প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দৃঢ়ভাবে জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, “এটা ফেব্রুয়ারিতে হবে এবং যেমন বারবার বলেছি, এটি হবে উৎসবমুখর একটি নির্বাচন।”
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “নির্বাচন আয়োজন আর জুলাই সনদ—এ দুটি বিষয় বিচ্ছিন্ন নয়। আমাদের আগের ঘোষণার প্রতি অটল থাকতে হবে। নির্বাচনকে একটি উৎসবে পরিণত করতে যা যা প্রয়োজন, আমরা তা করব—এ বিষয়ে কোনো আপস করা হবে না।”
রাজনৈতিক দলের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যেমন সবাই মিলে সনদ তৈরি করেছেন, আমাদের সরকারের দায়িত্ব হলো সবাই মিলে উৎসবমুখর নির্বাচনটা করে দেওয়া।”
বুধবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় জুলাই সনদ স্বাক্ষরকে সামনে রেখে।
সনদ ও নির্বাচনের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “উত্তরণটা কিভাবে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জুলাই সনদেই দেওয়া আছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেভাবেই রূপান্তরটি হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের পরিপূর্ণ প্রচেষ্টা থাকবে—আপনারা যে কষ্ট করে এগুলো রচনা করছেন, সেটাকে যেন আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারি। নির্বাচনের মাধ্যমে যেন সেই রূপান্তর ঘটানো যায়—এটাই আমাদের আশা।”
প্রধান উপদেষ্টা জানান, আগামী শুক্রবার এই নির্বাচনী রোডম্যাপ ও আশার বার্তা জাতির সামনে উপস্থাপন করা হবে।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এবং জেএসডি নেতা তানিয়া রবসহ অন্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন।
রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনকে ধন্যবাদ দেয়ার জন্য তিনি আজ এই বৈঠকে যোগ দিয়েছেন বলে জানান প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, কঠিন কঠিন বিষয়ে আলোচনা করা এবং সন্তোষজনকভাবে রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশন মিলে এর সমাপ্তি আনায় তিনি ব্যক্তিগতভাবে তাদের ধন্যবাদ জানান। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যে অসম্ভবকে আপনারা সম্ভব করেছেন, এটা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে নয়, পৃথিবীর পলিটিক্যাল সিস্টেমের (রাজনৈতিক ব্যবস্থার) ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য হয়ে থাকবে।’
জুলাই সনদ রচনাকে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানপরবর্তী অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘ছাত্রুজনতার যে অভ্যুত্থান, এই অভ্যুত্থানের এটাই আমার মনে হয় পরবর্তী অধ্যায় সঠিকভাবে রচিত হলো।… যে সংস্কারের কথা আমরা মুখে বলে যাচ্ছিলাম, আপনারা সেই সংস্কার, প্রকৃতপক্ষে যে সংস্কার হবে, তা করে দেখিয়ে দিয়েছেন। কাজেই এই জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সারা জাতি বড় রকমের উৎসবের মধ্যে শরিক হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে কলম দিয়ে স্বাক্ষর করা হবে, সেগুলো জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে। মানুষ তাদের ভুলতে পারবে না। এটা এমন একটা ঘটনা যে ঘটনার ভেতরে থেকে এর বিশালত্ব বোঝা যাচ্ছে না। মাসের পর মাস বৈঠক করে হতাশা এসেছে, মনে হয়েছে, এটা হয়তো অসমাপ্ত থেকে যাবে। তবে এটা অসমাপ্ত থেকে যায়নি। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ জাতির জন্য একটা মস্ত বড় সম্পদ হয়ে রইলো।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘যেসব দলিল তৈরি করা হয়েছে, সেগুলো হারিয়ে যাবে না। এগুলো জনসাধারণের মধ্যে সহজ ভাষায় প্রচার করা হবে। যাতে করে সবার মনের মধ্যে থাকে, কেন একমত হয়েছি।’ সরকার হিসেবে জুলাই সনদ ছড়িয়ে দেয়ার দায়িত্ব তাদের।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘যেসব বিতর্ক হয়েছে, সেগুলোকে বিষয়ভিত্তিকভাবে ভিডিও করে ও বই করে রাখা হবে, যেন এগুলো সম্পদ হিসেবে থাকে, হারিয়ে না যায়। যাতে করে সবাই জানতে পারে, কেমন জাতি গড়ার জন্য এগুলো করা হয়েছে।’
১৭ অক্টোবর জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা উৎসবমুখরভাবে সেখানে যাব এবং এই দলিলে সই ও উৎসব করব। সারা জাতি এতে শরিক হবে। আপনারা তাদের সামনের সারির মানুষ, যাঁরা প্রকৃত সই করছেন। সারা দেশের মানুষ চিন্তার মধ্যে, তাদের ভাবনার মধ্যে আপনাদের সঙ্গে সই করছে।…জাতির জন্য এটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।