সাইফুল ইসলাম : শিশু, কিশোর-কিশোরী ও নারী উন্নয়নে সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের আর্থিক সহায়তায় সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে মানিকগঞ্জে টাইফয়েড ভ্যাকসিনেশন বিষয়ক দিনব্যাপী কনসালটেশন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ কর্মশালায় জানানো হয়, চলতি বছর মানিকগঞ্জে ৪ লাখের বেশি শিশুকে টাইফয়েড টিকা দেয়া হবে।
কর্মশালাটি আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা তথ্য অফিস। জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা।
কর্মশালায় প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার প্রমিতি সরকার। কর্মশালায় জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ২০১৯ সালের তথ্যমতে, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন এবং এ রোগে মারা যান প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষ। দ্য গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজের ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাংলাদেশে ওই বছর প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং ৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে ৬৮ শতাংশই শিশু।
এ কারণে সরকার প্রাক–প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত (৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী) সব শিশুকে টাইফয়েড ভ্যাকসিন দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ১২ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব বিদ্যালয়ে এবং ১ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ও অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে (ইপিআই কেন্দ্র) এই ভ্যাকসিন প্রদান করা হবে। বিদ্যালয় পর্যায়ের টিকাদান শেষে কেন্দ্রভিত্তিক টিকাদানের সময় স্থানীয়ভাবে মাইকিং করে জানানো হবে।
কর্মশালায় আরো জানানো হয়, ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর থাকলে, পূর্বে কোনো টিকা নেওয়ার পর এলার্জি প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, টিকা নেওয়ার দিন অসুস্থ থাকলে এবং গর্ভবতী বা দুগ্ধদানকারী মা টিকা নিতে পারবেন না।
টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে শিক্ষার্থী ও শিশুদের www.vaxepi.gov.bd ওয়েবসাইটে জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে। ওয়েবসাইট থেকে টিকাদান কার্ড ডাউনলোড করে নির্ধারিত দিনে সঙ্গে আনতে হবে। যাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ নেই বা যারা অষ্টম–নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কিন্তু বয়স ১৫ বছরের বেশি, তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার স্বাস্থ্য সহকারী বা টিকাদানকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে হাতে পূরণকৃত ফরমের মাধ্যমে টিকা নিতে পারবেন।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, টাইফয়েড জ্বরের সাধারণ লক্ষণ হলো মৃদু থেকে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ জ্বর (১০৩–১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধামন্দা, কাশি, শরীর ব্যথা, বমি ও পেটব্যথা। সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর দেখা দেয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে তিন দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
জেলা তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর হোসেন সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা সমাজের নির্ভরযোগ্য তথ্য বাহক। আপনাদের অনুরোধ করছি নিজ প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সাথে টাইফয়েড টিকার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করুন। একই সঙ্গে বিভিন্ন চলমান কার্যক্রম ও প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে এই টিকা কার্যক্রমের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরুন। আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও প্রচারণার মাধ্যমেই গুজব প্রতিরোধ সম্ভব হবে এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. মনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, ‘টাইফয়েড টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা সুপারিশকৃত। এটি নিরাপদ ও কার্যকর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে ইপিআই ব্যবস্থাপনায় বিনামূল্যে এ টিকা প্রদান করা হবে।’
কর্মশালায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমির হোসেন ও জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউনিসেফ বাংলাদেশের সহায়তায় এই টিকাদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পরিচালিত হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।