প্রযুক্তি খাতে বিদেশি প্রতিভাবানদের টানতে নতুন ‘কে’ ভিসা প্রোগ্রাম শুরু করতে যাচ্ছে চীন। কোনো ধরনের চাকরির প্রস্তাব ছাড়াই তরুণ বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিতে (স্টেম) স্নাতক করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য চলতি সপ্তাহেই এই প্রোগ্রাম চালু করতে যাচ্ছে দেশটি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এইচ-১বি ভিসার বাৎসরিক ফি ১ লাখ ডলার নির্ধারণ করার কারণে অনেকেই এখন দেশটির বিকল্প উন্নত দেশ খুঁজছেন। চীনে যদিও দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের সংকট নেই, এরপরও বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি প্রতিভা আকর্ষণে নতুন এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলায় অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বেইজিং। এ জন্য দেশটি ইউরোপ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ একাধিক দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করেছে এবং একাধিক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য উন্মুক্ত সুযোগ রেখেছে।
আইওয়াভিত্তিক ইমিগ্রেশন আইনজীবী ম্যাট মাউনটেল-মেদিচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটি বাধা তৈরি করছে, এ কারণে সেসব সরিয়ে নিচ্ছে চীন। প্রতীকী দিক থেকে কিন্তু এর তাৎপর্য অনেক গভীর।
এর আগে গত আগস্টের ঘোষণা অনুযায়ী, কে ভিসা মূলত তরুণ স্টেম স্নাতকদের লক্ষ্য করে তৈরি করা হয়েছে। নতুন এই ভিসা প্রোগ্রামের বড় সুবিধা হচ্ছে কোনো ধরনের চাকরির প্রস্তাব ছাড়াই চীনে প্রবেশ, বসবাস ও কাজের অনুমতি। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কাজ খোঁজা বিদেশি প্রযুক্তিবিদদের কাছে চীনের এই সুযোগ হতে পারে বিকল্প উপায়।
এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন থেকে প্রতি এইচ-১বি কর্মীর জন্য প্রতিবছর ১ লাখ ডলার ফি প্রদান করতে হবে।
জিওপলিটিক্যাল স্ট্র্যাটেজির প্রধান কৌশলবিদ মাইকেল ফেলার জানিয়েছেন, এইচ-১বি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। বিপরীতে চীনের ‘কে’ ভিসা প্রোগ্রাম চালু করা নিঃসন্দেহে ‘এক্সকুইজিট’ টাইমিং। অন্যদিকে দক্ষ প্রযুক্তিকর্মীদের আকর্ষণ করতে ভিসা প্রক্রিয়া বেশ সহজ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি ও নিউজিল্যান্ড।
এছাড়া চীনের কে ভিসার ক্ষেত্রে চাকরিদাতার স্পনসরশিপে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা না থাকার কারণে ভিসাটি অনেকের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কেননা, এইচ-১বি ভিসা পেতে হলে স্পনসরিং কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি লটারির প্রক্রিয়াও থাকে। ফলে বছরে মাত্র ৮৫ হাজার মানুষ সেই সুযোগ পান।
চীনের সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় শিক্ষার্থী বিকাশ কালিদাস বলেন, ভারতীয় স্টেম পেশাজীবীদের জন্য সহজ ও নমনীয় ভিসা প্রক্রিয়ার জন্য যারা অপেক্ষা করছেন, তাদের জন্য দুর্দান্ত বিকল্প মাধ্যম হতে পারে চীনের এই কে ভিসা।
এর আগে ২০২৪ সালে এইচ-১বি ভিসা পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৭১ শতাংশ ভারতীয় নাগরিক ছিলেন। তবে এই সবকিছুর পরও চীনের কে ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বাধা থেকে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত চীন সরকারের নির্দেশনায় বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্পষ্ট কোনো মানদণ্ড বা বিবৃতি দেয়া হয়নি।
আবার আর্থিক সুবিধা, চাকরির সুযোগ, স্থায়ী আবাসন বা পরিবার নিয়ে থাকার সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কেও কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন বিদেশিদের নাগরিকত্ব প্রদান করে না।
যা ভিসার ক্ষেত্রে বড় সীমাবদ্ধতা। সবশেষ ভাষা বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। চীনের প্রায় সব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যান্ডারিনে কাজ করে। এ জন্য বিদেশিদের জন্য কাজ পাওয়া দুর্বিষহ হতে পারে।
কে ভিসা কাদের জন্য:
চীনের প্রতিভাবান নিয়োগের ইতিহাস প্রধানত বিদেশে অবস্থানরত চীনে জন্ম বিজ্ঞানী ও চীনা বংশোদ্ভূতদের কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সরকার গৃহ নির্মাণে ভর্তুকি, সাইনিং বোনাসসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনেক চীনা বিজ্ঞানীকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধার অঙ্ক ৫০ লাখ ইউয়ান (৭ লাখ ২ হাজার ডলার) পর্যন্ত পৌঁছেছে।
সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিকাশ কালিদাস জানিয়েছেন, ভারতীয় প্রযুক্তিবিদদের দিকে দৃষ্টি রাখলেও চীনা স্টেম প্রতিভাবান ফেরানোর পরিকল্পনার তুলনায় সেটি খানিকটা সীমিত, খুব একটা তীব্র নয় এবং অর্থায়নও বেশ কম।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫ কোটির বেশি অভিবাসী রয়েছে। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ। বিপরীতে চীনে বিদেশি নাগরিকদের সংখ্যা মাত্র ১০ লাখ, যা দেশটির মোট সংখ্যার মাত্র ১ শতাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।