নব্বই দশকের জনপ্রিয় লোকসংগীতশিল্পী কুদ্দুস বয়াতি। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘এই দিন দিন না’ গেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলককরণের বার্তা দিয়েছিলেন। গানটির মাধ্যমে নিজেও পৌঁছে গিয়েছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে ‘শরম শরম করে’ শিরোনামে তার একটি নতুন গান।
অসংখ্য জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা এই শিল্পী সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ সরব। ফেসবুকে নিয়মিত তার ‘অনেক চিন্তা করে দেখলাম, এতো চিন্তা করে কোনো লাভ নাই’, ‘বিবাহিত পুরুষদের রাশিফল দেখতে হয় না, সকালে উঠে বউয়ের মুড দেখলেই বুঝা যায় দিন কেমন যাবে’- এরকম দুই-চার লাইনের পোস্ট চোখে পড়ে। যা বিনোদনের যোগান দেয় নেটিজেনদের।
সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এই শিল্পী জানিয়েছেন, সবার সঙ্গে থাকতেই এরমকম পোস্ট দেন তিনি। তার কথায়, ‘সবার সাথে থাকা আরকি। যে বোঝার সে বুঝল, না বুঝলে নাই। আমি যে আছি সেটা জানাতেই লেখা। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে, সবার মন প্রফুল্ল রাখতে লিখি।’
বেশিরভাগ সময় গ্রামে থাকেন বয়াতি। কাজ ছাড়া ঢাকায় আসা হয় না। তিনি বলেন, ‘প্রোগ্রামে কম যাচ্ছি। হচ্ছেও না তেমন। দেশের পরিস্থিতি কেমন কেমন যেন লাগে। সবাই মনে করে আমি অ্যাডভার্টাইজম্যান। কারণ আমি বিজ্ঞাপন দিয়ে উঠেছি। অনেকে অভিনেতাও বলে। আল্লাহ রহমত করলে সুবিধামতো প্রোগ্রাম করব।’
বিখ্যাত গানগুলো আজকাল হয়ে উঠেছে উঠতি গায়ক-গায়িকাদের জনপ্রিয়তা অর্জনের মাধ্যম। অনেকেই সেগুলো কাভার করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছেন। কুদ্দুস বয়াতির অনেক গান আছে এ তালিকায়। বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার কথা-সুরে যে গানগুলো আছে সেগুলো এখন যারাই গাচ্ছেন তারা আমার সুর ভেঙে ভেঙে করছেন। তাতে আমি অখুশি নই। যে যেভাবে পারে উঠুক। বাংলাদেশে অনেক তরুণ, ইউটিউবার আছে আমার গান গাচ্ছে। এতো অসুবিধা নেই। কিন্তু আমি তো কুদ্দুস বয়াতি এটা সবাই জানে। যেই গাক মানুষ বোঝে এটা আমার সুর।’
তবে কপিরাইট ইস্যুতে বেশ সচেতন বয়াতি। নিজের গান থেকে হিস্যা বুঝে নেন কড়াগণ্ডায়। বোঝা গেল তার বক্তব্যে। বললেন, ‘আমার গানের কপিরাইট আছে। সেগুলো অনেকে গেয়েছে। আমি কিছু কিছু ধরেছি। তারা আমার সঙ্গে সমঝোতায় এসেছে। তাদের বলছি, তোমরা কিছু নাও আমাকেও কিছু দাও। আমিও যেন তোমাদের সঙ্গে থাকতে পারি।’
বয়াতি বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে, আমার গানগুলো অন্যরা গাইলে সেগুলো প্রচলিত থাকছে। এটা খুব ভালো বলে মনে করি। যে যেভাবে করছে করুক দুঃখ নেই। তবে এরা যদি গানগুলোর লাইসেন্স করে তাহলে তাদের আটকাব।’
তার ভাষ্যে, ‘টিভিতে লায়লা (সংগীতশিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা) আমার ‘আক্কেলে ছাগল বন্দি জলে বন্দি মাছ’ গানটি গেয়েছিলেন। এটার কপিরাইট প্রক্রিয়াধীন। কারণ তিনি উল্টো করে গেয়েছেন। এটা করতে পারেন না।
‘যমুনার জল দেখতে কালো’ গান-ও আমার। কিন্তু ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ছবিতে হুমায়ূন আহমেদ স্যার সংগৃহীত হিসেবে দিয়েছিলেন। যেদিন বসুন্ধরাতে বিশেষ প্রদর্শনী হয় সেদিন তাকে বলেছিলাম, গানটি সংগ্রহ দিয়েছেন কেন? গান তো আমার। স্যার তখন বললেন, ‘এটা তো তোমার গানই’। স্যার হয়তো ভুলবশত সংগৃহীত লিখেছিলেন। কিন্তু এটা সংগৃহীত না। এই গানের কপিরাইট করা আছে আমার।’
সোশ্যাল হ্যান্ডেলে গ্রাম-বাংলার ভিডিও নিয়মিত প্রকাশ করেন এ সংগীতজ্ঞ। তুলে ধরেন নিজের জীবনের গল্প, শৈশবের বন্ধুবান্ধবদেরও। সেসব থেকে যা আয় হয় তাতে মোটামুটি পুষিয়ে যায় বলে জানালেন। সঙ্গে এ-ও জানালেন ভিডিওগুলো আয়ের উদ্দেশে প্রকাশ করেন না।
তার ভাষ্য, ‘কুদ্দুস বয়াতি গ্রাম বাংলা, হাওর অঞ্চাল থেকে উঠে এসেছে। সেটা জানাতেই ভিডিওগুলো প্রকাশ করি। আগে যে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে চলাফেরা করত তাদের সঙ্গে রেখে পোস্ট দিই।’
লোকসংগীতশিল্পী কুদ্দুস বয়াতী শৈশব থেকেই গান-বাজনার অনুরাগী। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মহুয়া, মলুয়া, দেওয়ান বাদশা, কাঞ্চন বাদশা, হাতেমতাইসহ অনেক ধরনের পালাগানের আসর মাতান।
তবে ১৯৯২ সালে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘এই দিন দিন না আরো দিন আছে’ শিরোনামে গানের মাধ্যমে ব্যাপক পরিচিতি পান কুদ্দুস বয়াতি। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রচারণার অংশ হিসেবে গানটি গেয়েছিলেন তিনি। এরপর আর পিছে তাকাতে হয়নি কুদ্দুস বয়াতিকে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়েও দেশবাসীকে সচেতন করতে কাজ করেছেন কুদ্দুস বয়াতি। ‘জাইনা চলেন, মাইনা চলেন’ শিরোনামে গানের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করতে কাজ করছেন এ লোকসংগীতশিল্পী।
তিনি বিশ্বের অনেক দেশে গান গেয়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মন জয় করেছেন। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদ পরিচালিত বেশকিছু সিনেমা ও নাটকেও গান গেয়েছেন কুদ্দুস বয়াতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।