তারকা সামান্থা রুথ প্রভু করালেন ‘টক্সিন টেস্ট’। নিজের শরীরে খনিজের অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখে অবাক হয়েছেন তিনি। সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রী লিখেছেন, নিয়মিত শরীরচর্চা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পরও টক্সিন জমতে পারে। তাই তাঁর পরামর্শ—দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি জানা অত্যন্ত জরুরি।
কী বলেছেন সামান্থা
সম্প্রতি সামান্থা তাঁর টক্সিন পরীক্ষা করানোর কথা সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন। অভিনেত্রী লেখেন, ‘‘আপনারা সকলেই জানেন, আমি সুস্থ থাকতে পছন্দ করি। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খাই, শরীরচর্চা করি। সম্প্রতি আমার দেহের টক্সিনের মাত্রা পরীক্ষা করিয়েছি।’’
সামান্থা জানিয়েছেন, তিনি কল্পনাও করেননি তাঁর দেহে বিষ থাকতে পারে। কিন্তু তাঁর পরীক্ষার রিপোর্টে বেশ কিছু খনিজের অতিরিক্ত উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। তাই ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ খ্যাত অভিনেত্রীর পরামর্শ, সুস্থ থাকতে হলে ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা দেহে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি জানা থাকলে সুবিধা হবে।
এই মুহূর্তে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেহকে ‘ডিটক্স’ করতে উদ্যোগী হয়েছেন সামান্থা। অভিনেত্রী জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ার জন্য তাঁর তিন থেকে চার মাস সময় প্রয়োজন।
‘টক্সিন টেস্ট’ কী?
দেহের মধ্যে, বা বলা ভাল রক্তের মধ্যে ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি জানিয়ে দেয় টক্সিন টেস্ট। তার মধ্যে বিভিন্ন খনিজ উপাদান (যেমন আয়রন, লেড, আর্সেনিক) সহ ভিটামিনও থাকতে পারে। চিকিৎসক আশিস মিত্র বললেন, ‘‘সাধারণত রক্তের মাধ্যমে এই পরীক্ষাটি করা হয়। রক্তে যেমন অ্যালকোহলের মাত্রা পরীক্ষা হয়, তেমনই রক্তের টক্সিন পরীক্ষার মাধ্যমে দেহের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি জানা সম্ভব।’’
কী কী লক্ষণ
কারণে কারও দেহে ক্ষতিকারক পদার্থের উপস্থিতি বাড়তে পারে। বিষয়টিকে ‘টক্সিসিটি’ বলা হয়। তখন চিকিৎসকেরা তাঁকে টক্সিন টেস্ট করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। যেমন আশিস বললেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে জলে অনেক সময়ে আর্সেনিক বেশি থাকে। দেহে আর্সেনিক, সিসা বা ক্যাডমিয়ামের মাত্রা এই পরীক্ষা থেকে জানা সম্ভব।’’
আয়রন দেহের পক্ষে প্রয়োজনীয় ক্ষনিজ উপাদান। কিন্তু দেহে অতিরিক্ত মাত্রায় আয়রন থাকলে বিষক্রিয়া হতে পারে। দেহে আয়রনের মাত্রা বাড়লে অনেক সময়ে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। আশিসের কথায়, ‘‘রোগীর হয়তো ডায়াবিটিস বা থাইরয়েড নেই। তিনি ফাইবার সম্পন্ন ডায়েটে থাকেন। তার পরেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে, তখন আমরা দেহে আয়রনের মাত্রা জানার চেষ্টা করি।’’ দেহে আয়রনের মাত্রা বেশি হলে সময়ের সঙ্গে ব্যক্তির ত্বকের বর্ণ কালো হয়ে যেতে পারে। আবার অনেক সময়ে নার্ভের কোনও সমস্যা আর্সেনিক বা লেড থেকে হতে পারে। ত্বক খসখসে হয়ে যেতে পারে। ত্বকের আলসারও হতে পারে।
ভিটামিন টক্সিসিটি
সব সময়ে যে ক্ষতিকারক পদার্থ থেকে দেহে বিষের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, তা নয়। আশিস জানালেন, অনেক সময়ে ভিটামিনের আধিক্যও দেহে বিষক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তার মধ্যে ভিটামিন ডি এবং আয়রন অন্যতম। আশিসের কথায়, ‘‘যাঁরা জিমে শরীরচর্চা করেন, তাঁরা অনেক সময়েই না জেনে বিভিন্ন ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট খেয়ে থাকেন। তার ফলেও দেহের মধ্যে টক্সিসিটি তৈরি হতে পারে।’’ তবে ভিটামিন থেকে টক্সিসিটি তৈরির ঘটনা খুব বিরল বলেই জানালেন তিনি।
কারা করাবেন
যে কেউ চাইলে টক্সিন পরীক্ষা করাতে পারেন। আবার অনের সময় কোনও বিশেষ লক্ষণ দেখে চিকিৎসকেরাও এই ধরনের পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আশিস বললেন, ‘‘সাধারণত কোন খনিজ থেকে সমস্যা হচ্ছে, চিকিৎসক তা নির্দিষ্ট করে দিলে (যেমন আয়রন) পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কেউ চাইলে সব মিলিয়ে একটি পরীক্ষা করাতেই পারেন।’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।