আবির হোসেন সজল : দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী লালমনিরহাট জেলার পাচঁ টি উপজেলার প্রায় ১৬ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল লালমনিরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল টি। ১ শত শয্যা থেকে লালমনিরহাট ২ শত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে উন্নীতকরণ করা হলেও এখনো সেবার মান বাড়েনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী রোগীদের।
রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে গত ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে লালমনিরহাট ২ শত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যা ২০২৩ সালে প্রাথমিকভাবে ভবনের কাজ শেষ হয়। কিন্তু,এখন পর্যন্ত জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের বিছানা স্বল্পতায় মেঝে ও বারান্দায় বিছানা করে শুয়ে রয়েছেন অনেক মুমূর্ষু রোগী। এই হাসপাতালে পুরুষ রোগীর তুলনায় নারী রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেকটাই বেশি।
রোগীদের অভিযোগ রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিকে যেতে হয় তাদের। আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এছাড়াও সুইপার সংকটের কারণেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবজর্না। এ অবস্থায় চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে অভিযোগের কমতি নেই ভুক্তভোগীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ শয্যার অবকাঠামো তৈরি হলেও ১ শত শয্যার অবকাঠামো ও জনবল দিয়ে চালানো হচ্ছে হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম। শয্যা সংকটের কারণে এখনও পুরাতন ভবনের বারান্দা ও মেঝেতে থাকতে হচ্ছে রোগীসহ তাদের স্বজনদের। এই হাসপাতালের প্রয়োজনীয় ঔষুধ কালোবাজারে বিক্রির অভিযোগ অনেক দিনের। এখানে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার সামান্য কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ঔষুধ থাকলেও সে সবের সুবিধা তেমন পাননা রোগীরা।
চিকিৎসকদের অবহেলা ও চিকিৎসক সংকটসহ নানা কারণে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত এ জেলার সাধারণ মানুষ। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে এলাকার লোকজন বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ করলেও তেমন কোন লাভ হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা।
লালমনিরহাটের কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, বিগত সময় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় হাসপাতাল সংক্রান্ত নানা অনিয়ম ও চিকিৎসা সেবা নিয়ে সংবাদ প্রচার করা হলেও উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে ও ডাক্তারের সংখ্যা কম থাকায় ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে না অন্য চিকিৎসকরাও। কেউ বেসরকারি ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত, কেউ আবার নিজস্ব ক্লিনিকের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে ব্যস্ত। হাসপাতালে জটিল অপারেশন তো দুরের কথা ছোট কোন অপারেশন করতে হলে শুনতে হয় নানান অজুহাত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এখানে আসা রোগীদের মোবাইল, নগদ টাকাসহ মূল্যবান সামগ্রী চুরির ঘটনাও যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে কমিশনভিত্তিক দালাল । এখানে দালাল হিসেবে কাজ করছে বিভিন্ন ফার্মেসী ও ক্লিনিক- ডায়গনষ্টিক সেন্টারের মহিলা, অটো রিক্সাচালক ও হাসপাতালের কয়েকজন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। তারা আরও বলেন, এখানে কিছু চিকিৎসক আছে যারা প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে জড়িত। সেই সব চিকিৎসকদের এখানে পাওয়া না গেলেও তাদের নিজস্ব চেম্বারে ঠিকই পাওয়া যায়। চিকিৎসক সংকট ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার যন্ত্রপাতির কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। আর এই সুযোগে হাসপাতাল থেকে কমিশন ভিত্তিক দালালরা রোগীকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় স্থানীয় প্রাইভেট ক্লিনিকসহ রংপুরের মালিকানাধীন ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোতে।
লালমনিরহাট ২ শত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ১ শত শয্যার জনবলের মঞ্জুরীকৃত রাজস্ব পদের চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীগণের পদ সংখ্যা: চিকিৎসক: সৃজনকৃত পদ সংখ্যা ৪১, পূরণকৃত পদসংখ্যা ১৯, শুন্য পদসংখ্যা ২২। নার্সিং কর্মকর্তা: মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৭৪, কর্মরত পদের সংখ্যা ৬২, শূন্য পদের সংখ্যা ১২। তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী: মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ৩৩, কর্মরত পদের সংখ্যা ২৩, শূন্য পদের সংখ্যা ১০। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী: মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২৪, কর্মরত পদের সংখ্যা ১৮, শূন্য পদের সংখ্যা ৬। দ্বিতীয় শ্রেণীর জনবল: মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ১, কর্মরত পদের সংখ্যা ০, শূন্য পদের সংখ্যা ১। দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের নাম: অকুপেশনাল থেরাপিস্ট। সর্বমোট ১৭৩ টি মঞ্জুরীকৃত রাজস্ব পদের বিপরীতে ১২১ জন কর্মরত রয়েছেন। চিকিৎসক, নার্সিং কর্মকর্তা, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী, চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, দ্বিতীয় শ্রেণীর জনবলসহ মোট এখনও ৫২ জন জনবলের সংকট রয়েছে হাসপাতালটিতে।
গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক শূন্য পদগুলি হলো: সিনিয়র কনঃ (মেডিসিন), সিনিয়র কনঃ (ই,এন,টি), সিনিয়র কনঃ (গাইনী), সিনিয়র কনঃ (সার্জারি), সিনিয়র কনঃ (শিশু), জুনিঃ কনঃ (চক্ষু), জুনিঃ কনঃ (রেডিওলজি), জুনিঃ কনঃ (অর্থো-সার্জারি), জুনিঃ কনঃ (প্যাথলজি), জুনিঃ কনঃ (ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটিটেশন), জুনিঃ কনঃ (চর্ম ও যৌন), মেডিকেল অফিসার, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার, রেডিওলজিস্ট, সহকারী সার্জন, মেডিকেল অফিসার (আয়ুবের্দীয়), ডেন্টাল সার্জন।
লালমনিরহাট ২ শত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (উপ পরিচালক সমমান) ডাঃ মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম সাংবাদিকদের বলেন, ১ শত শয্যা হাসপাতালেরই জনবল সংকট ছিলো। সেই জনবল দিয়েই ২ শত ৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ভালো সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। জনবলের চাহিদাসহ আরও বেশ কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আর হাসপাতালের নতুন ভবনে রোগীদের বেড স্থাপন কার্যক্রম শুরু হলে বেড সংকট থাকবে না।
”সিভিল সার্জন অফিস লালমনিরহাট” নামক ফেসবুকে উল্লেখ করা হয় যে, “পদ তৈরি না হওয়ায় লালমনিরহাট ২ শত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি বর্তমানে পূর্বের ১ শত শয্যার জনবল দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ১ শত শয্যার হিসেবে ৪১টি চিকিৎসক পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৯জন চিকিৎসক। অর্থাৎ, চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে প্রায় ৫৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, হাসপাতালটি সিভিল সার্জন মহোদয়ের আয়তাধীন নয়। বর্তমানে উপ-পরিচালক সমমানের একজন তত্ত্বাবধায়ক (গ্রেড-৪)
Vivo V60 Pro 5G: 300MP ক্যামেরা সঙ্গে দুর্দান্ত ফিচারের সেরা স্মার্টফোন
মহোদয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে। উল্লেখ্য যে, এ হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রংপুর বিভাগীয় শহরে বসবাস করেন। সেখানে তারা বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসাপাতালে সেবা দেন। অনেক সময়ে নানা অজুহাতে ছুটি নিয়ে অনুপস্থিত থাকেন তারা। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা হচ্ছেন বঞ্চিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।